চ্যাটজিপিটি আবিষ্কারের পর থেকেই কৃত্রিম মেধা (এআই) নিয়ে আবার নতুন করে কৌতূহল তৈরি হয়েছে বিশ্ববাসীর মনে। কৌতূহল তৈরি হয়েছে চ্যাটজিপিটির স্রষ্টা স্যাম অল্টম্যানকে নিয়েও।
চ্যাটজিপিটি বানিয়েই যে স্যাম সুখ্যাতির আলোকবৃত্তে এসেছেন, তেমনটা নয়। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি সিলিকন ভ্যালির অন্যতম চর্চিত ব্যক্তি।
কিন্তু কে এই স্যাম? কী ভাবেই বা কলেজছুট স্যাম হয়ে উঠলেন বিশ্বের অন্যতম চর্চিত তথ্যপ্রযুক্তিবিদ?
২০০৫ সালে কলেজ ছাড়েন স্যাম। তা-ও আবার যে সে কলেজ থেকে নয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। স্ট্যানফোর্ডে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে করতে হঠাৎই এক দিন তিনি প্রথাগত শিক্ষা না গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
স্টিভ জোবস এবং বিল গেটস্দের সমপর্যায়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা থেকে কলেজ ছাড়ার পর নিজের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাও শুরু করেন স্যাম।
মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজের সংস্থা শুরু করেন স্যাম। নাম দেন ‘লুপ্ট’। ‘লুপ্ট’-এর মাধ্যমে যে কোনও ব্যবহারকারী তাঁদের অবস্থান অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারতেন।
সেই সময়ে বাজারে বিশেষ সাড়া ফেলতে পারেনি ‘লুপ্ট’। ফলে সংস্থা বাঁচাতে ‘ওয়াই কম্বিনেটর’ নামে এক সংস্থার দ্বারস্থ হন স্যাম।
‘ওয়াই কম্বিনেটর’-এর হাত ধরেই সাফল্য পেয়েছে এয়ার বিএনবি, রেডিট, ড্রপবক্স, কয়েনবেস-এর মতো স্টার্ট আপ সংস্থাগুলি।
সংস্থা চালানোর জন্য ‘ওয়াই কম্বিনেটর’-এর সাহায্যে বাজার থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার লগ্নি তোলেন স্যাম। অ্যাপল এবং ব্ল্যাকবেরি সংস্থার কাছ থেকে স্বীকৃতিও পায় তাঁর সংস্থা।
সাত বছর পর ধীরে ধীরে একই ধরনের অন্য অনেক সংস্থা বাজারে চলে আসায় ‘লুপ্ট’-এর প্রভাব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। প্রায় ৩৬০ কোটি টাকার বিনিময়ে ‘লুপ্ট’ বিক্রি করে দেন আমেরিকার আর্থিক প্রযুক্তি সংস্থা ‘গ্রিন ডট কর্পোরেশন’-এর কাছে।
‘লুপ্ট’-এর মালিকানা হারানো সত্ত্বেও সেই সংস্থাই সিলিকন ভ্যালির দিকে দিকে স্যামের নাম ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেছিল। ‘লুপ্ট’-এর মালিকানা গেলেও ‘ওয়াই কম্বিনেটর’-এর সঙ্গে সম্পর্কে ছেদ পড়েনি স্যামের।
স্যাম ২০১২ সালে ‘ওয়াই কম্বিনেটর’-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাঁর আগে এই সংস্থার প্রেসিডেন্টের পদে ছিলেন আমেরিকার বিখ্যাত কম্পিউটার বিজ্ঞানী পল গ্রাহাম।
আরও তিন বছর পর অর্থাৎ, ২০১৫ সালে আমেরিকার ধনকুবের ইলন মাস্ক, লিঙ্কডইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান এবং আরও কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে ‘ওপেনএআই’ নামে একটি কৃত্রিম মেধা গবেষণা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন স্যাম। স্যাম সেই সময় দাবি করেন, এআই ব্যবহার করে মানব জাতির উপকার করা এই সংস্থা তৈরির মূল লক্ষ্য।
২০১৬ সালে স্যাম ঘোষণা করেন, ‘ওপেনএআই’ এমন একটি কৃত্রিম মেধা তৈরি করছে যার বুদ্ধি মানুষের বুদ্ধির সঙ্গে মেলে। সংস্থার তরফে এই কৃত্রিম মেধার নাম দেওয়া হয় জিপিটি-১।
২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি ‘ওপেনএআই’ আরও একটি কৃত্রিম মেধা ‘দাল-ই’ তৈরির কথা ঘোষণা করে যা ব্যবহারকারীর বর্ণনার ভিত্তিতে ছবি আঁকতে সক্ষম।
গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববাজারে আরও একটি নতুন চমক এনেছে ‘ওপেনএআই’। নাম ‘চ্যাটজিপিটি’। এটিই এখনও পর্যন্ত তৈরি হওয়া সবচেয়ে উন্নত মানের কৃত্রিম মেধা বলে মনে করা হচ্ছে। ছবি আঁকা, কথা বলা, গান শোনানোর মতো একাধিক কাজ করতে সক্ষম এই কৃত্রিম মেধা।
ইতিমধ্যেই চ্যাটজিপিটিতে মজেছেন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ। লক্ষ লক্ষ মানুষ চ্যাটজিপিটি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা শুনিয়েছেন। কৃত্রিম মেধা বিশ্ববাজারে বহু মানুষের চাকরি ‘খেতে’ পারে বলেও আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন অনেকে। তবে চ্যাটজিপিটি বাজারে আসার পর পরই মানুষের নজর কেড়েছেন স্রষ্টা স্যাম।
স্যাম জানিয়েছেন, তিনিও কৃত্রিম মেধাকে কেবল মানবিক কাজে ব্যবহার করার পক্ষপাতী এবং বিশ্বাসী। বর্তমানে তিনি কৃত্রিম মেধার সুরক্ষা এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ এবং আইনসভার সদস্যদের সঙ্গে দেখা করছেন বলেও কয়েক দিন আগে জানিয়েছিলেন।