মুম্বই শহরের বিলাসবহুল হোটেল। তার একটি ঘরে স্বল্প পোশাকে টেলি অভিনেত্রী শ্বেতা তিওয়ারি। চোখেমুখে ফুটে উঠছে লাস্যময়তা। বয়স বিয়াল্লিশের গণ্ডি পার করলেও এখনও গ্ল্যামারের ক্ষেত্রে কন্যা পলক তিওয়ারিকে সমানতালে টেক্কা দিয়ে চলেছেন শ্বেতা।
মুম্বইয়ের একটি হোটেলে ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়েছেন শ্বেতা। আলো-আঁধারিতে লাস্যময়ী রূপে দেখা গিয়েছে তাঁকে। পরনে সাদা রঙের সিল্কের ব্রালেট এবং কালো রঙের মিনি স্কার্ট।
গলায় এবং হাতে জড়িয়ে রয়েছে মানানসই জুয়েলারি। মিনি স্কার্টের সঙ্গে ব্রালেটের উপর পরতে দেখা গিয়েছে নামী ব্র্যান্ডের জ্যাকেট। কখনও বা ব্রালেট পরেই নজর কেড়েছেন শ্বেতা।
চার দিন আগেই ইনস্টাগ্রামে নিজের ছবি পোস্ট করেছেন শ্বেতা। ছবির নীচে ক্যাপশন দিয়েছেন ‘হাই উইথ লাইফ।’ জীবন নিয়ে যেন মাতোয়ারা হয়ে রয়েছেন অভিনেত্রী।
ইনস্টাগ্রামে ছবিগুলি পোস্ট করার পর শ্বেতাকে নিয়ে হইচই পড়ে যায় নেটমাধ্যমে। ছোট পর্দার বহু তারকা ছবিগুলিতে ভালবাসা এঁকে দিয়েছেন। তারকাদের পাশাপাশি নেটব্যবহারকারীরাও শ্বেতার নতুন ‘লুক’ দেখে হতবাক।
স্বল্প পোশাকে ধরা দিলেও এই কারণে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন শ্বেতা। ‘শো স্টপার’ ওয়েব সিরিজ়ের প্রচারে ভোপালে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেখানেই বিতর্কিত মন্তব্য করেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রীর মন্তব্য ছিল সহ-অভিনেতা সৌরভ রাজ জৈনকে ঘিরে।
‘মহাভারত’ ধারাবাহিকে কৃষ্ণের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল সৌরভকে। নতুন সিরিজ়ে সৌরভ রয়েছেন দর্জির ভূমিকায়। সেই প্রেক্ষিতে শ্বেতা মন্তব্য করেছিলেন।
কিন্তু মন্তব্য করার পর সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েন শ্বেতা। তুমুল বিতর্কের জেরে ভোপালের শ্যামালা হিলস থানায় এফআইআর দায়ের হয় শ্বেতার বিরুদ্ধে। পুলিশ কমিশনারের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই মামলার রিপোর্ট তলব করেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র।
পরে অবশ্য একটি বিবৃতি জারি করে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন শ্বেতা। অভিনেত্রীর মন্তব্য, ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। বিবৃতিতে শ্বেতা জানান, তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। টেলি অভিনেত্রী বলেন, ‘‘আমি নিজেও ভগবানে বিশ্বাস করি। তাই যা ঈশ্বর বিশ্বাসে আঘাত করে, এমন কিছু আমি জ্ঞানত বা অজ্ঞানত করব না।’’
তবে বরাবর শ্বেতাকে যে ‘হট’ অবতারে দেখা গিয়েছে, তা নয়।দ্বিতীয় বার মা হওয়ার পর শ্বেতার ওজন বেড়ে ৭৩ কেজি হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত ওজনের কারণে কাঁধের সমস্যাতেও ভুগতে শুরু করেন তিনি।
ওজন বাড়তে থাকার সময়েই শ্বেতার কাছে ‘হম তুম অ্যান্ড দেম’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে। সেই ধারাবাহিকে যে চরিত্রের জন্য তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, তার জন্য শ্বেতার ওজন ঝরানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেই মুহূর্তে পলকের উৎসাহে ওজন কমানোর চেষ্টা শুরু করেন শ্বেতা।
২০০১ সালে ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’ হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয়ের মাধ্যমে ছোটপর্দায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন শ্বেতা। প্রেরণা শর্মার চরিত্রে দর্শকের মনে জায়গা করে নেন শ্বেতা। সাত বছর এই ধারাবাহিকে এক টানা অভিনয় করেন তিনি।
একতা কপূরের ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন শ্বেতা। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করে যান তিনি।
খুব কম সময়ের মধ্যে নিজস্ব অনুরাগী মহলও তৈরি করে ফেলেন শ্বেতা। ইতিমধ্যে ইনস্টাগ্রামে অনুরাগীর সংখ্যা ৪৪ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছেন তিনি। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, প্রথম পারিশ্রমিক হিসাবে পাঁচ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন তিনি।
বর্তমানে ধারাবাহিকে প্রতি পর্বে অভিনয়ের জন্য তিন লক্ষ টাকা আয় করেন শ্বেতা। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, অভিনেত্রীর বার্ষিক উপার্জন ১০ কোটি টাকা।
টেলিভিশনজগতে উপার্জনের তালিকায় অভিনেত্রীদের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকলেও শ্বেতারব্যক্তিগত জীবন বরাবর বর্ণময় এবংবিতর্কিত। বিয়ে, প্রেম, সংসার, সন্তান এবং পরকীয়া— পর্দার বাইরে বিপুল সমালোচিত শ্বেতা। তবু নিজের কেরিয়ার থেকে নজর সরেনি তাঁর।মুম্বইয়ের অন্যতম সফল এবং স্বাবলম্বী নায়িকাদের তালিকায় এখনও প্রথম সারিতেই রয়েছেন শ্বেতা।
প্রথম স্বামী রাজা চৌধুরির বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ আনেন শ্বেতা। রাজা এবং শ্বেতার একমাত্র কন্যা হলেন পলক। শ্বেতা এবং রাজার যখন বিবাহবিচ্ছেদ হয়, তখন পলকের বয়স ছিল ৯ বছর।
বিবাহবিচ্ছেদের পর আবার ভালবাসা খুঁজে পান শ্বেতা।কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রেও একই পরিণতি। ২০০৭ সালে রাজার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের বেশ কিছু বছর পর অভিনব কোহলির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন অভিনেত্রী।
২০১৩ সালে অভিনবের সঙ্গে নতুন করে সংসার বাঁধেন শ্বেতা। একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। সেই সময় পলকের বয়স ১৫ বছর।
অভিনবের সঙ্গে বিয়ের পর শ্বেতা যখন দ্বিতীয় বার অন্তঃসত্ত্বা হন, সেই খবর মেনে নিতে পারেননি পলক। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পলক বলেন, ‘‘মা যে অন্তঃসত্ত্বা তা প্রথমে আমি মেনেই নিতে পারিনি। খুবই বিরক্ত হয়েছিলাম। বিষয়টা এমন, যেন মায়ের সঙ্গে আমার একটা চুক্তি হয়েছিল। মা সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছে।’’ পরে অবশ্য শ্বেতার বোঝানোর পর শান্ত হয়েছিলেন পলক।
কিন্তু অভিনবের সঙ্গে সংসারও সুখের হয়নি শ্বেতার। আবার বিবাহবিচ্ছেদ হয় অভিনেত্রীর। পরকীয়া নিয়েও কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন তিনি। ‘কসৌটি জ়িন্দেগি কি’ ধারাবাহিকে শ্বেতার বিপরীতে নায়ক ছিলেন সেজ়ান খান। পর্দার বাইরেও তাঁর সঙ্গে শ্বেতার ঘনিষ্ঠতা এবং গোপন সম্পর্কের গুঞ্জন শুরু হয়েছিল।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই মুক্তি পেয়েছে ‘কিসি কি ভাই কিসি কা জান’। পার্শ্বচরিত্রে দেখা গেলেও এই ছবিতে সলমন খানের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান পলক। এর আগেও অবশ্য অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে পলককে।
হার্ডি সন্ধুর ‘বিজলি বিজলি’ গানের মিউজ়িক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে তাঁকে। ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রোজি: দ্য স্যাফরন চ্যাপ্টার’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায় পলককে। হরর ঘরানার এই ছবি যদিও বক্স অফিস থেকে ভাল ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়।
বলিপাড়ায় আসার আগেই চর্চায় আসে পলকের প্রেমজীবন। বলিপাড়ার অন্দরের খবর, বলিউডের নবাব সইফ আলি খানের পুত্র ইব্রাহিম আলি খানের সঙ্গে নাকি প্রেম করছেন বলিউডের নবাগতা।
একটি নাইট ক্লাবের বাইরে সইফপুত্র ইব্রাহিমের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ক্যামেরাশিকারিদের সামনে মুখ ঢেকে ইব্রাহিমের সঙ্গে গাড়িতে উঠেছিলেন পলক। তবে, তাঁকে চিনতে ভুল হয়নি অনুরাগীদের। ইব্রাহিমের সঙ্গে পলকের ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই কানাঘুষো শোনা যায়, নবাবপুত্রের সঙ্গেই নাকি প্রেম করছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে অবশ্য তার উত্তর এড়িয়ে যান পলক।
তবে কন্যা পলকের প্রেমজীবন নিয়ে সচেতন শ্বেতা। এক সাক্ষাৎকারে পলক বলেন, ‘‘মা মাঝেমাঝে আমাকে লিঙ্ক পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটা কে? এর সঙ্গে তোমার কী সম্পর্ক?’ আমিই তখন মাকে বুঝিয়ে বলি, চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। কারও সঙ্গে আমার কোনও ‘গল্প’ চলছে না। আমার আর মায়ের মধ্যে একটা পোক্ত বিশ্বাসের জায়গা রয়েছে। আমরা দু’জনেই সেই জায়গাটিকে ভীষণ গুরুত্ব দিই।’’
৪২ বছরে পা দিয়েও শ্বেতাকে যে ভাবে লাবণ্য ছড়াতে দেখা গিয়েছে, তা নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছে টেলিভিশনজগতেও। অধিকাংশের মতে, শ্বেতাকে দেখে মনেই হয় না যে তাঁর কন্যা পলকের বয়স ২২ বছর। তবে এই ধরনের মন্তব্যে শ্বেতার কিছু যায় আসে না। আপাতত দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সিঙ্গল মাদার হিসাবেই দিন কাটাচ্ছেন অভিনেত্রী।