স্কুল, কলেজে পড়াশোনা শেষ করার পর সকলেই জীবিকার সন্ধান করেন। কেউ ব্যবসা করেন। কারও স্বপ্ন থাকে সরকারি চাকরির। স্বপ্ন অধরা থেকে গেলে জীবিকানির্বাহের জন্য সে ক্ষেত্রে ভরসা বেসরকারি চাকরি। তবে সরকারি হোক বা বেসরকারি— মোটা বেতনের চাকরি কে না চান।
কিন্তু সেই মোটা বেতন কতটা ‘মোটা’ হতে পারে? বছরে কোটি টাকা? অনেকের কাছেই বছরে কোটি টাকা বেতনের চাকরি স্বপ্নের মতো। কিন্তু যাঁর কথা বলা হচ্ছে তিনি পান বার্ষিক ১৭,৫০০ কোটি! ভাবতে অবাক লাগলেও সত্যি। আরও অবাক করা বিষয় হল, যিনি সেই বেতন পান, তাঁর সঙ্গে যোগ রয়েছে ভারতের।
কথা হচ্ছে ‘কোয়ান্টামস্কেপ’-এর প্রাক্তন সিইও জগদীপ সিংহের। জগদীপের বার্ষিক বেতন ১৭,৫০০ কোটি টাকা, যা বিশ্বের তাবড় সংস্থার সিইও এবং কর্ণধারেরাও পান না। জগদীপই নাকি ‘বিশ্বের সবচেয়ে বেশি’ বেতন পাওয়া কর্মী। এমনটাই উঠে এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
জগদীপ এক জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা এবং আমেরিকার সংস্থা ‘কোয়ান্টামস্কেপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা।
‘বিশ্বের সবচেয়ে বেশি’ বেতনের কর্মী হওয়ার পাশাপাশি তিনি সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া সিইও-ও ছিলেন৷
যদি জগদীপের বার্ষিক আয় প্রতি দিনের হিসাবে ভাগ করা যায়, তা হলে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৪৮ কোটি টাকা করে বেতন পান তিনি। জগদীপের চিত্তাকর্ষক বেতনের মধ্যে আনুমানিক ২৩০ কোটি ডলারের স্টক বিকল্পও রয়েছে।
২০১০ সালে টিম হোম এবং ফ্রিৎজ্ প্রিনজ়ের সঙ্গে মিলে কোয়ান্টামস্কেপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জগদীপ।
জগদীপ দীর্ঘ দিন সংস্থার সিইও হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়ান। নতুন সিইও হন শিবা শিবরাম।
কিন্তু কোয়ান্টামস্কেপ কী? কী তৈরি করে জগদীপের সংস্থা? ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত সেই সংস্থা বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি)-র ব্যাটারি তৈরি করে। সংস্থার লক্ষ্য দ্রুত চার্জ হয় এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং নিরাপদ ব্যাটারি তৈরি করা। এই নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চালাতে থাকে ওই সংস্থা।
কোয়ান্টামস্কেপের দাবি, কার্বনমুক্ত ভবিষ্যতের প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। শক্তি শিল্পে বিপ্লব ঘটানোই নাকি তাদের লক্ষ্য।
কোয়ান্টামস্কেপ বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য চার্জ দেওয়া যায় এমন ‘সলিড-স্টেট’ লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরি করে। এই ব্যাটারিগুলি সাধারণ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিগুলির তুলনায় বেশি টেকসই এবং বেশি সুবিধা প্রদান করে।
উন্নত হওয়ার পাশাপাশি ‘সলিড-স্টেট’ লিথিয়াম ব্যাটারি অন্য লিথিয়াম ব্যাটারির তুলনায় বেশি শক্তিশালী। পাশাপাশি ওই ব্যাটারিগুলি চার্জ করতেও তুলনামূলক ভাবে কম সময় লাগে।
বিল গেটসের মতো ধনকুবের ব্যবসায়ী এবং ফোক্সভাগেনের মতো গাড়ি সংস্থার বিনিয়োগ রয়েছে জগদীপের সংস্থায়।
ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং দূষণহীন শক্তি শিল্পে কোয়ান্টামস্কেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করেন সংস্থার কর্তারা। ২০১২ সাল থেকে ফোক্সভাগেনের সঙ্গে কাজ করা শুরু করে কোয়ান্টামস্কেপ।
২০১৮ সালে জগদীপদের সংস্থায় ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগও করে ফোক্সভাগেন। একই বছরে ফোক্সভাগেন এবং কোয়ান্টামস্কেপ ‘সলিড-স্টেট’ ব্যাটারি উৎপাদন নিয়ে যৌথ প্রকল্প তৈরির ঘোষণা করে। ২০২০ সালের জুনে কোয়ান্টাস্কেপে আরও ২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে ফোক্সভাগেন।
সেই কোয়ান্টামস্কেপেরই মাথায় রয়েছেন জগদীপ। আমেরিকার বাসিন্দা জগদীপ মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন।
এ ছাড়াও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে জগদীপের। উল্লেখ্য, টিম এবং ফ্রিৎজ়ও স্ট্যানফোর্ডেই পড়তেন। সেখান থেকেই একসঙ্গে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরির পরিকল্পনা।
কোয়ান্টামস্কেপ প্রতিষ্ঠার আগে এইচপি এবং সান মাইক্রোসিস্টেমসের মতো সংস্থাতেও কাজ করেছন জগদীপ। ‘কোয়ান্টামস্কেপ’ ছাড়াও একাধিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি।