Runa Khatun

বিমানসেবিকা হতে চেয়েছিলেন, পথ বদলে কী ভাবে রাজনীতিতে মনোরঞ্জনের দলীয় ‘শত্রু’ রুনা

রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করতে সবচেয়ে ভালবাসেন। ছোটবেলা থেকে নাচেও আগ্রহ। কিন্তু মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করতে গিয়ে কিছুই সময় হয় না, এমনটাই দাবি রুনা খাতুনের।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৪০
Share:
০১ ১৫

হুগলির বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন বলাগড়ের যুব তৃণমূল নেত্রী তথা জেলা পরিষদ সদস্য রুনা খাতুন। রুনার উদ্দেশে একের পর এক বাণ ছুড়েছেন বর্ষীয়ান লেখক। হাজার আক্রমণের মুখেও মেজাজ হারাননি রুনা। উল্টে, কখনও কটাক্ষ, আবার কখনও সরাসরি প্রমাণ চেয়ে মোকাবিলা করেছেন যাবতীয় আক্রমণের। আর তাতেই তিনি চলে এসেছেন খবরের শিরোনামে।

০২ ১৫

যদিও রুনার বিরুদ্ধে অভিযোগ কম নেই। বুধবার রাতে তাঁর ‘লোকজন’ গিয়ে ব্যাপারীর ‘বিধায়ক কার্যালয়’ ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ। ব্যাপারী-ঘনিষ্ঠ এক পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামীকেও মারধরের অভিযোগ রয়েছে। যদিও গোটা ঘটনাকেই সাজানো বলে উড়িয়ে দিয়েছেন রুনা। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, বিধায়কই নিজের লোকেদের দিয়ে এ সব করাচ্ছেন!

Advertisement
০৩ ১৫

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কে এই রুনা, যাঁর বিরুদ্ধে খোদ এলাকার বিধায়কের যাবতীয় অভিযোগ! হুগলির ছাত্র-যুব রাজনীতির আঙিনায় রুনা পরিচিত নাম। কলেজ স্তর থেকেই রুনা দক্ষিণপন্থী রাজনীতি, বলা ভাল কংগ্রেসি ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

০৪ ১৫

হুগলির বলাগড় বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত শ্রীপুরে বাড়ি রুনার। ছেলেবেলা থেকেই দেখেছেন বাড়ির সাংস্কৃতিক পরিবেশ। বাবা শেখ আজিজুল হক একটা সময় আকাশবাণীতে নিয়মিত আবৃত্তি করতেন। মা মনোয়ারা বেগম বধূ। তিনিই তিন সন্তানকে মানুষ করেছেন।

০৫ ১৫

বলাগড়ের নৌকা জগৎবিখ্যাত। রুনার বাবা কাঠের নৌকার কারবারী। আর্থিক ভাবে সচ্ছল পরিবারে মানুষ হওয়া রুনা পড়াশোনায় বেশ ভালই ছিলেন। বাড়িতে রুনার উপরে আরও দুই দাদা।

০৬ ১৫

বাবার নেশা আবৃত্তি। আর মেয়ের সবচেয়ে বড় সঙ্গী বাবা। তাই আবৃত্তির প্রেমে পড়েন রুনাও। বাবার আবৃত্তি শুনে শুনেই তুলে নিতেন। তার পর এক দিন মেয়ের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের কবিতার আবৃত্তি শুনে মুগ্ধ হন বাবা। শুরু হয় আবৃত্তির তালিম নেওয়া।

০৭ ১৫

আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মতোই রুনার পরিবারেও ছিল সাংস্কৃতির পরিমণ্ডল। আবৃত্তির পাশাপাশি নাচেও পারদর্শী রুনা। ছেলেবেলার ভালবাসা আবৃত্তি আর নাচ আজও ছাড়েননি তিনি। এখনও সময়-সুযোগ পেলেই খুলে বসেন নজরুলের কবিতার বই। মনখারাপে আজও ওষুধের কাজ করে রবীন্দ্রনাথের কবিতা।

০৮ ১৫

বাবা কংগ্রেস করতেন। ছোটবেলা থেকেই রুনা বাবার হাত ধরে ঘুরতেন হুগলির গ্রামে গ্রামে। চোখের সামনে দেখতেন, কী ভাবে মানুষের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে হয়। বিপদে কী ভাবে দাঁড়াতে হয় মানুষের পাশে। বাবার এই গুণ খুব টানত বিমানসেবিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখা রুনাকে।

০৯ ১৫

রুনা ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন কিন্তু অন্য এক জগতের। স্বপ্ন ছিল, বিমানসেবিকা হওয়ার। আকাশে আকাশে ঘুরে বেড়ানোর। কিন্তু বয়স যত বাড়ল, মানুষের মাঝে থাকাটা যেন নেশার মতো চেপে বসতে থাকল মাথায়। বারণ করা তো দূর, বাবা তাতে প্রশ্রয়ই দিতেন।

১০ ১৫

বলাগড় হাই স্কুলে পড়তেন রুনা। পড়াশোনায় বেশ ভালই ছিলেন বলে জানাচ্ছেন রুনাকে বহু দিন চেনা মানুষেরা। বরাবরই বাংলার উপর বাড়তি আগ্রহ ছিল মেয়ের। তাই বাড়ির লোকেরাও চাইতেন, বাংলা নিয়েই উচ্চশিক্ষা নিক মেয়ে। বাড়ির কথা মেনেই বাংলায় স্নাতকোত্তর করেন রুনা।

১১ ১৫

২০১২ সালে স্কুলে চাকরি পান রুনা। বাংলার শিক্ষিকা হিসাবে অবশ্য চাকরি পাওয়ার আগে থেকেই নাম রয়েছে তাঁর। অনেক ‘টিউশন’ করাতেন। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে এলে টাকাও নিতেন না। এখন রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও পড়ার নেশা পিছু ছাড়েনি রুনার। তিনি বর্তমানে আইন পড়ছেন। ইচ্ছে আছে, আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষের হয়ে আদালতে আইনি লড়াই করার।

১২ ১৫

কালনা কলেজে পড়ার সময় প্রথম প্রত্যক্ষ রাজনীতির সংস্পর্শে আসা রুনার। সেই সময় করতেন ছাত্র পরিষদ। ২০০৩-০৪ সালে সেই যে রাজনীতির মূলস্রোতে ঢুকলেন, সেই যাত্রা এখনও চলছে। এখন তিনি হুগলি জেলায় তৃণমূলের অন্যতম যুব নেত্রী।

১৩ ১৫

২০১৩ সাল থেকে হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য, টানা তিন বার। ২০১৯ সালে প্রচারের মুখপাত্র হিসাবে ত্রিপুরা ও অসমে কাজ করেছেন। ২০২১ সালের ১৬ অগস্ট জেলার যুব সভানেত্রী করা হয় রুনাকে। টানা আড়াই বছর সেই পদে ছিলেন। বর্তমানে যুব তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক।

১৪ ১৫

রুনার স্বামীর নাম অরিজিৎ দাস। তিনি হুগলির সিজা কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। পেশায় ব্যবসায়ী অরিজিতেরও রয়েছে নৌকা তৈরির ব্যবসা। সেই সঙ্গে একটি আইসক্রিম কারখানাও রয়েছে রুনার স্বামীর। ব্যবসার পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী মিলে চুটিয়ে রাজনীতি করেন।

১৫ ১৫

হুগলির ঘরোয়া রাজনীতিতে, অধুনা নিয়োগ মামলায় জেলবন্দি শান্তনু ঘোষের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেত্রী বলে পরিচিতি রয়েছে রুনার। তাঁর অনুগামীদের দাবি, শান্তনুর অনুগামীরা ইদানীং বিধায়কের ছত্রতলে গিয়েছেন। আর সেখানে গিয়েই নতুন করে শুরু হয়েছে লড়াই। যে লড়াইয়ের এক দিকে বিমানসেবিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখা রুনা, অন্য দিকে তাঁরই দলের নির্বাচিত বিধায়ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement