শীঘ্রই ভারতে ফেরানো হবে তাহাউর হুসেন রানাকে। ২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত রানা। দিন কয়েক আগেই সংসদে এ কথা জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জানিয়েছিলেন, রানাকে ভারতে এনে বিচার চালানো হবে। তার পরেই রানার উপর নজর রাখতে শুরু করেছে পাকিস্তান। এমনটাই খবর।
সূত্রের খবর, লস অ্যাঞ্জেলসে নিজেদের দূতাবাসকে রানার উপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান। রানা এখন লস অ্যাঞ্জেলসের জেলে রয়েছেন।
লোকসভায় অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, দেশে সন্ত্রাসবাদী এবং কট্টরপন্থীদের রসদ বন্ধ করতে উদ্যত হয়েছে মোদী সরকার। সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের জন্য সব রকম চেষ্টা করছে কেন্দ্র। নেতৃ্ত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (পিএফআই)-কেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের গতিবিধি বন্ধ করতে ৯০টি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে।
শাহ এ-ও জানিয়েছেন, লন্ডন, সান ফ্রান্সিসকো, এটাওয়াতেও সক্রিয় রয়েছে এনআইএ। সেখানে তদন্ত চালাচ্ছে তারা। এই সূত্রেই শাহ জানিয়েছেন, শীঘ্রই ভারতীয় আদালতে বিচার চলবে মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত রানার।
সূত্রের খবর, এর পরেই ভীত হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। ১৪ অগস্ট থেকে সে দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মাধ্যমের উপর নজর রেখেছিলেন গোয়েন্দারা। একটি ফাঁস হওয়া ইমেল থেকে জানা গিয়েছে, রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের যে মামলা আমেরিকায় চলছে, তার উপর নজর রাখছে পাকিস্তান।
নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানের কনসাল জেনারেলকে বলা হয়েছে, রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের মামলার উপর নজর রাখতে। রানা এখন কী আবেদন করছেন, মামলা কোথায় গড়াতে পারে, তা-ও নজর রাখতে বলা হয়েছে।
গত মে মাসে আমেরিকার আদালত রায় দিয়েছিল, মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা যাবে। এই রায়ের বিরুদ্ধে গত জুনে হেবিয়াস কর্পাস মামলা করেছিলেন রানা।
সেই হেবিয়াস কর্পাসও খারিজ করেছে আমেরিকার এক আদালত। এর ফলে রানাকে ভারতে আনার পথ আরও প্রশস্ত হয়েছে। এ বার আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন রানাকে ভারতে পাঠানোর নির্দেশিকা জারি করতে পারবেন।
১০ অগস্ট রানার হেবিয়াস কর্পাস খারিজ করে বিচারক ডেল এস ফিশার জানিয়েছেন, ভিন্ন একটি রায়ে এই আবেদন খারিজ করা হল।
তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে ফের আবেদন করতে পারেন রানা। যত ক্ষণ না নবম সার্কিট আদালতে সেই আবেদনের শুনানি না হচ্ছে, তত ক্ষণ ৬২ বছরের রানাকে ভারতে আনা যাবে না।
২০২০ সালের ১০ জুন রানাকে গ্রেফতারির দাবি তুলে এবং তাঁকে দেশে ফেরানোর দাবি জানিয়ে আবেদন করেছিল ভারত। বাইডেন প্রশাসন রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিল।
১৬ মে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার জেলা আদালত রানাকে ভারতে ফেরানোর নির্দেশ দেয়। বিচারক জ্যাকলিন চুলিজিয়ান রায় দিয়ে জানিয়েছিলেন, রানাকে প্রত্যর্পণের পক্ষে এবং বিপক্ষে যত নথি পেশ করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখেছে আদালত। তার পরেই তাঁকে ভারতে প্রত্যর্পণের বিষয়ে সায় দেওয়া হল।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ধারাবাহিক হামলায় কেঁপে ওঠে মুম্বই। ৬০ ঘণ্টা ধরে বাণিজ্যনগরীর গুরুত্বপূ্র্ণ জায়গায় হামলা চালায় ১০ জঙ্গি। নেপথ্যে ছিল পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবা। মারা গিয়েছিলেন ১৬৬ জন।
ওই হামলার তদন্ত করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। হামলায় রানার ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে তারা। এনআইএ জানিয়েছে, কূটনৈতিক মাধ্যমে রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের বিষয়ে উদ্যোগী তারা।
এনআইএ-র অভিযোগ, মু্ম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত ডেভিড কোলম্যান হেডলির ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে মিলেই মু্ম্বই হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন রানা। সাহায্য করেছিলেন লস্কর জঙ্গি গোষ্ঠীকে।
রানার জন্ম পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে। ১৯৬১ সালে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চিকিৎসক ছিলেন তিনি। পরে কানাডায় চলে যান। সেখানে নাগরিকত্ব নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
কলেজে পড়ার সময়ই হেডলির সঙ্গে পরিচয় রানার। তখন হেডলির নাম ছিল দাউদ গিলানি। পরে এই গিলানির সঙ্গেই মুম্বই হামলার ছক কষেছেন বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত রানাকে ভারতে এনে বিচার কি চালাতে পারবে ভারত? সেই পথ ক্রমেই প্রশস্ত হচ্ছে বলেই মত একাংশের। তবে পাকিস্তানও যে একেবারে চুপ করে বসে থাকবে না, তা-ও মনে করছে গোয়েন্দাদের একাংশ। সে কারণেই রানার মামলার উপর রাখছে নজর।