কখনও হাতুড়ি দিয়ে দেওয়াল ভাঙছেন। কখনও বা করাত দিয়ে পাইপ কাটছেন। মাঝেমধ্যে আবার ড্রিল মেশিন দিয়ে ছাদ ফুটো করছেন। ভারী বুট আর রংচঙে জ্যাকেট পরা এই তরুণী ঢুকে পড়েছেন তথাকথিত ‘পুরুষালি ময়দানে’। করাত, হাতুড়ি, ড্রিল মেশিন হাতে কেজো ভঙ্গিতেই যিনি ঝড় তুলেছেন টিকটকের মতো সমাজমাধ্যমে।
অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা তেনেইশা মুসুমেচি পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। তবে ২১ বছরের এই তরুণীকে আর পাঁচটা ইলেকট্রিশিয়ানের মতো ভাববেন না যেন। টিকটকে তিনি স্বনামেই পরিচিত। মুসুমেচির দাবি, কেজো পোশাকেও তাঁর মতো এত ‘হট’ ইলেকট্রিশিয়ান আর কেউ নেই।
ছেনি-হাতুড়ি, ড্রিল মেশিন নিয়ে নিত্য দিনের কাজের ভিডিয়োই টিকটকে পোস্ট করেন মুসুমেচি। তাতেও হামলে পড়েন তাঁর অনুরাগীরা। এক-একটি ভিডিয়োয় ভিড় বাড়তে বাড়তে ৫ লক্ষও ছাপিয়ে যায়।
মাঝেমধ্যে দেখা যায়, মুসুমেচি সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে। হাতে উঁচিয়ে ড্রিল মেশিন। তা দিয়েই একমনে কাজ করে চলেছেন। কখনও বা তাঁর কোমরে বেল্ট দিয়ে বাঁধা যন্ত্রপাতি রাখার ব্যাগ। ট্যাটুতে ঢাকা ডান পায়ে প্রায় খোঁচা মারছে ড্রিল মেশিন। বাঁ হাতে ধরা মোবাইলে নিজেকে বন্দি করেছেন মুসুমেচি। তাঁর এমন আপাত ‘রুখাসুখা’ ছবিও সমাজমাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছে।
তিনি যে জনপ্রিয়, তাঁকে নিয়ে যে বিশ্বের নানা ট্যাবলয়েডের পাতায় ভরপুর লেখালেখি হচ্ছে, তাতে কম গদগদ নন মুসুমেচি। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আমি সত্যিই দারুণ গ্ল্যামারাস। কাজের সময় লম্বা ট্রাউজ়ার্স, হাই ভিজ় জ্যাকেট আর ভারী বুট পরতে হয়। তবে হ্যাঁ, (সে সব পোশাকেও) অনেকেই বলেন, ‘আমি খুবই সুন্দরী’ অথবা ‘এ ধরনের কাজের জন্য বেশিই গ্ল্যামারাস’। এ নিয়ে আমি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’
কম বয়স থেকেই ইলেকট্রিশিয়ান হিসাবে কাজ করছেন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পার্থ-এর এই তরুণী। তিনি জানিয়েছেন, ১৯ বছর বয়সে এ পেশায় এসেছিলেন। সে সময় ইলেকট্রিশিয়ান হওয়ার জন্য ছ’মাসের একটি কোর্স করেন তিনি। কিছু দিন কাজ শেখার পর একটি সংস্থায় যোগ দেন।
যে পেশার সিংহভাগই পুরুষদের দখলে, সেখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? মুসুমেচি জানিয়েছেন, ইলেকট্রিশিয়ান হিসাবে কাজ করতে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। তাঁর কথায়, ‘‘এক বার কাজ করার সময় দেখি, এক বৃদ্ধ আমার পরের পর ছবি তুলছেন। আর এক বার তো একটি ছেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পিছনে ধাওয়া করেছিল।’’
নিত্য দিন এ ধরনের অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও ইলেকট্রিশিয়ান হিসাবে কাজেই মন দিয়েছেন মুসুমেচি। সম্প্রতি টিকটকে তাঁর একটি ভিডিয়ো ৫ লক্ষের বেশি জনের মনে ধরেছে। তাঁর পুরুষ অনুরাগীর মতো মহিলারাও তাতে অজস্র সদর্থক মন্তব্যে ভরিয়ে দিয়েছেন।
মুসুমেচিকে কাজ করতে দেখে এক অনুরাগী লিখেছেন, ‘‘মহিলা হিসাবে এ সব দেখে অনুপ্রাণিত হই।’’ অন্য জনের মন্তব্য, ‘‘বিল্ডিং সাইটে মেয়েদের কাজ করতে দেখে কী ভালই যে লাগে!’’
ইলেকট্রিশান মুসুমেচির কাজ করার ভিডিয়ো দেখে অনেকে তাঁকে আবার প্রেম নিবেদন করে ফেলেছেন। এক জন লিখেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, আমি তোমার প্রেমে পড়েছি।’’ আর এক জন তো বলেই ফেলেছেন, ‘‘এই মেয়ে, তোমাকে সারা জীবনের জন্য ভাড়া করতে চাই।’’
এ ধরনের বেশ কিছু মন্তব্যে কম বিরক্ত হন না মুসুমেচি। সংবাদমাধ্যমে তিনি স্পষ্টই বলেন, ‘‘সত্যিই বিরক্ত লাগে। কারণ আমার অন্য সহকর্মীরাও একই পোশাকে কাজ করছেন। তবে তাঁদের সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করা হয় না।’’
মুসুমেচি আরও বলেন, ‘‘এ ধরনের নির্বোধের মতো মন্তব্যের অর্থ বুঝি না। তবে ভাগ্য ভাল যে এ কাজে আরও মেয়ে আসছেন। গত কয়েক বছরে এ পেশায় মেয়েদের ভিড় বাড়ছে।’’
মুসুমেচি জানিয়েছেন, তাঁর সংস্থাতেই অন্তত ১০ জন মেয়ে কাজ করছেন। এমনকি, তাঁর প্রিয় বন্ধুও এ কাজে যোগ দিয়েছেন।
পার্থ-এর মতো শহরে মহিলা হিসাবে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করায় বিশেষ বাধাবিপত্তির মুখোমুখি হননি বলেও জানিয়েছেন মুসুমেচি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, এ শহরে যে কোনও ধরনের কাজে আমাদের উৎসাহিত করা হয়। তা সে যে লিঙ্গপরিচয়ের মানুষই হোন না কেন। ফলে ইলেকট্রিশিয়ান হওয়ার জন্য আমি ছ’মাসের কোর্স করেছিলাম।’’
তাঁর মতো অন্য মেয়েরাও এ পেশা বেছে নিন, এমনই চান মুসুমেচি। তিনি বলেন, ‘‘অন্য মেয়েদেরও এ কাজ করার পরামর্শ দেব। যাতে এই পেশায় মহিলাদের কাজ করাটা আর পাঁচটা কাজের মতোই স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়।’’
কাজ করতে গিয়ে বিরূপ মন্তব্য শুনতে হলেও পিছু না হঠার পরামর্শ দিয়েছেন মুসুমেচি। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের কাজে মন দিলে সহকর্মীরাই আপনার সমর্থনে মুখ খুলবেন। ফলে নিজের প্রতি আস্থা রাখুন।’’