উপায়ান্তর না দেখে ভিক্ষার ঝুলি হাতে যত্র তত্র বসে পড়লেই হল? অনুমতি নিয়েছেন? ভিক্ষা করার জন্য লাইসেন্স করিয়েছেন? ভিক্ষা করার লাইসেন্স! আজগুবি মনে হলেও এমনই ঘটেছে সুইডেনের একটি শহরে।
সুইডেনের বেশ কয়েকটি শহরে ভিক্ষাবৃত্তি বেআইনি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সুইডেনের স্কনে শহরে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করতে নির্দেশ জারি করেছিল সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। বছরখানেক ধরে বিষয়টি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার পর ওই রায় দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। আদালতের যুক্তি, জনজীবনে অসুবিধা রুখতেই এ নিদান দেওয়া হয়েছে।
আদালতের ওই রায়ের পর স্কনের দেখাদেখি সুইডেনের বেশ কয়েকটি শহরে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করেন সংশ্লিষ্ট পুর কর্তৃপক্ষ। তবে এসকিলস্তুনা শহরে আবার অন্য নিয়ম। সেখানে ভিক্ষা করা যাবে বটে, তবে তার জন্য ভিক্ষুকদের কাছে বৈধ লাইসেন্স থাকতে হবে।
গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে পুর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পারমিটও কিনতে হবে এসকিলস্তুনা শহরের ভিক্ষুকদের। তবে এই পারমিট ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।
সমালোচকদের মতে, এই ব্যবস্থায় ভিক্ষাবৃত্তিকে উৎসাহ দেওয়া হবে। এমনকি, এতে ভিক্ষা করার আইনি অধিকারও পেয়ে যাবেন ভিক্ষুকেরা। বিশেষ করে রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া থেকে সুইডেনে আসা জনগণের একটি অংশ এতে বিশেষ ভাবে লাভবান হবে।
বিতর্ক সত্ত্বেও পুর কর্তৃপক্ষ অন্য যুক্তি দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, শহরের কত জন ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন গুজরান করেন, সে সম্পর্কে তথ্য জমা করে করতেই নাকি এ উদ্যোগ। এমনকি, তাঁদের সাহায্যের জন্যই এ ব্যবস্থা কাজে আসবে।
২০১৯ সালের ১ অগস্ট থেকে ভিক্ষুকদের জন্য লাইসেন্স দেওয়া শুরু করেন এসকিলস্তুনা শহরের পুরকর্তারা।
সুইডেনের ওই শহরে ভিক্ষা করতে কত টাকা খসাতে হবে? পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তিন মাস ভিক্ষা করার জন্য সুইডিশ মুদ্রায় আড়াইশো ক্রোনা দিয়ে লাইসেন্স তৈরি করতে হবে। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য ২ হাজার ২৫ টাকা। সেই সঙ্গে ভিক্ষুকদের বৈধ পরিচয়পত্রও থাকা বাঞ্ছনীয়।
ভিক্ষাবৃত্তির জন্য লাইসেন্স পেতে অনলাইনে একটি ফর্ম পূরণ করে আবেদন করা যাবে। অথবা থানার আধিকারিকেদের কাছ থেকে আবেদনপত্র পেতে পারেন ভিক্ষুকেরা।
লাইসেন্স ছাড়া এসকিলস্তুনা শহরের কোথাও ভিক্ষা করলে কড়া শাস্তিরও বিধান রয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, লাইসেন্স ছাড়া ধরা পড়লে ভিক্ষুকদের মাথা পিছু ৪ হাজার সুইডিশ ক্রোনা দিতে হবে। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার টাকা!
এই নিয়ম চালু হওয়ার পর কী রকম সাড়া পাওয়া গিয়েছে? পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, বহু ভিক্ষুকই পেশা বদল করেছেন। অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তির বদলে ফলমূল বিক্রি করতে শুরু করেছেন।