বড়দিনে ফরাসি সরকারের হাত থেকে ছাড়া পেল বিমান। প্যারিস থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে ভাত্রি বিমানবন্দরে একটি বিমানকে আটক করে ফরাসি সরকার। বিমানের অধিকাংশ যাত্রী ছিল ভারতীয়। মানবপাচার হচ্ছে সন্দেহে আটক করা হয় বিমানটিকে। তবে ছাড়া পেয়ে সেই বিমান কোথায় যাবে সেই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
রবিবার ফ্রান্সের এক আদালত বিমানটিকে ছেড়ে দেওয়ার রায় দেয়। তার পর সোমবার সেটিকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে বিমানটি ভারতের উদ্দেশেই পাড়ি দিচ্ছে কি না, জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, চার্টার বিমানটি নিকারাগুয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। সওয়ার ছিলেন ৩০৩ জন। যাত্রীদের মধ্যে ১১টি শিশুও ছিল, যাদের কোনও অভিভাবক ছিল না। সে কারণে ফ্রান্সের প্রশাসনের সন্দেহ হয়, বিমানে করে মানবপাচার চলছে।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাই থেকে বিমানটি যখন ভাত্রি বিমানবন্দরে জ্বালানি নিতে নামে, তখনই সেটিকে আটক করা হয়। ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানান, ওই বিমানের যাত্রীরা মানুষ পাচার চক্রের শিকার হয়ে থাকতে পারেন বলে তাঁদের জানান এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। তার পরেই বিমানটিকে আটক করা হয়। ভাত্রি বিমানবন্দরের রিসেপশন হলে প্রথমে রাখা হয় যাত্রীদের। রবিবার ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিনিধিরা যাত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন।
পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে ভারতীয় দূতাবাস। রবিবার রাতেই দূতাবাসকে ‘কনসুলার অ্যাকসেস’ দিয়েছিল ফ্রান্স। দূতাবাসের তরফে জানানো হয়েছিল, ফরাসি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। রাতেই ফরাসি বিচারবিভাগ সূত্রে খবর মিলেছিল, আটক ৩০৩ জন ভারতীয়ের অধিকাংশই সোমবার মুক্তি পাবেন।
ফরাসি আইন অনুযায়ী বিদেশি নাগরিককে প্রাথমিক ভাবে চার দিন আটকে রাখতে পারে ফরাসি পুলিশ। বিচারকের অনুমতিসাপেক্ষে তা আট দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়। বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সময়সীমা বর্ধিত করা যায় ২৬ দিন পর্যন্ত। মানুষ পাচারের অপরাধে ফ্রান্সে ২০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
এর পর বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। ফ্রান্সে আটক বিমানের ৩০৩ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন চার জন বিচারক। যাত্রীদের আটক থাকার মেয়াদ বৃদ্দি করা নিয়ে তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ২ দিন সময় ছিল তাঁদের হাতে। দোভাষীর মাধ্যমে যাত্রীদের বক্তব্য শোনেন বিচারকেরা।
ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে হেফাজতে নিয়েছিল ফরাসি পুলিশ। ফরাসি পুলিশের সংগঠিত অপরাধদমন শাখা, সীমান্ত পুলিশ ও উড়ান নিরাপত্তা সংস্থা ঘটনার তদন্ত করছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, এ৩৪০ এয়ারবাসের সকল যাত্রীদের দু’দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার পরেই সেটিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবার ওই বিমানটি মুক্তির সব প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে। তবে বিমানটি কোথায় যাবে, বিবৃতিতে জানানো হয়নি। স্থানীয় বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ফ্রাঁসোয়া প্রোকিয়োরো সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, বিমানটি ভারতের উদ্দেশে রওনা হবে। যদিও ভারতের তরফে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
সংবাদ সংস্থা এএফপি একটি সূত্রের মাধ্যমে জেনেছে, বিমানের ভারতীয় যাত্রীরা আরব আমিরশাহিতে কাজ করতেন। তাঁরা নিকারাগুয়া হয়ে আমেরিকা বা কানাডায় যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। যে বিমানে তাঁরা চেপেছিলেন, সেটি ছিল রোমানিয়ার সংস্থা লেজেন্ড এয়ারলাইনসের বিমান।
ঘটনায় অসন্তুষ্ট বিমান সংস্থা। তাদের দাবি, ওই উড়ানে শুধুমাত্র যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছিল তারা। মানুষ পাচার হচ্ছিল কি না, সেই বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই। ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ফরাসি সরকার কোনও পদক্ষেপ করলে পাল্টা আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ওই সংস্থার আইনজীবী।
বিমান সংস্থার আইনজীবী লিলিয়ানা বাকায়োকো জানিয়েছেন, এক খদ্দেরের হয়ে ওই যাত্রীদের বিমানে বহন করার দায়িত্ব নিয়েছিল ‘লেজেন্ড এয়ারলাইন্স’। যাত্রীদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করেছিলেন সেই খদ্দেরই। যাত্রীদের অপরাধ সংক্রান্ত রেকর্ড জানা বিমান সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে ‘লেজেন্ড এয়ারলাইন্স’ বেআইনি কাজ করেনি।
তাঁর কথায়, ‘‘৩০৩ জন, এই সংখ্যাটি বিশেষ উদ্বেগজনক নয়। তাঁরা বাতাসহীন ও খাদ্যহীন অবস্থায় ট্রাকে বন্ধ নেই।’’ লিলিয়ানার দাবি, ‘লেজেন্ড এয়ার’ ঘটনায় অসন্তুষ্ট। কারণ, এতে তাদের আর্থিক ও ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়েছে।
প্যারিস থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে ভাত্রিতে অবতরণ করেছিল বিমানটি। সাধারণ কম খরচের বিমানগুলি সেখানে অবতরণ করে। আটক বিমানের যাত্রীদের জন্য সেখানে শৌচালয়, খাবার, গরম পানীয়ের ব্যবস্থা করা হয়। সংবাদমাধ্যমের দাবি, যাত্রীদের মধ্যে ১০ জন ফ্রান্সে আশ্রয় চেয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা এএফপি-র দাবি আটকে পড়া ভারতীয়দের মধ্যে অন্তত ১০ জন ফ্রান্সে আশ্রয় চেয়েছেন। ছ’জন অপ্রাপ্তবয়স্কও সে দেশে থাকার আবেদন জানান। আটকে পড়া ভারতীয়দের অস্থায়ী শয্যা এবং শৌচালয় ও স্নানের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ভাত্রি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁদের খাওয়ার বন্দোবস্তও করেছেন।