বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায় নয়া মোড় নন্দিনী চক্রবর্তীর নিয়োগে। সদ্য ৩১ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্রসচিব পদে বহাল হয়েছেন তিনি, কিন্তু ইতিমধ্যেই তাঁর নিয়োগকে ‘অবৈধ’ বলে দাবি করলেন শুভেন্দু।
এমনকি প্রয়োজনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালত অবধি যাবেন বলে আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
রবিবার ২০২৩ সালের শেষ দিনে বিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন স্বরাষ্ট্রসচিব এবং মুখ্যসচিবের নাম ঘোষণা করে নবান্ন।
অন্য দিকে, মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী অবসর নেওয়ায় তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদ দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় স্বরাষ্ট্রসচিব থেকে উন্নীত হয়ে মুখ্যসচিব হন বিপি গোপালিক।
পর্যটন সচিব নন্দিনীকে করা হয় স্বরাষ্ট্রসচিব। সরকারি ঘোষণার পর সোমবার নবান্নে নিজের দফতরে এসে কাজ শুরু করেছেন নতুন স্বরাষ্ট্রসচিব।
নিয়োগের ঠিক এক দিন পরেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু নন্দিনীর নিয়োগকে সরাসরি ‘অবৈধ’ বলেছেন। সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, এই ‘অবৈধ’ নিয়োগের বিরুদ্ধে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
সাধারণত সরকার কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে সঙ্গে সঙ্গেই এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে নিজের প্রতিবাদের কথা জানিয়ে দেন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান জানাতে খানিক দেরিই করেছেন তিনি।
রবিবার স্বরাষ্ট্রসচিব নিয়োগের ৪৮ ঘণ্টা পর নিজের এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানাচ্ছে, নন্দিনীকে স্বরাষ্ট্রসচিব পদে নিয়োগের পর বহু আইনগত নথি খতিয়ে দেখেছেন বিরোধী দলনেতা।
পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কর্মরত বেশ কিছু আধিকারিকের কাছ থেকেও নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে জেনেছেন। তার পরেই প্রস্তুত হয়ে এক্স হ্যান্ডলে প্রতিবাদ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে যাবতীয় তথ্য এবং নথি সংগ্রহ করে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছেন শুভেন্দু।
নিজের এক্স হ্যান্ডলে তিনি রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি রাজীব কুমারের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি, স্বারাষ্ট্রসচিবের নিয়োগকে ‘অবৈধ’ বলেছেন।
নন্দীগ্রামের বিধায়ক দাবি করেছেন, ‘‘রাজ্য প্রশাসনের ১৩ জন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এবং ৫ জন প্রধানসচিবকে বাদ দিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতর অবৈধ ভাবে স্বরাষ্ট্রসচিব নিয়োগ করেছে।’’
তিনি যে এই বিষয়টি নিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত যাবেন, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন। শুভেন্দু স্বরাষ্ট্রসচিব নিয়োগের প্রক্রিয়াকে অবৈধ দাবি করে, তা কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গাউবা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লা, প্রশাসনিক এবং প্রশিক্ষণ মন্ত্রকের সচিব এস রাধা চৌহানকেও জানিয়েছেন।
সঙ্গে আইএএস আধিকারিকদের সংগঠনকেও জানিয়েছেন তিনি। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘শুধু স্বরাষ্ট্রসচিব পদেই নয়, এর আগেও একাধিক পদে অবৈধ ভাবে আধিকারিকদের নিয়োগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজীব কুমার আইপিএস হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে তথ্য এবং প্রযুক্তি দফতরের সচিব করা হয়েছিল। যা পুরোপুরি অবৈধ।’’
প্রসঙ্গত, রবিবার প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকের জায়গায় নন্দিনী চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা করেছে নবান্ন।
এর আগে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের প্রধান সচিব ছিলেন নন্দিনী। বিস্তর বিতর্কের পরে সেই পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রশাসন সূত্রে খবর, নন্দিনীর ‘উত্থান-পতন’ বরাবরই শিরোনামে থেকেছে। এ বারও তাই হল।
রাজ্যপালের সচিব থেকে পর্যটন সচিব। সেখান থেকে রাজ্য প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে এখন নন্দিনী। কিন্তু তাঁর পরিচয় ঠিক কী?
জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী নন্দিনী। ১৯৯৪ ব্যাচের আইএএস অফিসার। বাম আমলে রাজ্য প্রশাসনের পদে যোগ দেন তিনি।
২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে মমতার ‘প্রিয় পাত্রী’ হয়ে ওঠেন নন্দিনী।