অস্ট্রিয়া-জার্মানির সীমান্ত লাগোয়া ছোট্ট শহর ব্রাউনাউ অ্যাম ইন। সেখানে সেন্ট স্টিফেন গির্জার পাশে পাথরের ফলকে খোদাই করা রয়েছে এক প্রৌঢ়ের অবয়ব।
সে পাথরের দিকে এক ঝলক তাকালে কিছু ক্ষণ থমকে যেতে হয়। প্রৌঢ়ের দাড়ির বৈশিষ্ট্য পথচলতি যে কোনও মানুষের নজর কাড়বে। মুখ থেকে শুরু হয়ে তাঁর দাড়ি ছাড়িয়ে গিয়েছে পা-ও।
লম্বা এই দাড়ির মালিকের নাম হান্স স্টেইনিঞ্জার। ষোড়শ শতকে ব্রাউনাউ অ্যাম ইন শহরের মেয়র ছিলেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মেয়র হিসাবে তাঁর যথেষ্ট জনপ্রিয়তা ছিল।
কিন্তু মেয়র হিসাবে কাজের জন্য নয়, দাড়ির জন্য ‘অমর’ হয়ে আছেন হান্স। সাধের দাড়িই ডেকে এনেছিল তাঁর মৃত্যু।
জানা যায়, হান্সের দাড়ির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় সাড়ে চার ফুট। তৎকালীন বৃহত্তম দাড়ির রেকর্ড ছিল তাঁর অধীনে। শখেই দাড়ি বাড়িয়েছিলেন হান্স। এই শখই যে তাঁর কাল হয়ে দেখা দেবে, ভাবতেও পারেননি।
অনেকে বলেন, হান্সের নিজের উচ্চতার চেয়ে তাঁর দাড়ির দৈর্ঘ্য বেশি ছিল। লম্বা দাড়ির শেষ অংশ যত্ন করে ভাঁজ করে পকেটে পুরে রাখতেন তিনি। সে ভাবেই হাঁটাচলা করতেন। শহরে এই অভিনব দাড়িও তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ ছিল।
সালটা ১৫৬৭। ২৮ সেপ্টেম্বর শহরে ঘটে যায় বিধ্বংসী এক অগ্নিকাণ্ড। মেয়র হিসাবে সে দিন বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন হান্স।
অগ্নিকাণ্ডে শহরজুড়ে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। বাসিন্দারা দিশাহারা হয়ে যে যে দিকে পারছিলেন, ছুটে পালাচ্ছিলেন। যেন সাক্ষাৎ মৃত্যু তাড়া করেছিল তাঁদের।
এই পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকতে পারেননি হান্স। দৌড়ে রাস্তায় নামতে চেয়েছিলেন। জনগণকে আশ্বস্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর যত্ন করে বাড়িয়ে তোলা দাড়ি।
তাড়াহুড়োয় হান্স সে দিন দাড়ি ভাঁজ করে পকেটে ভরে রাখতে ভুলে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি দাড়ির দিকে নজর দেওয়ার সময়ই পাননি সে দিন।
সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নামার সময় হান্সের দাড়ি মেঝেতে লুটিয়ে পড়েছিল। তাতেই তাঁর পা আটকে যায়। হোঁচট খেয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে যান তিনি।
দাঁড়িতে হোঁচট খাওয়ার পর হান্সের ঘাড় ভেঙে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর পর পৃথিবীর কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়ে হান্সের নাম। সকলে তাঁকে মনে রেখেছেন তাঁর অদ্ভুত দাড়ির শখ এবং মর্মান্তিক পরিণতির জন্য।
অস্ট্রিয়ার স্থানীয় সংগ্রহশালায় হান্সের ‘ঘাতক’ দাড়ি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ৪৫৫ বছরের পুরনো সেই দাড়ি আজও অবিচল। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এই দাড়ি।
মৃত্যুর পর হান্সের স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে পাথরের ফলকে তাঁর অবয়ব খোদাই করে রাখা হয়। নানা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে তাঁর বিখ্যাত দাড়ি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে হিটলারের জন্মভূমির এই প্রাক্তন মেয়রের কাহিনি ভুলে না যায়, সে ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ।