পৃথিবীর অষ্টম ধনী ব্যক্তি। অনেকে বলেন, পৃথিবীতে যে ক’জন জীবিত শিল্পপতি রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম সেরা। সেই ওয়ারেন বাফেট ভরসা করেন এক ভারতীয়ের উপর। তিনি অজিত জৈন। ওয়ারেনের ‘ডান হাত’ বলেই পরিচিত।
স্টক মার্কেটে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে ওয়ারেনের। বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের সিইওর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১১ লক্ষ কোটি টাকা।
এই বিপুল সম্পত্তির কারণে পৃথিবীতে অষ্টম ধনী ব্যক্তি হলেন ওয়ারেন। তবে তিনি সব সময়ই জানান, এক ভারতীয় উদ্যোগপতিকে দারুণ সম্মান করেন তিনি। ওই ব্যক্তি হলেন অজিত। ওয়ারেনের দাবি, শিল্পক্ষেত্রে নতুন ঢেউ এনেছেন ওই ভারতীয়।
বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের বিমার ব্যবসা দেখেন অজিত। ওয়ারেন মাঝেমধ্যেই বলে থাকেন, অজিতের ব্যবসা সামলানোর প্রতিভা বিরল। ওঁর মস্তিষ্ক হল নিত্যনতুন ‘কৌশলের কারখানা’।
১৯৮৬ সালে ওয়ারেনের সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন অজিত। এখন তিনি সংস্থার চেয়ারম্যান। অজিতের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২০০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার কোটিল টাকা।
ওয়ারেনের সংস্থা নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন রবার্ট পি মাইলস। বইটির নাম ‘দ্য ওয়ারেন বাফেট সিইও: সিক্রেটস ফ্রম বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে ম্যানেজার’। সেখানে লেখা হয়েছে যে, অজিত যখন সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন, তখন সেই বিষয়ে কিছুই জানতেন না।
বাফেটের বিমা বিভাগে অজিত যখন যোগ দিয়েছিলেন, সেখানে কাজ করতেন চার জন। ১৪ বছর সময় নিয়েছিলেন তিনি। সংস্থার ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিলেন ৭৮০ কোটি ডলারে। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
অজিতকে ‘পয়মন্ত’ বলে মনে করতেন ওয়ারেন। একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘যখন অজিতকে বাছাই করেছিলাম, দিনটা ছিল আমার কাছে দারুণ পয়া। অজিত ছিল একদম ঠিকঠাক বাছাই। এত বছর পর ও আরও উন্নতি করেছে।’’
অজিতের অভিভাবক থাকতেন ওড়িশায়। তাঁদের একটি চিঠি দিয়েছিলেন ওয়ারেন। তাতে লিখেছিলেন, তাঁদের কি আরও কোনও সন্তান রয়েছে, যিনি অজিতের মতোই সংস্থাকে এতটা দিতে পারবেন?
চিঠিতে বেশ মজা করেই ওয়ারেন লেখেন, ‘‘আমি, চার্লি মাঙ্গার (সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান) এবং অজিত একই নৌকায় থাকি, এবং সেটি যদি কোনও কারণে ডুবতে শুরু করে, তা হলে আগে অজিতকে বাঁচাতে হবে। কারণ ও সংস্থার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।’’
ওড়িশার সুন্দরগড়ে জন্ম অজিতের। আইআইটি খড়্গপুর থেকে বিটেক পাশ করেছিলেন তিনি।
আইবিএমে সেল্স বিভাগে কাজ শুরু করেছিলেন। তিন বছর কাজ করার পর নাকি চাকরি গিয়েছিল অজিতের। এর পরেই আমেরিকা গিয়েছিলেন। সেখানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করেছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে বার্কশায়ার হ্যাথওয়েতে যোগ দেন। বাকিটা ইতিহাস।
অজিতের এক তুতো ভাই অংশু জৈন ডয়েশ ব্যাঙ্কের সহকারী সিইও।
অজিত নিজে ওয়ারেনের সংস্থার দ্বিতীয় স্তম্ভ বলা চলে। যে সংস্থার সম্পত্তির পরিমাণ রিলায়্যান্স সংস্থার চার গুণ।