এক সময় সূর্যাস্ত হলেই নাচ-গানে মেতে থাকত ওই বজরা। সেই সঙ্গে চলত মদের ফোয়ারা। সঙ্গীদের নিয়ে হুল্লোড়ে মেতে থাকতেন আমেরিকার গ্যাংস্টার আর ক্যাপোন। সবটাই হত আইনের চোখ এড়িয়ে। বলা হত, ওই বজরা ছিল ক্যাপোনের স্বর্গ। আচমকাই হ্রদের জলে ডুবে গিয়েছিল সেই চর্চিত বজরা। যার নাম ‘দ্য কেউকা’।
যে সময় ওই বজরায় মোচ্ছব করতেন গ্যাংস্টার, সেই সময় আমেরিকায় ‘প্রহিবেশন এরা’ (নিষেধাজ্ঞার যুগ) চলছিল। মদ কেনা, আমদানি— সব নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই ওই বজরায় মোচ্ছব করতেন গ্যাংস্টার।
১৮৮৯ সালে তৈরি করা হয়েছিল ওই বজরা। ১৯২৮ সালে সেই বজরার মালিকানা বদল হয়। আর তার পরই ভাসমান নাচের হলে রূপান্তরিত হয় বজরা। সেখানে তৈরি করা হয় একটি পানশালা। রোজ রাতে সেখানে নাচ-গানের আসর বসত। জুয়াখেলাও চলত বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ।
১৯২৯ সাল থেকে ওই বজরায় নিয়মিত যেতেন গ্যাংস্টার ক্যাপোন। ১৯৩২ সালে মিশিগানের লেক শার্লেভক্সে আচমকাই ডুবে গিয়েছিল ওই বজরা। কিন্তু কী ভাবে ডুবল? সেই রহস্যের এখনও কিনারা হয়নি।
মিশিগানের ওই লেকে ডুব দিয়ে সেই বজরার নানা ছবি তুলেছেন ২ ডুবুরি ক্রিস রক্সবার্গ ও লি রোসেনবার্গ। এ নিয়ে তাঁরা তথ্যচিত্র বানিয়েছেন। জলের তলায় বজরার নানা ছবি প্রকাশ্যে এসেছে।
রক্সবার্গ জানিয়েছেন, ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত ওই বজরায় যাতায়াত ছিল গ্যাংস্টার ক্যাপোনের। ওই হ্রদের আশপাশে ক্যাপোনের একটি বাড়ি ছিল। সেই সময় গ্যাংস্টারকে স্থানীয়রা দেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন।
উত্তর মিশিগানের একাধিক এলাকায় গ্যাংস্টারের অনেক গোপন আস্তানা ছিল। ১৯৩২ সালে বজরাটি ডুবে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সেখানে নিয়মিত যেতেন ক্যাপোন।
ওই ২ ডুবুরি জানিয়েছেন, বজরাটি ২০০ ফুট লম্বা। ওই বজরাটি সে সময় চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। মনে করা হত, ওই বজরায় উঠে সকলেই মদ্যপান করতেন। মদ্যপানের জন্য ওই বজরার নামডাক ছিল।
হ্রদের মধ্যিখানে রাখা হত বজরাটি। তা সত্ত্বেও আশপাশের বাসিন্দারা হুল্লোড়ের শব্দ শুনতে পেতেন সেখান থেকে। হ্রদের মাঝে বজরাটি রাখার আরও একটি কারণ ছিল। যে হেতু মদ্যপান নিষিদ্ধ, তাই সহজে যাতে ওই বজরায় পুলিশ হানা না দিতে পারে, সে কারণে সেটি হ্রদের মাঝে রাখা থাকত।
শুধু তা-ই নয়, বজরা থেকে চারদিকে নজরও রাখা হত। যদি পুলিশ হানাও দেয়, তা হলে আগে থেকেই টের পাওয়া যেত। সেই বুঝে বজরায় পুলিশ পৌঁছনোর আগেই গা ঢাকা দেওয়ার সুযোগ থাকত।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও মিশিগানের হ্রদে রাতবিরেতে হুল্লোড় চলত ওই বজরায়। কিন্তু তাল কাটল ১৯৩১ সালের নববর্ষে। বজরাটির ম্যানেজার এড ল্যাথাম গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন। এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল। খুনের পরই বজরায় মদের আসরের আনন্দ ফিকে হতে থাকে।
কী কারণে বজরার ম্যানেজারকে গুলি করে খুন করা হল, তা ধোঁয়াশাই থেকে গিয়েছে। ম্যানেজারের মৃত্যুর এক বছরের মাথায় আচমকা ডুবে যায় ওই বজরা।
১৯৩২ সালের অগস্ট মাসে ডুবে গিয়েছিল ওই বজরা। কী কারণে সেটি ডুবে গেল, সেই রহস্যের কিনারা এখনও হয়নি। এর ব্যাখ্যা কেউই দিতে পারেননি।
এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ‘দ্য নর্দার্ন এক্সপ্রেসে’। তাতে লেখা হয়েছিল, যে দিন বজরাটি ডোবে, তার কয়েক ঘণ্টা আগেও সেটি জলে ভেসেছিল। কিন্তু কিছু একটা ঘটে। যে কারণে আচমকা ডুবে গিয়েছিল সেটি।
এ-ও দাবি করা হয়েছিল যে, বজরাটি অক্ষত ছিল। বজরাটি পুরনো হওয়ার কারণে যে ডুবে গিয়েছিল, তার প্রমাণ মেলেনি। বজরাটি ডুবে যাওয়ার নেপথ্যে কোনও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে জল্পনাও ছড়ায়। তবে এত বছর পরও এই রহস্য কাটেনি। হ্রদের ৫০ ফুট নীচে এই বজরার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই এই বজরা আবার চর্চায়।