গ্রিন অ্যানাকোন্ডা। ওজন ২৫০ কিলোগ্রামের কাছাকাছি। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভারী এবং দীর্ঘাকৃতি জীবন্ত সাপের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে এটি। এর চেয়ে বেশি ওজনের সাপের দেখা এখনও পর্যন্ত পাননি বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু প্রাচীনকালে এমন একটি সাপের অস্তিত্ব ছিল যা গ্রিন অ্যানাকোন্ডার চেয়ে প্রায় সাড়ে চার গুণ ভারী। এমনকি নীল তিমিকেও প্যাঁচে জড়িয়ে মেরে ফেলার ক্ষমতা ছিল সাপটির। এই দীর্ঘাকৃতি সাপটির নাম টাইটানোবোয়া।
ক্যারিবিয়ান উপকূলের কাছে উত্তর-পূর্ব কলোম্বিয়ার সেরেজন নামে একটি কয়লাখনি রয়েছে। এই খনিটি জীবাশ্মের আকর। কোটি কোটি বছরের পুরনো সামুদ্রিক প্রাণীর জীবাশ্মের খোঁজ পাওয়া যায় এই খনি থেকে।
২০০৯ সালে সেরেজন কয়লাখনিতে খননকার্য চালানো হলে এমন একটি জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া যায় যা দেখে বিস্মিত হয়ে যান বিজ্ঞানীরা। মেরুদণ্ডের আকার দেখে বিজ্ঞানীরা আন্দাজ করেছিলেন যে এই অজানা প্রাণী বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রাণী হিসাবে নজির গড়তে পারে।
বিজ্ঞানীরা জীবাশ্মের ধরন দেখে জানান যে প্রাণীটি সাপের পূর্বসূরি। অ্যানাকোন্ডার এই মেরুদণ্ডি পূর্বসূরির নাম টাইটানোবোয়া। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম টাইটানোবোয়া সেরেজনেনসিস।
জীবাশ্মের পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে টাইটানোবোয়া ছিল ১৩ মিটার বা প্রায় ৪৩ ফুট লম্বা এবং এক মিটার চওড়া।
টাইটানোবোয়ার ওজন আনুমানিক ১১৩৫ কিলোগ্রাম বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় চার থেকে ছয় কোটি বছর আগে এই সাপের অস্তিত্ব ছিল।
ডাঙায় নয়, বেশির ভাগ সময় জলের তলায় থাকত টাইটানোবোয়া। খাদ্য হিসাবে সমুদ্রের বড় মাছ অথবা কুমির খেত সাপটি।
বিজ্ঞানীদের দাবি, নীল তিমিকেও নিজের প্যাঁচে জড়িয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলার ক্ষমতা ছিল টাইটানোবোয়ার।
কিন্তু চার থেকে ছয় কোটি বছর আগে জলের তলায় এই বৃহদাকারের সাপের জন্মই বা হল কী করে? বিজ্ঞানীরা জানান, একাধিক কারণের পাশাপাশি যে এলাকায় তাপমাত্রা যত বেশি সে এলাকায় সাপের দৈর্ঘ্য তত দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে পারে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, কোটি কোটি বছর আগে টাইটানোবোয়া যে পরিবেশে ছিল সে সময় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকত। তাই এই সাপের শরীরী গঠন এত বিশাল।
টাইটানোবোয়ার জীবাশ্মের খোঁজ পাওয়ার আগে পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, একটি সাপ সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কিন্তু টাইটানোবোয়ার খোঁজ পাওয়ার পর সে তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়।
টাইটানোবোয়ার আগে জীবাশ্ম পর্যবেক্ষণ করে যে বৃহদাকার সাপের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল তার নাম জাইগানটোফিস গার্সটিনি।
বিজ্ঞানীরা জানান, আজ থেকে প্রায় চার কোটি বছর আগে উত্তর আফ্রিকায় জাইগানটোফিস গার্সটিনি সাপের অস্তিত্ব ছিল। এই সাপের দৈর্ঘ্য ছিল ৭ মিটার।