Seema Kushwaha

ইভটিজারকে প্রহার, বিয়ে করবেন না বলে ধর্না, শ্রদ্ধা-মামলা লড়ছেন নির্ভয়া-মামলার আইনজীবী

নির্ভয়ার আইনজীবী হয়ে লড়াই চালিয়েছিলেন। সেই লড়াকু আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা এ বার লড়ছেন শ্রদ্ধা ওয়ালকরের বিচারের জন্য।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:০০
Share:
০১ ২০

তিনি ‘বিদ্রোহিণী নারী’। সমাজে নারীদের উপর নির্মম অত্যাচার হলে ডুকরে ডুকরে কাঁদে তাঁর হৃদয়। চোখের জল ফেলার পাশাপাশি দোষীদের ‘সবক শেখাতে’ গর্জে ওঠেন তিনি। ‘ম্যঁয় ছোড়ুঙ্গি নহি তুঝে’— মনেপ্রাণে এই কথাই আউরে আদালত চত্বরে পা রাখেন এই সাহসিনী। দিল্লিতে নির্ভয়ার হয়ে মামলা লড়ে বিচার আদায় করেছিলেন তিনি। সেই আইনজীবী সীমা সমৃদ্ধি কুশওয়াহাই এ বার মামলা লড়ছেন মহারাষ্ট্রের পালঘরের তরুণী শ্রদ্ধা ওয়ালকরের পরিবারের হয়ে।

ছবি সংগৃহীত।

০২ ২০

শ্রদ্ধাকে খুনের পর তাঁর দেহ ৩৫ টুকরো করে বিভিন্ন এলাকায় ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁরই প্রেমিক আফতাব আমিন পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে। গ্রেফতার করা হয়েছে আফতাবকে। দিল্লির এই ঘটনায় শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। ঠিক ১০ বছর আগে দিল্লিতেই নির্ভয়াকাণ্ড ঘটেছিল। যে ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে।

ছবি সংগৃহীত।

Advertisement
০৩ ২০

আফতাবের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ ওয়ালকর। নির্ভয়াকাণ্ডে চার দোষীর ফাঁসি হয়েছে। আর এই মামলায় নির্ভয়ার হয়ে যিনি লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন আদালতে, তিনি সেই সীমা। নির্ভয়ার সেই ‘নির্ভীক’ আইনজীবীই এ বার শ্রদ্ধার পরিবারের হয়ে মামলা লড়ছেন।

ছবি সংগৃহীত।

০৪ ২০

নির্ভয়াকাণ্ডই শুধু নয়, ২০২০ সালে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ১৯ বছরের তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগের মামলাতেও লড়ছেন সীমা। যখনই সমাজে নারীদের উপর নির্মম অত্যাচার হয়েছে, তখনই আইনি লড়াইয়ে এগিয়ে এসেছেন আইনজীবী সীমা।

ছবি সংগৃহীত।

০৫ ২০

নির্ভয়ার মামলাতেই প্রথম বার সীমা কুশওয়াহার নাম চর্চায় উঠে এসেছিল। ১০ বছর বাদে শ্রদ্ধা হত্যাকাণ্ডের দৌলতে আবার শিরোনামে এই আইনজীবী। নারীদের উপর নানা অত্যাচারের ঘটনায় আদালতে তাঁর ক্ষুরধার আইনি লড়াই তাক লাগিয়েছে অনেককেই। সীমার ব্যক্তিজীবনও যেন এক লড়াইয়ের উপাখ্যান। এক সংগ্রাম বললেও অত্যুক্তি হবে না।

ছবি সংগৃহীত।

০৬ ২০

উত্তরপ্রদেশের উগ্গরপুর নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম হয়েছিল সীমার। সাল ১৯৮২ সালের ১০ জানুয়ারি। পরিবারের চতুর্থ কন্যাসন্তান সীমা। তবে তাঁর জন্মে পরিবারের কারও মুখেই হাসি ফোটেনি।

ছবি সংগৃহীত।

০৭ ২০

পরিবারের সবাই আশা করেছিলেন, এ বার হয়তো সীমার মায়ের ছেলে হবে। কিন্তু মায়ের কোল আলো করে এলেন সীমা। যার জেরে সকলের মুখভার হয়ে গিয়েছিল। সমাজমাধ্যমে এক বার নিজের জীবনকাহিনি শোনাতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছিলেন সীমা। মেয়ে হওয়ায় তাঁর মা নাকি তাঁকে মেরে ফেলারও কথা ভেবেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবী।

ছবি সংগৃহীত।

০৮ ২০

এক মাত্র বাবা ও পিসি সীমাকে পেয়ে খুশি হয়েছিলেন। তাঁদের জন্যই নিজের প্রাণ ফিরে পেয়েছেন সীমা। তার পর থেকে একটু একটু করে বড় হয়ে ওঠার নেপথ্যে সব সময় বাবাকে পাশে পেয়েছেন সীমা।

ছবি সংগৃহীত।

০৯ ২০

সীমার গ্রামের মেয়েরা অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়তেন না। তার কারণ উচ্চ বিদ্যালয় গ্রাম থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। ফলে অত দূর স্কুলে যাওয়ার জন্য পরিবারের মেয়েদের ছাড়া হত না। কিন্তু এই ছক ভাঙেন সীমা।

ছবি সংগৃহীত।

১০ ২০

ভাইরা যদি অষ্টম শ্রেণির পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, তা হলে আমি কেন নয়! সীমার এই যুক্তির কাছে গ্রামের ‘রীতিনীতি’ ভেঙে খানখান হয়ে যায়। মেয়ের জেদকে প্রশ্রয় দেন সীমার বাবাও। সে সময় গ্রামের প্রধান ছিলেন সীমার বাবা। সীমাই ছিল গ্রামের প্রথম মেয়ে, যিনি অষ্টম শ্রেণির পরও পড়াশোনা চালিয়ে যান।

ছবি সংগৃহীত।

১১ ২০

একা একা অত দূর স্কুল যাবে মেয়ে। খারাপ কিছু ঘটবে না তো! সব বাবার মতোই একই সংশয় কাজ করেছিল সীমার বাবার মনে। কিন্তু একটা ঘটনার পর মেয়েকে নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতেন না তাঁর বাবা। সীমার উদ্দেশে কটূক্তি করেছিল একটা ছেলে। তার জেরে সেই ছেলেটিকে বেদম ধোলাই দেন সীমা।

ছবি সংগৃহীত।

১২ ২০

সীমার এই রণমূর্তি দেখার পর গ্রামের ছেলেরা তাঁর ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন। ও খুব বিপজ্জনক মেয়ে— এমন কথাই তাঁর গ্রামের ছেলেরা বলতেন বলে জানিয়েছেন সীমা। পরে নির্ভয়াকাণ্ডে মামলার সময়ও তাঁকে অনেক লড়াই করতে হয়েছে। সীমার কথায়, ‘‘এটা হয়তো ভাগ্যেই ছিল যে, এক দিন আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়তে হবে।’’

ছবি সংগৃহীত।

১৩ ২০

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছক ভেঙেছেন সীমা। সেই সঙ্গে চালিয়ে গিয়েছেন তাঁর সংগ্রাম। তাঁর যাত্রাপথে কোনও কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বলা ভাল, কোনও প্রতিবন্ধকতাই মানেননি। সে কারণেই গ্রামের প্রথম মেয়ে হয়ে লখনউতে এনসিসি দলের ক্যাপ্টেন হয়ে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন। সেই সময় সংবাদপত্রে সীমার ছবিও প্রকাশিত হয়েছিল। গ্রামবাসীরা ভেবেছিলেন, এই মেয়ে হয়তো তাঁদের গ্রামকে নষ্ট করে দিচ্ছেন। কিন্তু সীমা কোনও বাধারই ‘সীমা’ মানেননি।

ছবি সংগৃহীত।

১৪ ২০

দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশের পর সীমার বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে পরিবার। কিন্তু কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না। কারণ আরও পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন তিনি। এ কারণে তিন দিন আমরণ অনশনে বসেছিলেন সীমা। এ কথা জানার পর পাত্রপক্ষ আর সীমার বাড়ির দিকে পা বাড়াননি।

ছবি সংগৃহীত।

১৫ ২০

সে যাত্রায় বিয়ের প্রস্তাব এ ভাবে নাকচ করলেও পরে আবার একই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল সীমাকে। ২০০২ সালে প্রয়াত হন সীমার বাবা। এর পর তাঁর আবদার মেনে নেওয়ার আর কেউ ছিল না। সে সময় আবার বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল সীমাকে। কিন্তু সে যাত্রায় সীমাকে উদ্ধার করেন তাঁর বান্ধবী রিঙ্কি। ওই বন্ধুর সাহায্যেই আইন নিয়ে পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয় সীমা।

ছবি সংগৃহীত।

১৬ ২০

পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর ছিলেন তিনি। নূপুর, কানের দুল বিক্রি করে পড়াশোনার খরচ বহন করেছেন সীমা। মহিলা আইনজীবী হিসাবেও তাঁর লড়াই কঠিন ছিল। সীমার কথায়, কানপুরে মহিলা আইনজীবীদের সম্মান দেওয়া হত না। সে কারণেই দিল্লিতে চলে যান সীমা। সেখানে ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন তিনি।

ছবি সংগৃহীত।

১৭ ২০

১৬ ডিসেম্বর ২০১২। দিল্লিতে চলন্ত বাসে এক তরুণীকে গণধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। যে ঘটনায় সরগরম হয় গোটা দেশ। সেই সময় দিল্লিতে একটি ‘পেয়িং গেস্টে’ থাকতেন সীমা। নির্ভয়াকাণ্ড প্রকাশ্যে আসতেই ‘পেয়িং গেস্ট’ থাকা অন্য তরুণীরা দ্রুত দিল্লি ছেড়ে চলে যান ভয়ে। কিন্তু সীমা যাননি। যত বার নির্ভয়ার খবর তিনি সংবাদপত্রে পড়েছেন, তত বারই কেঁদেছেন।

ছবি সংগৃহীত।

১৮ ২০

২২ ডিসেম্বর ২০১২। নির্ভয়াকাণ্ডের প্রতিবাদে ইন্ডিয়া গেটে বিক্ষোভে একেবারে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল সীমাকে। নির্ভয়া মামলার খুঁটিনাটি সবসময় নজরে রাখতেন তিনি।

ছবি সংগৃহীত।

১৯ ২০

প্রথমে নির্ভয়ার আইনজীবী ছিলেন না সীমা। ২০১৪ সালের মে মাসে নির্ভয়ার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন সীমা। ‘‘মনে হয় বিচার পাব না’’— নির্ভয়ার মায়ের এই কথা শোনার পর সীমা ঠিক করে নেন, তিনি মামলা লড়বেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নির্ভয়ার মাকে কথা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, ওদের (দোষী) ছাড়ব না।’’

ছবি সংগৃহীত।

২০ ২০

এর পর টানা ছয় বছর ধরে নির্ভয়ার বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন সীমা। ২০২০ সালে নির্ভয়ার চার দোষীর ফাঁসি হয়। পরে বহুজন সমাজ পার্টিতে (বিএসপি) যোগ দেন সীমা। নির্ভয়ার লড়াই শেষ হলেও নারীদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সীমার লড়াই শেষ হয়নি। আর সে কারণেই এ বার শ্রদ্ধার বিচারের জন্য নতুন লড়াই শুরু করলেন সীমা।

ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement