অভিনয়ে নামার কোনও আগ্রহ ছিল না। বরং ব্যবসা করেই অর্থ উপার্জন করতে চেয়েছিলেন ইনোসেন্ট। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে দক্ষিণের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে শুরু করলেন তিনি। পাঁচ দশক সময়ের ব্যবধানে ৭০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করে ইনোসেন্ট দক্ষিণী সিনেমাজগতের জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম।
ইনোসেন্টের পুরো নাম অবশ্য ইনোসেন্ট ভারীদ ঠেক্কেথেলা। ১৯৪৮ সালের ৪ মার্চ কেরলে জন্ম তাঁর। বাবা-মা এবং সাত ভাইবোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। সংসারের খরচ টানতে না পারায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর পর ইনোসেন্টের বাবা-মা তাঁকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দেন।
স্কুল ছাড়ার পর ইনোসেন্ট ঠিক করেন, উপার্জন করবেন। তাই তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে একটি দেশলাই কারখানায় কাজ করতে শুরু করেন।
ব্যবসা করে উপার্জন করবেন বলে নানা পন্থা খুঁজতে শুরু করেন ইনোসেন্ট। মুদিখানার দোকান খুলে বসেন। তার পাশাপাশি ধূপকাঠি বিক্রিও করতেন তিনি। কিন্তু দোকান খুললেও লাভ করতে না পারায় দোকানটি বন্ধ করে দেন ইনোসেন্ট।
চামড়ার ব্যবসা থেকে শুরু করে সাইকেল ভাড়া দেওয়ার ব্যবসাও করেছেন ইনোসেন্ট। তার পর সিমেন্ট বিক্রি করার কাজেও হাত দেন তিনি। কিন্তু সেই ব্যবসাও বেশি দিন চলেনি।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, উপার্জনের জন্য নাকি ভলিবল কোচ হিসাবেও কাজ করেছেন ইনোসেন্ট। কী ভাবে ভলিবল খেলতে হয় তা নাকি জানতেন না তিনি। শুধুমাত্র রোজগারের জন্য এই খেলা শিখেছিলেন তিনি।
বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করেও যখন ইনোসেন্ট কোনও লাভ করতে পারলেন না, তখন দক্ষিণী ফিল্মজগতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ব্যবসায়িক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সিনেমাজগত থেকে উপার্জন করবেন বলে প্রযোজনার খুঁটিনাটি বিষয় জানতে শুরু করলেন তিনি।
প্রোডাকশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করেন ইনোসেন্ট। কিন্তু তাঁর ভাগ্যে অন্য কিছু লেখা ছিল। কিছু দিন পর সেই কাজ ছেড়ে অভিনয়ে নামলেন তিনি। ১৯৭২ সালে মালয়ালম ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি।
কেরিয়ারের শুরুতে নাম করতে না পারলেও কৌতুকাভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ইনোসেন্ট। তাঁর কমিক টাইমিং ছিল অসাধারণ। এমনকি মালয়ালম ভাষায় সংলাপ বলার সময় তাঁর কায়দা বদলে যেত। সংলাপ বলার কায়দা শুনেই দর্শক হেসে কুটোপাটি খেতেন।
পাঁচ দশক ধরে দক্ষিণী ফিল্মজগতে অভিনয় করেছেন ইনোসেন্ট। ৭০০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করে কেরিয়ারে নজিরও গড়েছেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতেও যুক্ত হয়েছিলেন ইনোসেন্ট। ১৯৭০ সালে আরএসপি সদস্য হওয়ার পর ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটেও জেতেন তিনি।
অভিনয়ে নিজের কেরিয়ার শুরু করার সময় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে ইনোসেন্টের প্রতি ক্ষুব্ধ হন তাঁর বাবা। কিন্তু অভিনেতা হিসাবে সাফল্য লাভের পর বাড়ি থেকেও আর আপত্তি জানানো হয়নি।
২০১২ সালে গলার ক্যানসারে আক্রান্ত হন ইনোসেন্ট। ক্যানসারের প্রথম পর্যায়ে থাকার চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু সেই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হয়নি।
দ্বিতীয় বার ক্যানসারে আক্রান্ত হন ইনোসেন্ট। কিন্তু মানসিক দিক দিয়ে কখনও ভেঙে পড়েননি তিনি। ক্যানসার ধরা পড়ার পরেও অভিনয় করা ছাড়েননি তিনি।
সাতটি বইও লিখেছেন ইনোসেন্ট। কোনও বই অনুগল্পের সঙ্কলন হিসাবে, কোনও বই আবার আত্মজীবনী হিসাবে প্রকাশ পেয়েছে। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি কী ভাবে জীবন কাটাতেন তা নিয়েও বই লিখেছেন তিনি।
চলতি বছরের ৩ মার্চ শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোচির এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ইনোসেন্ট। তিন সপ্তাহ হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে। কিন্তু শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হতে থাকে অভিনেতার। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শেষে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। সেই রোগেই ৭৫ বছর বয়সে মারা যান তিনি।