১৪ অগস্ট, ২০০৭। ১৫ বছর আগে এই দিনে সর্বকালের চতুর্থ মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলাটি চালানো হয়। এই হামলায় মোট ৭৯৬ জন মারা যান। আহত হন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ।
মনে করা হয় যে, ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরীর সঙ্গে ভিন্ন ধর্মের একটি ছেলের প্রেমই ছিল এই সন্ত্রাসী হামলার কারণ।
চারটি বিস্ফোরক ভরা ট্রাকের হামলায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইরাকের তিল এজার এবং সিবা শেখ খিদির শহর। তবে মূল লক্ষ্য ছিল এই শহরগুলিতে বসবাসকারী ইয়াজিদি সম্প্রদায়।
ইয়াজিদি কুর্দিস্তানের একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। নিজস্ব ধর্মও ছিল এই গোষ্ঠীর— ইয়াজিদিবাদ।
ইরাক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই হামলার কয়েক মাস আগে থেকেই উত্তর ইরাকে ইয়াজিদি এবং সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই এলাকার সুন্নি মুসলিমরা ইয়াজিদিদের ধর্মবিদ্বেষী হিসাবে বিবেচনা করতেন। সুন্নি মুসলিমরা মনে করতেন ইয়াজিদিদের বেশির ভাগ বিশ্বাস এবং অনুশীলন ইসলাম-বহির্ভূত।
একাধিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময়ে এই অঞ্চলে আল-কায়দার তরফ থেকে ইয়াজিদিদের ‘ইসলাম-বিরোধী’ তকমা দিয়ে প্রচারপত্রও বিলি করা হয়।
তবে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে, যখন ১৭ বছর বয়সি দুয়া খলিল আসওয়াদকে ২০০৭ সালের ৭ এপ্রিল ইয়াজিদিরা পাথর ছুড়ে মেরে ফেলে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুয়া এক জন সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলিমের প্রেমে পড়ে। প্রেমিককে যাতে বিয়ে করতে পারেন তার জন্য নাকি ধর্ম পরিবর্তন করতেও রাজি ছিল সেই কিশোরী।
সাংবাদিক মার্ক ল্যাটিমার তাঁর লেখা ‘ফ্রিডম লস্ট’ বইয়ে লিখেছেন, ‘কয়েক জন আমাকে জানান, দুয়া তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছিল। মসুলের বাইরে একটি চেকপয়েন্টে ধরা পড়ে যায় তারা। আবার অনেকে বলেন, পরিবারের ভয়ে তাঁরা থানার দ্বারস্থ হন। পুলিশ দুয়াকে স্থানীয় ইয়াজিদিদের হাতে তুলে দেয় বলেও আমাকে অনেকে বলেছিলেন।’
বাশিকা শহরে এক বিশাল জনতার ভিড় ৩০ মিনিট ধরে পাথর ছুড়ে হত্যা করে দুয়াকে। দুয়াকে পাথর ছুড়ে মারার এই ভয়ানক ভিডিয়ো ইন্টারনেটে পোস্ট করা হয়। এই ভিডিয়ো চোখে পড়ে সুন্নি মুসলিমদের।
এর পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ এবং মাসগুলিতে ওই এলাকার সুন্নি মুসলিমদের রোষের আগুনে পড়েন ইয়াজিদিরা। দুয়ার মৃত্যুর দু’সপ্তাহ পর ২৩ জন ইয়াজিদিকে একটি বাস থেকে জোর করে নামিয়ে গুলি করে মারা হয়।
এর পরেই চালানো হয় সেই ভয়ঙ্কর হামলা। চারটি বিস্ফোরক ভরা ট্রাকের হামলায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইরাকের তিল এজার এবং সিবা শেখ খিদির শহর। হামলার মূল লক্ষ্য ছিল এই শহরগুলিতে বসবাসকারী ইয়াজিদিরা।
অনেকে মনে করেন, ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের উপর হওয়া হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দুয়ার মৃত্যুর ঘটনা।
যদিও কোনও গোষ্ঠী এই বোমা হামলার দায় স্বীকার করেনি। প্রায় দুই টন বিস্ফোরক বোঝাই ট্রাকগুলির বিস্ফোরণে পুরো এলাকা মাটিতে মিশে যায়। পশ্চিমী দেশগুলি এই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করে আল-কায়দাকে।
২০০৭-এর ৩ সেপ্টেম্বর আমেরিকার সামরিক বিমান হামলায় আল-কায়দা নেতা আবু মহম্মদ আল-আফ্রি নিহত হন।
আমেরিকার সামরিক মুখপাত্র মার্ক ফক্স সে সময় বলেছিলেন, ‘‘আবু আর ইরাকের জনগণের জন্য ভয়ের কারণ নন। আমরা ইরাকের জনগণকে আল-কায়দার নৃশংস অত্যাচারের হাত থেকে নিরাপত্তা দেব।’’