পাসপোর্টে ছবিটা দেখে মনে হবে যেন কোনও মূর্তি। পরিচয় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে মিশরের রাজা। কিন্তু যাঁর পাসপোর্ট, তিনি মৃত। মৃত্যুর তারিখ খ্রিস্টপূর্ব ১৩০৩ অব্দ। অর্থাৎ, তিন হাজার বছর আগে। এমন পাসপোর্ট ঘিরে হইচই পড়ে গিয়েছিল একসময়। মনে হতেই পারে এটি জাল পাসপোর্ট। কিন্তু না, এমনই পাসপোর্ট সত্যিই তৈরি করা হয়েছিল।
প্রাচীন মিশরীয় রীতির নানা কাহিনি ইতিহাসে বর্ণিত রয়েছে। তেমনই একটি রীতি হল মৃত্যুর পর দেহ সংরক্ষণ করা। মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল, মৃত্যুর পর যত দিন দেহ সংরক্ষণ করা যাবে, তত দিন তাঁরা স্বর্গে বাস করবেন। তাই মৃত্যুর পর দেহ মমি করে রাখা হত।
মিশরে গেলে এখনও এই মমির হদিস পাওয়া যায়। মমি দেখতে নীল নদের দেশে ভিড়ও জমান বহু মানুষ। প্রাচীন মিশরের রাজাদের মৃত্যুর পর তাঁদের দেহ সংরক্ষণ করা হত। তবে সে সব রীতি-রেওয়াজ ইতিহাস হয়ে গিয়েছে।
মিশরের রাজাদের উপাধি ছিল ফারাও। এই ফারাওদের নিয়ে নানা কাহিনি রয়েছে। তেমনই এক ফারাওয়ের মৃত্যুর তিন হাজার বছর পর তাঁর পাসপোর্ট তৈরির খবরে বেশ আলোচনা হয়েছিল।
তাঁর নাম দ্বিতীয় রামেসিস। তিনিই মিশরের একমাত্র ফারাও যাঁর পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল।
মৃত্যুর পর রাজার পাসপোর্ট! এ আবার হয় নাকি! কিন্তু এমন কাণ্ডই ঘটেছিল মিশরে। কিন্তু কেন মৃত রাজার পাসপোর্ট তৈরি করা হল?
১৯৭৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পাসপোর্টটি ইস্যু করা হয়েছিল। অর্থাৎ, প্রায় ৫০ বছর আগে। সেই পাসপোর্ট দেখানোও হয়েছিল বিমানবন্দরে। কী কাণ্ড ঘটেছিল?
আসলে দ্বিতীয় রামেসিসের মৃত্যুর পর তাঁর দেহ সংরক্ষণ করা হয়েছিল। সেই মমি বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
মিশরের ওই রাজার মমির রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন ছিল। সংস্কারের কারণে তা প্যারিসে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল।
সেই কারণেই রাজার মমি প্যারিসে পাঠানোর তোড়জোড় করেছিল মিশর সরকার। কিন্তু, ফরাসি আইনের গেরোয় রাজার মমির বিদেশযাত্রা থমকে গিয়েছিল।
ফরাসি আইনে বলা আছে, মৃত বা জীবিত যে-ই হন না কেন, বিমানে উঠতে গেলে বৈধ পাসপোর্ট থাকতেই হবে।
ফ্রান্সের এই আইনের কারণেই দ্বিতীয় রামেসিসের মমিকে প্যারিসে পাঠানোর জন্য তাঁর মৃত্যুর তিন হাজার পর বাধ্য হয়ে পাসপোর্ট বানায় মিশর।
অ্যানসিয়েন্ট হিস্ট্রি এনসাইক্লোপেডিয়া অনুযায়ী মিশরে ১৯তম রাজবংশের তৃতীয় ফারাও ছিলেন দ্বিতীয় রামেসিস। ৯০-৯১ বছর পর্যন্ত বেঁচেছিলেন তিনি।
মিশরের আনাচকানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সে দেশের প্রাচীন রাজাদের নানা কাহিনি। তবে সম্রাট দ্বিতীয় রামেসিসের মৃত্যুর এত বছর পর পাসপোর্ট তৈরি বেশ চমকপ্রদ।
সেই কারণেই এক বার তাঁর পাসপোর্টের একটি ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল সমাজমাধ্যমে। যদিও ওই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম মারফত জানা যায় যে, ওই পাসপোর্টের ছবিটি নকল।