Syrian Army

দামাস্কাসের পতন হতেই পড়িমরি দৌড়! ‘আরব্য রজনী’র দেশে ঢুকল হাজার হাজার সিরিয়ান সৈনিক

বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনে সিরিয়ার সরকারি সেনাবাহিনীর মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। আর তাই প্রাণভয়ে ইরাকে আশ্রয় নিচ্ছেন হাজার হাজার ফৌজি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:২৫
Share:
০১ ১৬

রাতারাতি ক্ষমতার হাতবদল। সরকার ফেলে রাজধানীর দখল নিয়েছে বিদ্রোহীদের দল। প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। এই অবস্থায় কার ভরসায় লড়বেন সৈনিকেরা? এ বার তাঁদের মধ্যেও ছড়াল আতঙ্ক। ফলে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী ‘আরব্য রজনী’র দেশে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন হাজারে হাজারে ফৌজি। এতে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।

০২ ১৬

চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন ঘটায় বিদ্রোহী বাহিনী। রাজধানী দামাস্কাসে ঢুকে পড়ে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ লুট করেন তাঁরা। তড়িঘড়ি বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেন আসাদ। আর সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর অফিসার ও জওয়ানদের মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে পড়ে যায় হুড়োহুড়ি।

Advertisement
০৩ ১৬

ইজ়রায়েলি সংবাদ সংস্থা ‘দ্য টাইমস্ অফ ইজ়রায়েল’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্রোহীরা দামাস্কাসের দখল নেওয়ার পর সিরিয়ার হাজার হাজার সৈনিক ইরাকে আশ্রয় নিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই চার হাজারের বেশি ফৌজি সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশটিতে ঢুকেছেন বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন বাগদাদের সেনাকর্তারাও।

০৪ ১৬

ইরাকের আনবার ট্রাইবাল মোবিলাইজ়েশন ফোর্সের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, সিরিয়া থেকে আসা সৈনিকেরা তাঁদের গোলা-বারুদ ও হাতিয়ার নামিয়ে রেখেছেন। ইরাকি সেনার হাতে তুলে দিয়েছেন সাঁজোয়া গাড়ি। তাঁদের একটি ক্যাম্পে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পটির অবস্থান অবশ্য বাগদাদের তরফে স্পষ্ট করা হয়নি।

০৫ ১৬

এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন ইরাকের আর এক নিরাপত্তা আধিকারিক। তাঁর কথায়, ‘‘৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে সিরিয়ার হাসাকহ্ প্রদেশের গভর্নর সেনাবাহিনীর একটি কনভয় নিয়ে সীমান্তে চলে আসেন। ইরাকে ঢোকার অনুমতি চান তাঁরা। তাঁদের কাইম ক্রসিং দিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’’

০৬ ১৬

এককালের শত্রু ইরানের সঙ্গে বর্তমানে ইরাকের সুসম্পর্ক রয়েছে। আসাদ সরকারের বড় সমর্থকও ছিল বাগদাদ। কিন্তু, বিদ্রোহীরা দামাস্কাসের দিকে এগোতে শুরু করলে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেয় তারা। গত ১৩ বছর ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধেও সে ভাবে নাক গলায়নি বাগদাদ।

০৭ ১৬

রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার দফতরের হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশারকে দায়ী করেছেন। এর জন্য তাঁর বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত এই বিচার শুরু হলে তার আওতায় যে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্তাদের নাম আসবে, তা বলাই বাহুল্য।

০৮ ১৬

তুর্ক বলেছেন, ‘‘২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যাবতীয় যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়া উচিত। এর জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশারকেই জবাবদিহি করতে হবে। গৃহযুদ্ধের জন্য হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরছাড়া হয়েছেন আরও কয়েক হাজার বাসিন্দা।’’

০৯ ১৬

সিরিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিসি) মানত্য দেয়নি। বিদ্রোহীদের হাতে বাশার সরকারের পতনের জেরে এ বার দামাস্কাস সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে বলে মনে করছেন ভলকার তুর্ক। তখন সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ওঠা ‘যুদ্ধাপরাধ’ সংক্রান্ত অভিযোগের বিচার করা সহজ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

১০ ১৬

অন্য দিকে বাশার সরকারের পতনের সুযোগ নিয়ে প্রতিবেশী দেশটির বিস্তীর্ণ জমি কব্জা করার দিকে এগোচ্ছ ইজ়রায়েল। ইহুদি ফৌজের অগ্রগতি দেখে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে নতুন করে ওই এলাকায় যুদ্ধ বাধার আশঙ্কা রয়েছে।

১১ ১৬

কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জ়াজ়িরার রিপোর্ট অনুযায়ী, গোলান মালভূমি (গোলান হাইটস্ নামে পরিচিত) পেরিয়ে ইতিমধ্যেই দক্ষিণ সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। ১০ ডিসেম্বর থেকে প্রতিবেশী দেশটির বিমান ও নৌঘাঁটির উপর লাগাতার বিমানহানা চালিয়েছে তেল আভিভ। এ বার ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’-এর মাধ্যমে সেখানকার জমি দখল শুরু করেছে ইহুদি সেনা।

১২ ১৬

ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার জানিয়েছে, সিরিয়ায় সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা প্রতিরোধে একটি ‘নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল’ গঠন করা হবে। আর তা হবে সিরিয়ার ভূখণ্ডে। ইহুদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজ়রায়েল কাট্জ় আবার বলেছেন, ‘‘‘কোনও জঙ্গিগোষ্ঠী যাতে সিরিয়ার মাটি ব্যবহার করে আমাদের উপর হামলা চালাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে আমরা সীমান্ত বরাবর একটি ‘নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল’ (বাফার জ়োন) গড়ব।’’

১৩ ১৬

সিরিয়ার বাশার সরকার উৎখাতের নেপথ্যে মূলত ভূমিকা রয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ বা এইচটিএসের। ‘জইশ আল-ইজ্জা’ নামের আর একটি সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নিয়ে যৌথবাহিনী গড়ে তোলে তাঁরা। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, গোলান মালভূমি পেরিয়ে আইডিএফের দামাস্কাসের দিকে অগ্রগতি এইচটিএসের আধিপত্যকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

১৪ ১৬

লন্ডনভিত্তিক যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান ‘সিরিয়ান অবজ়ারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’ (এসওএইচআর) জানিয়েছে, ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ৪৮ ঘণ্টায় সিরিয়া জুড়ে পাঁচ শতাধিক বিমানহানা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। হামলায় দামাস্কাসের গুরুত্বপূর্ণ সেনা শিবির, প্রতিরক্ষা গবেষণাগার এবং সামরিক কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

১৫ ১৬

এ ছাড়া আইডিএফের বিমানবাহিনী বিমানবন্দর, অস্ত্র ও গোলাবারুদের ভান্ডার, রাডার স্টেশন, সামরিক সিগন্যাল স্টেশন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও গণবিধ্বংসী অস্ত্রের গবেষণাগার উড়িয়েছে বলে খবর এসেছে। ফলে এইচটিএস বাহিনী কত ক্ষণ দামাস্কাসকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

১৬ ১৬

এই পরিস্থিতিতে সিরিয়ার সৈনিকদের একাংশ ইরাকে আশ্রয় নেওয়ায় প্রমাদ গুণছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের অনুমান, ভবিষ্যতে এই ফৌজিদের সাহায্যে ফের সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে ইরান, ইরাক ও রাশিয়া। পশ্চিম এশিয়ার দেশটির বেশ কিছু এলাকা এখনও আসাদ অনুগত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাঁদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিতে এই বাহিনীকে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন তাঁরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement