সাল ১৯৬০। সে বারই প্রথম প্লেবয় ক্লাবের সঙ্গে পরিচিতি ঘটেছিল সকলের। আমেরিকার শিকাগোয় সেই প্রথম কোনও প্লেবয় ক্লাব খোলা হয়েছিল। তার পর যত দিন গড়িয়েছে, ততই প্লেবয় ক্লাবের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ধীরে ধীরে নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস, কানসাস সিটি-সহ অন্যত্রও এই ক্লাবের রমরমা বাড়ে। এই ক্লাবগুলির অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘বানি’দের নিয়ে।
কারা এই ‘বানি’? হোটেলে যেমন বেয়ারা থাকেন অর্থাৎ, যিনি খাবার পরিবেশন করেন, প্লেবয় ক্লাবগুলিতে থাকেন মহিলা বেয়ারা। অর্থাৎ যে সব মহিলা খাবার বা পানীয় পরিবেশন করেন, তাঁদেরকেই ‘বানি’ বলে ডাকা হয়।
প্লেবয় হোটেলে ‘বানি’দের নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। অনেকেই এই ‘বানি’দের দেখতেই ওই ক্লাবগুলিতে ভিড় জমান।
‘বানি’দের লাস্যময়ী হতেই হয়। তবে প্লেবয় ক্লাবগুলিতে কোনও অতিথির সংস্পর্শেই ঘেঁষতে পারেন না ‘বানি’রা। ‘বানি’দের জীবনে চাকচিক্যের ঘাটতি নেই। তবে প্রতিনিয়ত এক কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয় তাঁদের।
প্লেবয় ক্লাবগুলিতে ‘বানি’দের চাহিদা তুঙ্গে থাকে। রুপোলি পর্দার নায়িকাদের নিয়ে জনমানসে যে উন্মাদনা থাকে, তেমন ‘বানি’দের নিয়েও সেই আকর্ষণ রয়েছে।
‘বানি’ হওয়া কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়! চাইলেই সকলে ‘বানি’ হতে পারেন না। কাঠখড় পুড়িয়েই ‘বানি’ হওয়া যায়। অভিনেত্রী হওয়ার আগে যেমন মহিলাদের অডিশন দিতে হয়। ‘বানি’দের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই করা হয়। অর্থাৎ, কোন তরুণীকে ‘বানি’ হিসাবে বেছে নেওয়া হবে, এ জন্য অডিশনের আয়োজন করা হয়।
‘বানি’ পদের জন্য বহু তরুণীই অডিশনে শামিল হন। তবে সকলের ভাগ্যে শিকে ছেড়ে না। অডিশনের মাধ্যমে যোগ্য ‘বানি’কে বেছে নেওয়া হয়। তার পর সেই তরুণীদের ‘বানি’ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্লেবয় ক্লাবে অতিথিদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, এ নিয়ে চলে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ পর্ব।
একাধিক বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয় ‘বানি’দের। সব সময়ই কঠোর অনুশাসনের মধ্যে থাকতে হয় তাঁদের। যেমন চুইংগাম চিবোনো বা মদ্যপান নিষিদ্ধ। আবার সিগারেটটি কী ভাবে ধরতে হবে, সেই কায়দা নিখুঁত করে রপ্ত করতে হয় তাঁদের।
‘বানি’দের কাজে নেওয়ার আগে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। তাঁরা কোনও যৌনরোগে আক্রান্ত কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হয়।
নিউইয়র্কের প্লেবয় ক্লাবে ‘বানি’ হিসাবে কাজ করেছিলেন গ্রোলিয়া স্টেইনেম। অতীতের সেই অভিজ্ঞতার কথা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, পেশাদার জীবনে ঢোকার পর রোজই তাঁদের ওজন মাপা হত। দেখা হত, তাঁদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কি না।
বিমানসেবিকাদের মুখে যেমন সব সময় হাসি থাকতেই হবে। ঠিক তেমনই সব সময় হাসিমুখ ধরে রাখতে হয় বানিদের। ব্যক্তিজীবনে ঝড়ঝাপটা হলেও তার প্রভাব যাতে তাঁদের চেহারায় না ফুটে ওঠে, সে ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকতে হয়।
১৯৮১ সালে ‘বানি’ বিসাবে কাজ করেছিলেন বিলি উইলসন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যখন আপনি ‘বানি’ হিসাবে কাজ করছেন, আপনার মনে হতেই পারে যে আপনি ছোটখাটো খ্যাতনামী। অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়।’’
‘বানি’দের নিয়ে আগ্রহের নেপথ্যে রয়েছে তাঁদের বেশভূষা। তাঁদের পোশাককে ‘বানি স্যুট’ বলা হয়। প্লেবয় ম্যাগাজিনের লোগোয় একটি খরগোশকে দেখা যায়। তার গলায় বাঁধা থাকে কালো টাই। খানিকটা এর আদলেই ‘বানি’দের পোশাক বানানো হয়। অর্থাৎ, ‘বানি’ স্যুটের মধ্যে থাকে ওই রকম কালো টাই, কলার, কাফ। এমনকি, গুটিপাকানো লেজও থাকে।
‘বানি’দের পোশাক লাস্যময়ী হয়। তবে তাঁরা কোনও গয়না পরতে পারেন না। তাঁদের পোশাক সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। এমনকি, রূপচর্চাতেও নজর দিতে হয়। এক কথায়, নিজের যত্ন নিতে হয় প্রত্যেক ‘বানি’কে।
‘বানি’রা যদি নিয়ম ভাঙেন, তা হলে চাকরি জীবনে বিপাকে পড়তে পারেন তাঁরা। তাই সর্বদা কাজের সময় সতর্ক থাকেন তাঁরা।
বিভিন্ন ধরনের ‘বানি’ হয়। যেমন ‘ডোর বানি’, ‘সিগারেট বানি’, ‘ফ্লোর বানি’, ‘ফাইন ডাইনিং বানি’। ‘বানি’দের স্পর্শ করার অধিকার নেই অতিথিদের। এমনকি, ক্লাবে আগত অতিথিদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো বা তাঁদের সঙ্গে ডেট করা নিষিদ্ধ।
‘বানি’দের দেখভালের জন্য এক জন মহিলাকে রাখা হয়। যিনি ‘বানি মাদার’ নামে পরিচিত। ‘বানি মাদার’-এর ভূমিকা খানিকটা কর্পোরেট অফিসের এইচআরের মতো। ‘বানি’দের ভালমন্দ দেখা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা থাকে। কোন ‘বানি’ কখন ক্লাবে আসবেন, অর্থাৎ শিফট্, সেটাও ঠিক করে থাকেন ‘বানি মাদার’।
ষাটের দশকে যখন প্লেবয় ক্লাব খুলেছিল, সেই সময় যাঁরা ‘বানি’ হিসাবে কাজ করতেন, তাঁরা মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক পেতেন। সেই অঙ্কটা এতটাই বেশি যে, নিজেরাই বাড়ি কিনতে পারতেন বানিরা। তাই বিধিনিষেধ মেনে চলতে হলেও অনেক তরুণীই ‘বানি’ হওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন সেই সময়।