একটা নিশ্চিত রান আউট হাত ছাড়া! তার পর ১৮তম ওভারে বল করতে দেওয়া হয় রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। রবিবার রাতে রোহিত শর্মার এই জোড়া ভুলেরই কি মাসুল দিল টিম ইন্ডিয়া? কেন না রোহিত নিজেই বলেছেন, ‘‘আমরা ভালই লড়ছিলাম। কিন্তু আমরা আগের দিনগুলোর মতো ফিল্ডিং করতে পারিনি। আমিও একটা ভুল করেছি।’’
রোহিত যদিও আর কোনও ভুলের কথা বলেননি। তবু ১৮তম ওভারে স্পিনার অশ্বিনের বলে পর পর দুটো ছক্কার স্মৃতি ভুলতে পারছেন না ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। বস্তুত মিলারের ওই দুই ছক্কাতেই ম্যাচের ফল নিশ্চিত হয়ে যায়।
পার্থের পিচে সকাল থেকেই বাউন্স ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা প্রথমার্ধে এক রকম রাজত্ব করেছেন সেখানে। যার ফল হাতে নাতে পেয়েছে ভারত। ১৩৩ রানে থেমে যেতে হয়েছে তাদের। সেটুকুও হত না যদি সূর্যকুমার যাদব রান না পেতেন। তার পরও যখন ক্রিজে ডেভিড মিলার দাপটে ব্যাট চালাচ্ছেন, শেষের দিকের ওভারে কেন পেসারকে আনা হল না, তা ভেবে পাচ্ছেন না ক্রিকেটপ্রেমীরা। ম্যাচ নিয়ে এই কাটাছেঁড়া করতে বসে এই স্কোরকার্ড তৈরি করেছে আনন্দবাজার অনলাইন। টিম ইন্ডিয়ার পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে কেটে নেওয়া হয়েছে নম্বর।
কেএল রাহুল— ১ পেয়েছেন । ৯ নম্বর কেটে নেওয়ার কারণ, ওপেন করতে নেমে ১৪ বলে ৯ রান করেছেন। এ বারের বিশ্বকাপে একেবারেই ফর্মে নেই। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচেও তা প্রমাণ হল।
রোহিত শর্মা— পেয়েছেন ৩। নম্বর কাটা গেছে ৭। রান আউটের সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন। এডেন মার্করাম তখন আউট হয়ে গেলে খেলার ফল অন্য রকম হতেই পারত। ব্যাট হাতেও ব্যর্থ। ১৪ বলে ১৫ রান করেন।
বিরাট কোহলি— প্রাপ্ত নম্বর ২। বাদ গেল ৮ নম্বর। ব্যাট হাতে ব্যর্থ। আগের দু’টি ম্যাচে দুরন্ত ছন্দে থাকলেও এই ম্যাচে ১১ বলে ১২ রান করেন। রোহিতের মতোই ফিল্ডিং করতে নেমে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। তিনি মার্করামের ক্যাচ ফেলে দেন।
সূর্যকুমার যাদব— পেয়েছেন ৭ নম্বর। কাটা গিয়েছে ৩ নম্বর। কারণ ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে একমাত্র তিনিই এই ম্যাচে রান পেয়েছেন। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৪০ বলে ৬৮ রান করে তিনি বিপক্ষ শিবিরে লড়াই পৌঁছে দেন। নম্বর কাটা গেল কারণ, সূর্যের ওই ইনিংস শেষ পর্যন্ত ভারতকে জেতাতে পারেনি।
দীপক হুডা— পেয়েছেন ০। কাটা গিয়েছে ১০ নম্বর। তাঁকে এই ম্যাচে প্রথম খেলানো হল অক্ষর পটেলের জায়গায়। কিন্তু তাঁকে কেন খেলানো হল, তার ব্যাখ্যা কারও কাছে নেই। ব্যাট হাতে কোনও রানই পাননি। তাঁকে বল করতেও দেওয়া হয়নি।
হার্দিক পান্ড্য— পেয়েছেন ২। কাটা গিয়েছে ৮ নম্বর। মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে ব্যর্থ। ৩ বলে ২ রান করেন। তবে বল হাতে কিছুটা হলেও সফল। ৪ ওভার বল করে ২৯ রান দিয়ে তুলে নেন মার্করামের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
দীনেশ কার্তিক— ১ পেয়েছেন। ৯ নম্বর কেটে নেওয়া হয়েছে। এ বারের বিশ্বকাপে ফিনিশার কার্তিককে একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। এই ম্যাচও তার ব্যতিক্রম নয়। ১৫ বল খেলে মাত্র ৬ রান করেন। উইকেট রক্ষাও পুরোপুরি করতে পারেননি। চোট পেয়ে বেরিয়ে যেতে হয় তাঁকে।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন— ১ নম্বর পেয়েছেন। এঁর ৯ নম্বর কাটা গিয়েছে। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সব থেকে ব্যর্থ তিনিই। ৪ ওভারে ৪৩ রান দেন। শেষ ওভারে একটি উইকেট নেন। ব্যাট হাতেও ব্যর্থ। ১১ বলে ৭ রান করেন।
ভুবনেশ্বর কুমার— ২ পেয়েছেন। ৮ নম্বর কাটা গিয়েছে। কোনও উইকেট পাননি। কম রান হাতে নিয়ে নামলে শুরুতে বোলারদের উইকেট তুলে নিতে হয়। ভুবি ঠিক সেই কাজটাই করতে ব্যর্থ।
মহম্মদ শামি— ইনিও ২ পেয়েছেন। ৮ নম্বর কেটে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে আউট করেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার আর কোনও উইকেট নিতে পারেননি। ৪ ওভারে ১৩ রান দেন।
আরশদীপ সিংহ— ৫ পেয়েছেন। ৫ নম্বর কাটা গিয়েছে। প্রথম বলেই উইকেট নেওয়াটা নিয়মে পরিণত করে ফেলেছেন আরশদীপ। পাকিস্তান ম্যাচের পর এই ম্যাচেও নিজের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন এই পেসার। সেই ওভারে আরও একটি উইকেট তুলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শুরুতেই প্রয়োজনীয় ঝটকা দেন। কিন্তু পরের তিন ওভারে আর উইকেট নিতে পারেননি।
তবে পর পর দু’ম্যাচে কোহলির পারফরম্যান্স দেখে তাঁকে নিয়ে আশা বেড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচেও। বলা যায় ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা কোহলিকে আবার জ্বলে উঠতে না দেখে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছেন। বিশেষ করে অশ্বিনের বলে মার্করামের সহজ ক্যাচ ফেলে রবিবারের ম্যাচে দর্শকদের সবচেয়ে বড় হতাশার জায়গা তৈরি করেছেন তিনিই।