একজন তাঁর ট্রফির বাগানে সেরার সেরা ট্রফিটি সাজাতে ব্যাকুল। তিনি ফুটবলের আধুনিক ‘ঈশ্বর’। তিনি লিয়োনেল মেসি। অন্য জনের সামনে পেলের রেকর্ড ছুঁয়ে দেখার হাতছানি। তিনি এই বিশ্বকাপের ‘টর্নে়ডো’। ২৩ বছরের ঝকঝকে ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপে। তবে দু’জনেরই স্বপ্নপূরণের রাশ আপাতত একজনের হাতে— পোল্যান্ডের সাইমন মার্সিনিয়াক। তিনিই এই বিশ্বকাপের ফাইনালে মেসি-এমবাপেদের নিয়ন্ত্রণ করবেন।
আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্সের ম্যাচে রেফারি হতে চলেছেন মার্সিনিয়াক। ৪১ বছর বয়সের এই টানটান নির্মেদ চেহারার মানুষটি এই বিশ্বকাপেরই আরও দু’টি ম্যাচ খেলিয়েছেন।
গ্রুপ লিগে ফ্রান্স এবং ডেনমার্কের ম্যাচে রেফারি ছিলেন মার্সিনিয়াক। আবার প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচও খেলিয়েছিলেন তিনিই।
এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার রেফারি-ভাগ্য বেশ গোলমেলে। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে তাদের ম্যাচে বিতর্কের জেরেই শেষমেশ বাড়ি ফিরতে হয়েছিল রেফারি মাতেউ লাহোজেকে।
ওই ম্যাচে ১৫টি হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন মাতেউ। যার মধ্যে মেসি-সহ আর্জেন্টিনার ৮ জন ফুটবলার হলুদ কার্ড দেখেছিলেন। নেদারল্যান্ডসের ফুটবলাররা দেখেছিলেন ৭টি হলুদ এবং ১টি লাল কার্ড। ওই ম্যাচে মেসির সঙ্গেও তর্কাতর্কি হয়েছিল মাতেউয়ের। পরে সাংবাদিক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রেফারি বাছা নিয়ে ফিফার কাছে প্রকাশ্যেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ক্যাপ্টেন। যার ফল আসে হাতে নাতে।
মার্সিনিয়াকের রেকর্ডে অবশ্য এমন বিতর্ক নেই। এ পর্যন্ত নিজের কেরিয়ারে ২০০টিরও বেশি ফুটবল ম্যাচ খেলিয়েছেন এই পোলিশ রেফারি। ম্যাচের সুবিচারক হিসাবে পোল্যান্ডের রেফারিদের মধ্যে তাঁর নম্বর বেশির দিকেই।
সাইমন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন না। ২১ বছর বয়স থেকেই ম্যাচ রেফারি হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। তবে তার পাশাপাশি অ্যামেচার ফুটবলার হিসাবে খেলতেন। কিন্তু ২০০৬ সালে ২৫ বছর বয়সে পুরোপুরি পেশাদার রেফারি হিসাবেই কাজ শুরু করেন।
ফিফার তালিকাভুক্ত রেফারি হিসাবে তাঁর নাম ওঠে ২০১১ সালে। তার পর থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে রেফারি হওয়ার জন্য তাঁকে বেছে নিয়েছে ফিফা। যেমন বেছে নেওয়া হয়েছে বিশ্বকাপের ফাইনালের ম্যাচের জন্যও।
এর আগে ২০১৪-র বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে রেফারি হয়েছেন মার্সিনিয়াক। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগের ম্যাচেও রেফারি ছিলেন তিনি। সে বার জার্মানি-সুইডেন এবং আর্জেন্টিনা-আইসল্যান্ড ম্যাচ খেলিয়েছিলেন।
জার্মানি ম্যাচ জিতেছিল, ড্র হয়েছিল আর্জেন্টিনার ম্যাচ। যদিও মেসিরা একটি পেনাল্টি এবং তিনটি ফ্রি কিক পেয়েছিলেন ওই ম্যাচে।
২০২২ সালের বিশ্বকাপে মার্সিনিয়াকের রেকর্ড কেমন? শেষ ১৬-র আর্জেন্টিনা-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিলেন মেসিরা। গ্রুপ লিগে ফ্রান্স-ডেনমার্কের ম্যাচের ফলও ছিল ২-১।
আর্জেন্টিনার ম্যাচে একটি পেনাল্টি হয়েছিল। দু’টি হলুদ কার্ড দেখেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলার। মেসি পেনাল্টি থেকে গোল হয়।
ফ্রান্সের ম্যাচে কোনও পেনাল্টি হয়নি। দু’টি গোল দেন এমবাপে। হলুদ কার্ড দেখেছিলেন তিন জন ফুটবলার।
দু’টি ম্যাচেই মোট পাঁচটি হলুদ কার্ড দেখালেও কোনও লাল কার্ড দেখাননি মার্সিনিয়াক। তবে বিশ্বকাপের ফাইনালে তিনি কী করতে চলেছেন আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে দু’দেশের সমর্থকেরা।
ফাইনাল ম্যাচের জন্য মার্সিনিয়াককে বেছে নিয়েছেন ফিফা রেফারি কমিটির চেয়ারম্যান পিয়ারলুইগি কলিনা।
মার্সিনিয়াকের সহকারী হিসাবে ওই ম্যাচে থাকবেন পাভেল সকলনিকি এবং টমাস লিস্টকিউইচ। চতুর্থ রেফারি হিসাবে থাকবেন আমেরিকার ইসমাইল এলফাথ। আর ভার-এর প্রধান রেফারি থাকছেন মার্সিনিয়াকের দেশেরই টমাস কিয়াতকোস্কি। তবে আসল বাঁশি থাকবে সাইমনেরই হাতে।
ইউরোপীয় ফুটবল ভক্তরা মার্সিনিয়াককে ভাল করে চেনেন। বহু হাই ভোল্টেজ ম্যাচে রেফারি ছিলেন তিনি। সেই সব ম্যাচে ফুটবলারদের মাঠ থেকে বের করে দেওয়ার নজিরও আছে তাঁর।
বড় ম্যাচে হেডস্যর সাইমনের কড়া শাসনের শিকার হয়েছেন ইরানের মেহদি তারেমি, জার্মানির জেরমি বোয়াতেং-সহ অনেকেই। রবিবার বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে মেসি-এমবাপেদের পাশাপাশি নজর থাকবে মার্সিনিয়াকের দিকেও।