Syria Civil War

জমি হারাচ্ছে সেনা, আসরে মস্কোও! ক্ষমতা হারানোর আগে গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত দেশে মরণকামড় বাইডেনের?

সিরিয়ার আলেপ্পো শহর বিদ্রোহীদের দখলে যেতেই সক্রিয় রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট আসাদকে সাহায্য করতে সেখানে বিমানহানা চালিয়েছে মস্কো।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:২৪
Share:
০১ ২১

কথায় আছে, নদীর এক পার ভাঙে তো অন্য পার গড়ে। পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধও যেন তা-ই। এক দিক শান্ত হতে না হতেই অন্য প্রান্তে শুরু কামানের গর্জন! আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভারী বুটের দাপাদাপি! নতুন ফ্রন্টে আরম্ভ হওয়া এই সংঘাতের আঁচে গৃহযুদ্ধে দীর্ণ আরবভূমির মাটি যে রক্তে ভিজবে, তা বলাই বাহুল্য।

০২ ২১

সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো। এ বার সেখানেই বিমানহানা চালাল রুশ বায়ুসেনা। হামলার কথা স্বীকার করেছে মস্কো। ২০১৬ সালের পর সিরিয়ায় আর কখনওই এত বড় আক্রমণ শানায়নি ক্রেমলিন। এর জেরে ভূমধ্যসাগরের তীরের দেশটিতে গৃহযুদ্ধ আরও ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

Advertisement
০৩ ২১

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যথেষ্ট সুসম্পর্ক রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন হঠাৎ মস্কোর যুদ্ধবিমান হামলা চালাল আলেপ্পোয়? এর নেপথ্যে একাধিক কারণের কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞেরা। পাশাপাশি, সেখানে গত ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ থামার যে নামগন্ধ নেই, এই ঘটনায় তা এক রকম স্পষ্ট হয়েছে।

০৪ ২১

পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিতে একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে। এঁদের মধ্যে ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাঁদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’ নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আলেপ্পো দখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেও সেই আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হয় আসাদের ফৌজ। এর পরই আসরে নামে রাশিয়া।

০৫ ২১

২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন আসাদ। অভিযোগ, কুর্সিতে বসা ইস্তক তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে উঠেপড়ে লেগেছে আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণ মদত দিয়ে চলেছে প্রতিবেশী ইজ়রায়েল এবং তুরস্ক। অন্য দিকে, প্রথম থেকে আসাদকে সমর্থন করে আসছেন পুতিন। তাঁর কাঁধে ভর করেই পশ্চিম এশিয়ায় নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে চায় মস্কো।

০৬ ২১

চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর আলেপ্পো পতনের খবর প্রকাশ্যে আনে আসাদের হাতে থাকা সিরিয়ার সরকারি ফৌজ। একটি বিবৃতিতে তারা জানায়, টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে লড়াই চালিয়েও শহরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা যায়নি। দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০০ সেনা। প্রাণ গিয়েছে অসংখ্য বিদ্রোহী এবং অসামরিক নাগরিকের।

০৭ ২১

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলেপ্পোর বিমানবন্দরের দখল নিয়েছে বিদ্রোহীরা। পাশাপাশি, তুরস্কের মদতপুষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’ (এসএনএ)-র নিয়ন্ত্রণে থাকা ইদলিব প্রদেশ থেকেও নতুন করে সংঘর্ষের খবর আসতে শুরু করেছে। এইচটিএস বিদ্রোহীরা সে দিকে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

০৮ ২১

সূত্রের খবর, আলেপ্পো পতনের খবর মস্কোয় পৌঁছনোর ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই আসাদ বাহিনীকে সামরিক সাহায্যের আশ্বাস দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। ভূমধ্যসাগরের কোলের ওই শহরের কৌশলগত অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হাতছাড়া হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে আসাদ সেনা বেশ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ল বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

০৯ ২১

অন্য দিকে, দামাস্কাসকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে ক্রেমলিন। সূত্রের খবর, আলেপ্পো পুনর্দখলের ছক কষতে শুরু করেছে মস্কো। বিমানহানার ফলাফল নিয়ে মুখ খুলেছে ‘রাশিয়ান সেন্টার ফর দ্য রিকনসিলিয়েশন অফ এনিমি পার্টিস’। এই রুশ সরকারি সংস্থাটির দফতর রয়েছে দামাস্কাসে।

১০ ২১

সিরিয়ার রাশিয়ান সেন্টার জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের গুপ্ত ঘাঁটি, কম্যান্ড পোস্ট, হাতিয়ার ডিপো এবং কামানগুলিকে নিশানা করা হয়েছে। বিমানহানায় কমপক্ষে নিহত হয়েছে ৩০০ এইচটিএস বিদ্রোহী। আসাদপন্থী স্থানীয় সংবাদপত্র ‘অল ওয়াতন’ জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের কনভয় এবং জমায়েতকে নিশানা করেছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান।

১১ ২১

সূত্রের খবর, আলেপ্পোর বাসেল এলাকায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিমানহামলা চালিয়েছে মস্কো। ফলে সেখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের দেহ। একটা সময়ে আলেপ্পো বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে রাশিয়া এবং ইরানের সহযোগিতায় তা ছিনিয়ে নেয় আসাদের ফৌজ।

১২ ২১

প্রসঙ্গত, আলেপ্পো পতনের পরই যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই এলাকার ছবি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। সেখানে প্রেসিডেন্টের প্রয়াত ভাই বাসিল আল-আসাদের ভেঙে পড়া মূর্তির উপর বিদ্রোহীদের হাতিয়ার হাতে পোজ় দিতে দেখা গিয়েছে। ট্রাকে ও জিপে এইচটিএসের যোদ্ধারা গোটা শহর দাপিয়ে বেড়িয়েছে বলেও খবর।

১৩ ২১

সিরিয়ার সামরিক কম্যান্ডের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চারদিক থেকে ঘিরে ধরে বিদ্রোহীরা আক্রমণ শানায়। প্রাণপণ চেষ্টা করেও সেই চাপ সহ্য করা যায়নি। তবে সেখানকার নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য যে অবিলম্বে প্রতি-আক্রমণ শুরু হবে, তা স্পষ্ট করেছেন পদস্থ সেনাকর্তারা।

১৪ ২১

আলেপ্পো হাতছাড়া হওয়ার পরই বিদ্রোহীদের অগ্রগতি ঠেকাতে রণকৌশল বদলেছে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী। রাজধানী দামাস্কাসের সঙ্গে সংযোগকারী জাতীয় সড়ক আপাতত বন্ধ রেখেছে আসাদ ফৌজ। যদিও এর পর ইদলিবের পতনের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

১৫ ২১

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের দাবি, সিরিয়ার বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে দীর্ঘ দিন ধরেই খোলাখুলি ভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে তুরস্ক। ২০২০ সালে মস্কো-আঙ্কারা চুক্তির পর থেকে পশ্চিম এশিয়ার দেশটিতে কিছুটা শান্তি ফিরেছিল। ওই সময়ে দু’টি দেশই উত্তর সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।

১৬ ২১

একটা সময়ে ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস) জঙ্গিদের গড় হয়ে উঠেছিল সিরিয়া। তাঁদের মোকাবিলায় পূর্ব দিকের ডেইর আজ-জ়াওয়ার প্রদেশে এবং উত্তর-পূর্বের হাসাকা-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সেনা মোতায়েন করে আমেরিকা। কিন্তু ২০২১ সালে আফগানিস্তানের পর সিরিয়ার বেশ কয়েকটি ঘাঁটি থেকেও সেনা প্রত্যাহার করে নেয় পেন্টাগন।

১৭ ২১

বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখল নেওয়ার পর নতুন করে গৃহযুদ্ধ চাগাড় দিয়ে ওঠায় গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে ওয়াশিংটন। অন্য দিকে, তুর্কি বিদেশমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সর্গেই লেভেরভ। পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা একবাক্যে স্বীকার করেছে দু’টি দেশই।

১৮ ২১

নভেম্বরের নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানুয়ারিতে শপথ নেবেন তিনি। ভোটপ্রচারে সিরিয়ার ব্যাপারে নাক গলানো শুধুই বাজে খরচ বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। ফলে কুর্সিতে বসে সেখান থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিতে পারেন এই রিপাবলিকান নেতা।

১৯ ২১

কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা বুঝে নেওয়ার আগে পশ্চিম এশিয়ার দেশটিতে নতুন করে গৃহযুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নেওয়ার নেপথ্যে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দায়ী করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার নেশায় পর্দার আড়ালে থেকে তিনিই কলকাঠি নেড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

২০ ২১

বিশেষজ্ঞদের দাবি, সিরিয়ার পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিয়েছে, তাতে দ্রুত আলেপ্পো পুনর্দখল সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই সেখানকার ঐতিহাসিক দুর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বিদ্রোহীদের বিজয়োল্লাসে পতাকা নাড়তে দেখা গিয়েছে। ফলে ট্রাম্প কতটা এ ব্যাপারে চোখ বুজে থাকতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

২১ ২১

এ বছরের ২৭ নভেম্বর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইজ়রায়েল। এই সংঘাত চলাকালীন বেশ কয়েক বার সিরিয়ায় হামলা চালায় ইহুদি বায়ুসেনা। পশ্চিম এশিয়ার দেশটি দিয়েই ইরান থেকে লেবাননে হাতিয়ার ঢুকছে বলে দাবি করেছিল তেল আভিভ। ওই যুদ্ধ বন্ধ হতে না হতেই নতুন করে রণভেরী বাজল সিরিয়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement