অগস্ট মাসের প্রথম সোমবার। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ তখনও অশান্ত। সরকার উৎখাতের বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটালেন তিনি।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম হাসিনার। বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর হাত ধরেই স্বাধীনতা আসে বাংলাদেশে। মায়ের নাম বেগম ফজিলাতুন্নেসা।
বাবা-মা এবং পাঁচ ভাই-বোনের সঙ্গে থাকতেন হাসিনা। ভাই-বোনদের মধ্যে সকলের বড় ছিলেন তিনি। আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি।
উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন হাসিনা। ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি শুরু করেন তিনি। সাবেক বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ভিপি হয়েছিলেন তিনি।
১৯৬৭ সালে এমএ ওয়াজেদ মিঞার সঙ্গে বিয়ে হয় হাসিনার। দম্পতির দুই সন্তান— সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট হাসিনার জীবনে অন্যতম দুঃখের দিন। সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন মুজিবুর-সহ তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্য। হাসিনা এবং তাঁর বোন রেহানা সেই সময় ইউরোপে থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। এই ঘটনার পর ভারত, বেলজিয়াম-সহ নানা দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন হাসিনা।
১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন হাসিনা। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিরোধী নেত্রী হিসাবে রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
এরশাদ সরকারের পতন হলে ১৯৯১ সালে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে উঠে আসে আওয়ামী লীগ। ‘স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের’ নেতৃত্ব দেন হাসিনা। সেই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া।
১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা উল্লেখ করেন হাসিনা। ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন হাসিনা। তবে সেই বছর ভোটে হার হয় তাঁর।
২০০৪ সালে ঢাকায় গ্রেনেড হামলা হয়। অল্পের জন্য সেই হামলায় রক্ষা পান তিনি। তিন বছর পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই হাসিনা তাঁর বাসভবন ‘সুধা সদন’ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হন।
২০০৮ সালের ১১ জুন প্যারোলে মুক্তি পান হাসিনা। সেই বছরই চিকিৎসাজনিত কারণে আমেরিকায় যান তিনি। তার পর বাংলাদেশে ফিরে আবার নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজে লেগে পড়েন।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেন হাসিনা।
পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ‘বিতর্কিত’ ভোটে আবার জয়লাভ করেন হাসিনা।
২০১৯ এবং ২০২৪ সালের পর পর দু’বারের নির্বাচনে জেতেন হাসিনা। তবে দু’টি নির্বাচনই ‘প্রহসন’ বলে দাবি করে বিরোধী শিবির।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়, তা ক্রমে সরকার পতনের দাবি-আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করেন হাসিনা। তার পরেই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিক সম্মেলনে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার কথা ঘোষণা করেন।
গণবিক্ষোভের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে ভারতে আসেন। গাজ়িয়াবাদের হিন্ডন বায়ুসেনা ঘাঁটিতে অবতরণের পর হাসিনার সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের মুখ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল গিয়ে সাক্ষাৎ করেন।
হাসিনার দেশত্যাগের পরে তাঁর সরকারি বাসস্থান ‘গণভবন’, সংসদ ভবন, তাঁর দল আওয়ামী লীগের ছোট-বড় দফতরের পাশাপাশি হামলার শিকার হয়েছে ঢাকায় ইন্দিরা গান্ধীর নামাঙ্কিত ‘ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’। বুলডোজ়ার এনে ভাঙা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তিও। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নিয়ে ভারত কোন অবস্থান নিতে চলেছে তা নিয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার সকালে সর্বদল বৈঠক ডাকল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বৈঠকে সব দলের প্রতিনিধিদের সামনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।