এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া। একেই পর পর ভূমিকম্প, সুনামিতে অস্থির জাপান। তার উপর নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা বিশ্ব।
জাপানে রানওয়েতে আগুন লেগে গেল বিমানে। জ্বলে গেল টোকিয়ো বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা বিমান। ইতিমধ্যে ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী যাত্রীবোঝাই ‘জাপান এয়ারলাইনস’-এর এয়ারবাস এ৩৫০ এর সঙ্গে যাত্রিবাহী বিমানটি বন্দরে অবতরণের সময় জাপানি উপকূলরক্ষী বাহিনীর বিমানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। আর তাতেই ভয়াবহ আগুন লেগে যায় বিমানে।
ঘটনাটি টোকিয়োর হানেডা বিমানবন্দরের ঘটনা। দুর্ঘটনার সময় ‘জাপান এয়ারলাইনস’-এর বিমানে ৩৭৯ জন যাত্রী ছিলেন। জাপানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে অবতরণের সময় জাপান এয়ারলাইনসের বিমানটির গতি খুব বেশি ছিল।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ৩৭৯ জন যাত্রী-সহ বিমানের বাকি কর্মচারীদের নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে জাপানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছেন, উপকূলরক্ষী বাহিনীর বিমানে ছ’জন ছিলেন। এক জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি পাঁচ জন মৃত।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, বিমানের জানলার কাচ ভেঙে বেরিয়ে আসছে আগুনের ফুলকি, ধোঁয়া। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে দমকলবাহিনী।
৭০টি ইঞ্জিন আগুন নেভানোর কাজ করে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে আপৎকালীন কন্ট্রোলরুম খুলেছেন। সেখানে বসে উদ্ধারের খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
সংবাদমাধ্যমকে জাপান এয়ারলাইনস বিমান সংস্থা জানিয়েছে, হোক্কাইডোর নিউ চিটোস বিমানবন্দর থেকে উড়ে টোকিয়োর হানেডা বিমানবন্দরে অবতরণ করছিল বিমানটি। হানেডা বিমানবন্দরে উপকূলরক্ষী বাহিনীর যে আধিকারিকেরা রয়েছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
তাদের বিমানের সঙ্গে ধাক্কা লেগেই আগুন জ্বলেছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তাদের বিমানও কোনও না কোনও ভাবে জড়িত, সে বিষয়ে নিশ্চিত বলেই জানিয়েছেন এক আধিকারিক। ঘটনার পরেই হানেডা বিমানবন্দরের রানওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তবে এই ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও ভয়াবহ কিছু দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে গোটা বিশ্ব। যা শুনলে আমাদের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।
গত বছরেই ঘটেছে বেশ কিছু এমন ঘটনা। অনান্য বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে বিমান দুর্ঘটনার হার কম হলেও দু’টি ঘটনা উল্লেখ্য।
১৫ জানুয়ারি ২০২৩ সকালে কাঠমান্ডু থেকে পোখরা যাওয়ার পথে অবতরণের কয়েক সেকেন্ড আগে ৭২ জন যাত্রীকে নিয়ে ভেঙে পড়ে ইয়েতি বিমান সংস্থার এটিআর-৭২ বিমান। মাঝ আকাশেই বিমানটি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ হারায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই উল্টে গিয়ে ভয়ঙ্কর শব্দ করে মুখ থুবড়ে মাটিতে ভেঙে পড়ে। সেই ঘটনায় পাঁচ ভারতীয়-সহ মৃত্যু হয় মোট ৬৭ জনের।
দ্বিতীয় মারাত্মক দুর্ঘটনাটি ঘটে ব্রাজিলে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩। মানাস এয়ারলাইন্সের একটি পর্যটকবাহী বিমান অ্যামাজনিয়ান শহর থেকে বার্সেলোসে যাওয়ার পথে খারাপ আবহাওয়ার কারণে ভেঙে পড়ে। ঘটনায় ১৪ জন যাত্রী-সহ বাকি বিমানকর্মীরা সকলেই মারা যান।
এ ছাড়াও ২০২৩ সালে নানা ছোট বড় বিমান দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে বিশ্ব। কোথাও যাত্রীদের মৃত্যু হয়েছে তো কোথাও আবার গুরুতর ভাবে আহত। তবে ২০২৪ সালের শুরুতেই জাপানের বিমানবন্দরের এই ঘটনায় আবারও সেই সব স্মৃতিই যেন উস্কে দিল।