‘আনন্দ’ সিনেমায় রাজেশ খন্নার সেই সংলাপ মনে আছে? যেখানে তিনি বলছেন, ‘‘বাবুমশাই, জিন্দেগি বড়ি হোনে চাহিয়ে, লম্বি নহি।’’ সুপারহিট এই সংলাপ অবশ্য এই এলাকায় অচল। এখানকার বাসিন্দাদের জীবন যতটা ‘লম্বি’, ততটাই উপভোগ্য।
পাকিস্তানের উত্তরে রয়েছে হুনজা উপত্যকা। এই উপত্যকার চারদিক উঁচু পাহাড়ে ঘেরা। উপত্যকায় যে গ্রামগুলি রয়েছে, তা-ও কেমন ছন্নছাড়া। কিন্তু এই উপত্যকার অধিবাসীরা অনন্য অন্য এক কারণে।
এই উপত্যকার মানুষ কমপক্ষে ১০০ বছর বাঁচেন। কখনও কখনও ১২০ বছর পর্যন্তও বেঁচে থাকেন হুনজা উপত্যকার অধিবাসীরা।
হুনজা উপত্যকার মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতাও নজরে পড়ার মতো।
শোনা যায়, এই উপত্যকায় ৬০ থেকে ৯০ বছরের মহিলারাও সন্তানধারণে সক্ষম।
হুনজা উপত্যকার এই অধিবাসীরা বুরুশো নামে বেশি পরিচিত।
বুরুশোদের দেখে মনে হয়, তাঁরা যেন সব সময় নিজেদের যৌবনেই রয়েছেন। বয়সের ছাপ চোখেমুখে পড়ে না তাঁদের। সময়ের কাঁটা যেন তাঁদের জন্য থমকে গিয়েছে।
বুরুশোদের যৌবন ধরে রাখার রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তাঁদের জীবনযাপনে।
কী এই রহস্য? বিজ্ঞানীদের মতে, এলাকায় যে সব ফলমূল, সব্জি পাওয়া যায়, সে সব খুবই পুষ্টিকর। এই সব খাবারেই লুকিয়ে রয়েছে বুরুশোদের দীর্ঘায়ু হওয়ার রহস্য।
দুধ, দই থেকে শুরু করে নানা রকম ফল এবং শাকসব্জি খান বুরুশোরা।
পাশাপাশি বুরুশোরা এমন এলাকায় থাকেন যেখানে দূষণের পরিমাণ প্রায় শূন্য। বুরুশোদের সকলেরই নিজেদের চাষের জমি রয়েছে।
কিন্তু এই জমিগুলি কারও বাড়ির লাগোয়া নয়। পাহাড়ের ধাপ কেটে কেটে তৈরি জমিতে চাষ করেন বুরুশোরা।
স্বভাবত কর্মঠ এই বুরুশো সম্প্রদায়ের লোকজন। প্রাত্যহিক কাজকর্মের মাধ্যমেই শরীরচর্চা হয়ে যায় তাঁদের।
কথিত আছে, বুরুশো সম্প্রদায়ের লোকেরা কখনও কোনও জটিল রোগে আক্রান্ত হন না। কর্কট রোগ, আলসার, পেটের রোগ এমনকি অ্যাপেনডিক্সের সমস্যাতেও কেউ কোনও দিন ভোগেননি বলে দাবি স্থানীয়দের।
হেনরি কোয়ান্ডা নামে এক বিজ্ঞানী হুনজা উপত্যকায় গিয়ে প্রায় ৬০ বছর ছিলেন।
হুনজা উপত্যকার হিমবাহের জল পরীক্ষা করে তিনি দাবি করেন, এই জলই বুরুশোদের দীর্ঘায়ুর কারণ।