তাইওয়ানের বাসিন্দা চাংশু অঙ্কের শিক্ষক। তবে চাংশু আর পাঁচ জন সাধারণ অঙ্কের শিক্ষকের মতো নন। তিনি যে ওয়েবসাইটে অঙ্ক শেখান, তাতে ‘ছাত্র’দের ভিড় বাড়ে রাত গভীর হলে। সেই বিশেষ ছাত্রদের দৌলতে এখন তাঁর বার্ষিক আয় কোটি কোটি টাকা।
দিনের বেলা এক জন সাধারণ অঙ্কের শিক্ষকের মতোই স্কুলে এবং কোচিংয়ে গণিত শেখান চাংশু। মাধেমধ্যে অনলাইন ক্লাসও করেন।
কিন্তু রাতে চাংশুকে অঙ্ক শেখাতে দেখা যায় দুষ্টু ছবির ওয়েবসাইটে! হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই ওয়েবসাইটে গিয়ে অঙ্কের ক্লাস নেন তিনি।
প্রাপ্তবয়স্কদের ওয়েবসাইটে নিত্যদিন ক্যালকুলাস সূত্র শেখান চাংশু। ওয়েবসাইটগুলিতে দুষ্টু ছবি দেখতে যাওয়া মানুষেরা গণিতের ক্লাস নেন তাঁর কাছে।
অন্যান্য ওয়েবসাইটে আনাগোনা থাকলেও চাংশুর কাছে বেশি ক্লাস করেন ওই বিশেষ ওয়েবসাইটে ‘ছাত্র’রাই।
কিন্তু কেন অঙ্ক শেখানোর জন্য পর্নহাবের মতো ওয়েবসাইটের উপর ভরসা করেছেন চাংশু? তাঁর দাবি, নীল ছবির সাইটগুলিতে রোজ যত পড়ুয়া ভিড় জমায় যে স্কুলে বা কোচিং সেন্টারে তত ছাত্র হয় না।
আর তাই একসঙ্গে অনেক পড়ুয়াকে অঙ্ক শেখাতে এই উপায় অবলম্বন করেছেন চাংশু। দুষ্টু ছবির সাইটে গিয়ে অঙ্কের প্রশিক্ষণ ভিডিয়ো পোস্ট করার পিছনে আরও একটি উদ্দেশ্য অবশ্য আছে তাঁর।
আসলে এই ওয়েবসাইটগুলিতে অঙ্ক শেখানোর ভিডিয়ো পোস্ট করে চাংশুর বিপুল আয় করেন। এই ওয়েবসাইটে অনলাইন ক্লাস করানোর জন্য তিনি বছরে প্রায় তিন কোটি টাকা আয় করেন।
চাংশুর কথায়, ‘‘খুব কম লোকই প্রাপ্তবয়স্কদের ওয়েবসাইটে গিয়ে অঙ্ক শেখানোর কথা ভাবতে পারেন। যে হেতু ওই ওয়েবসাইটগুলিতে অনেক লোকের আনাগোনা, তাই আমি ভেবেছিলাম যে যদি ওই সব ওয়েবসাইটে প্রশিক্ষণ ভিডিয়ো আপলোড করি তা হলে অনেক লোক সেই ভিডিয়ো দেখবে।’’
চাংশু আরও বলেন, “আমি শুধু একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গণিত শেখাতে চাইনি। আমি বিশ্বকে জানাতে এ-ও জানাতে চেয়েছিলাম যে আমি তাইওয়ানের এক জন শিক্ষক, যে ভাল ভাবে ক্যালকুলাসের সূত্র শেখাতে পারে।’’
এই সব ওয়েবসাইটে তাঁর প্রশিক্ষণ থেকে আকৃষ্ট হয়ে দেশ-বিদেশের বহু ছাত্র চাংশুর সঙ্গে অনলাইনে ক্লাস করার জন্যও যোগাযোগ করেন। এর ফলে তাঁর আয় আরও বেড়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
তবে অনেক ওয়েবসাইট থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছে চাংশুকে। দুষ্টু ছবি আপলোড না করে অঙ্কের ভিডিয়ো পোস্ট করার অভিযোগে তাঁকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তাড়ানোও হয়েছে। ব্যতিক্রম একটি ওয়েবসাইট।
ওই ওয়েবসাইটে চাংশুকে যে শুধু ভিডিয়ো আপলোড করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে তাই নয়, খাতির করে সাইটের সদস্যপদও দেওয়া হয়েছে। চাংশুর অ্যাকাউন্টে এখন সেই ওয়েবসাইটের প্রতীক জ্বলজ্বল করে।
ওই ওয়েবসাইটে চাংশুর প্রোফাইলে লেখা আছে, ‘ভাল ভাবে খেলো। ভাল ভাবে পড়াশোনাও করো।’
মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নিজের আপলোড করা ভিডিয়োগুলিতে তিনি কোনও দুষ্টু ছবি ব্যবহার করেন না বলেও জানিয়েছেন চাংশু।
দুষ্টু ওয়েবসাইটের বিশ্বাসযোগ্য শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি অঙ্কের শিক্ষক হিসাবে তাইওয়ানেও তিনি নাম কুড়িয়েছেন।
চাংশু জানিয়েছেন, তিনি যা উপার্জন করেন তাতে চাইলে দামি বাড়ি-গাড়ি কিনতে পারেন। কিন্তু তিনি সাধারণ জীবনযাপনে বিশ্বাসী। তাই তিনি খুব সাধারণ ভাবেই জীবন কাটান বলেও চাংশুর দাবি।