কিছু ঘটনা রহস্যাবৃতই থেকে যায়। হাজার চেষ্টা করেও সে সব রহস্যের সমাধান করা যায় না। ঠিক তেমনই একটি ঘটনা ঘিরে এখনও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে দেশে। ঘটনাস্থল কর্নাটকের টুমকুর জেলার পাভাগাড়া গ্রাম। কী ঘটেছিল সেখানে?
৪০ বছরের আগের কথা। একের পর এক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল পাভাগাড়া গ্রামের। নিহতদের সকলেই শিশু ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য এখনও কাটেনি।
১৯৮৩ সালের এপ্রিল মাস। তরিখটা ২৯ এপ্রিল। সেই প্রথম এক শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল পাভাগাড়ায়। কী ভাবে মৃত্যু হয়েছিল?
বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুমোচ্ছিল শিশুটি। অভিযোগ ওঠে, রাতে পাঁচ বছরের এক শিশুকন্যাকে ঘুমন্ত অবস্থায় তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সেই শুরু। তার পর থেকে প্রায় রোজ রাতেই এমন ঘটনা ঘটতে শুরু করল কর্নাটকের ওই গ্রামে। শিকারদের সকলেরই বয়স পাঁচ বছরের আশপাশে। অর্থাৎ, শিকারির নিশানায় শিশুরাই।
নির্জন রাতে নিঃশব্দে শিশুকে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হত। তার পর খুন করা হত। পরে হাড়গোড় পাওয়া যেত সেই সব শিশুদের। কখনও পাওয়া যেত শিশুদের রক্তমাখা পোশাক।
শুধু তাই নয়, প্রতিটি হত্যার পরই ঘটনাস্থল থেকে একটি চিহ্ন পাওয়া যেত। পশুর থাবার চিহ্ন। তা হলে কি এই হাড়হিম হত্যার নেপথ্যে কোনও হিংস্র জন্তুর হাত রয়েছে?
প্রায় রোজ দিন এমন ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন গ্রামবাসীরা। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। শুরু হয় তদন্ত।
প্রাথমিক ভাবে গ্রামবাসীরা সন্দেহ করেছিলেন যে, কোনও হিংস্র জন্তু এই কাজ করছে। তা হলে কি নেকড়ে হানা দিল গ্রামে? কী ভাবে পরিত্রাণ মিলবে?
গ্রামবাসীদের সন্দেহকে একেবারে হেলাফেলা করলেন না তদন্তকারীরা। শুরু হল সেই মানুষখেকো নেকড়ের খোঁজ। কিন্তু তার টিকিটিও পাওয়া গেল না।
এই সময় হঠাৎ একদিন গ্রামবাসীরা দেখলেন যে, আর কোনও খুনের ঘটনা ঘটছে না। ভাবলেন, বিপদ কেটে গিয়েছে। কিন্তু পরের ঘটনায় আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন গ্রামবাসীরা।
দু’মাস পর হঠাৎ আরও একটি শিশু উধাও হয়ে গেল। আবার শুরু হল সেই রহস্যমৃত্যুর পর্ব। আবার সেই থাবার চিহ্ন। ব্যাপারটা কী?
আবার নতুন করে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হল গ্রামে। তা হলে আবার সেই হিংস্র জন্তু এই কাজ করছে? তদন্তকারীরা দেখলেন, থাবার চিহ্ন পাওয়া গেলেও শিকারকে যে ভাবে টেনে নিয়ে যায় জন্তুরা, তার কোনও প্রমাণ মেলেনি। অর্থাৎ, শিশুর দেহ টেনে নিয়ে যাওয়ার কোনও চিহ্ন নেই।
ফলে হিংস্র জন্তু যে এই ঘটনায় জড়িত নয়, তা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যান তদন্তকারীরা। তার পর গ্রামবাসীরা আশঙ্কা করলেন যে, এটা নির্ঘাত কোনও তান্ত্রিকের কাজ। এই নিয়ে গুজবও রটে গিয়েছিল গ্রামে।
ধর্মীয় আচার পালনের জন্য কি তবে কোনও তান্ত্রিকই এমন কাণ্ড করছেন? তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালানো হল। পুলিশ কুকুর দিয়ে তল্লাশিও চালানো হল। কিন্তু কোনও তান্ত্রিককেই ধরতে পারলেন না তদন্তকারীরা।
শোনা গিয়েছিল, বেছে বেছে নাকি শুধুমাত্র শিশুকন্যাদেরই খুন করা হয়েছিল। অনেক তদন্ত হয়েছে। কিন্তু কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ৪০ বছর পর এখনও রহস্য কর্নাটকের ওই গ্রামে।