4 States Assembly Election Result

কর্নাটকের পর তেলঙ্গানা, ‘গাওস্কর’ সুনীলের ব্যাটে ভর করে ‌বাজিমাত কংগ্রেসের

কর্নাটক জয়ের নেপথ্যেও সুনীল কানুগোলুর ‘চওড়া ব্যাট’ প্রভূত সহায়তা করেছে কংগ্রেসকে। নাম ফেটেছিল তখনই। এ বার সেই সুনামের মর্যাদাও রাখলেন সুনীল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৫৩
Share:
০১ ১২

বছর দু’য়েক আগের কথা। তেলঙ্গানার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (সমধিক পরিচিত কেসিআর নামে)-এর হায়দরাবাদের খামারবাড়িতে ডাক পড়েছিল মধ্যবয়স্কের। এ কথা, সে কথার পর কেসিআর মধ্যবয়স্ককে সরাসরি প্রস্তাব দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘২০২৩-এর বিধানসভা ভোট জিততে আমায় সাহায্য করবেন?’’ সেই মধ্যবয়স্কই আজকের সুনীল কানুগোলু। সদ্য কেসিআরকে হারিয়ে তেলঙ্গানার ‘হাত’ বদলে যাঁর কৃতিত্ব মানছেন তাবড় নেতারাও।

০২ ১২

কংগ্রেসের ভোটকুশলী হিসাবে সুনীলের নাম ইদানীং শোনেননি এমন মানুষ কম। কারণ, কর্নাটক জয়ের নেপথ্যেও সুনীলের চওড়া ব্যাট প্রভূত সহায়তা করেছে কংগ্রেসকে। নাম ফেটেছিল তখনই। এ বার সেই সুনামের মর্যাদাও রাখলেন সুনীল।

Advertisement
০৩ ১২

বস্তুত, কেসিআরের সঙ্গে সেই সাক্ষাতের আগেই অবশ্য রাজনীতির কৌশল তৈরির কাজে নেমে পড়েছিলেন সুনীল। তাঁর প্রথম ‘কাজ’ ছিল তামিলনাড়ুতে। সুনীল তখন প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাকের কর্মী। সেই কাজ শেষ হওয়ার পর নতুন কাজের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু লোভনীয় প্রস্তাব থাকলেও কোনও এক অজানা কারণে কেসিআরের সঙ্গে জোট বাঁধতে চাননি সুনীল। বলা ভাল, কেসিআরকে ফেরানোর কিছু দিনের মধ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করার কথা জানাজানি হয়। এআইসিসির ভোট কৌশল নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দেন সুনীল।

০৪ ১২

তবে, কংগ্রেসের সঙ্গে সুনীলের প্রথম ‘কাজ’ কর্নাটক হলেও একই সঙ্গে চলছিল তেলঙ্গানার ঘুটি সাজানোর কাজও। চার রাজ্যের বিধানসভার ফল বেরোনোর পর এখানেই প্রশ্ন ওঠে, রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশেও কেন সুনীলকেই অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা সাজানোর ভার দিল না কংগ্রেস?

০৫ ১২

সূত্রের খবর, তেলঙ্গানা এবং কর্নাটকে সুনীলকে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ দেওয়া হয়েছিল। রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশে সুনীল তেমনটা পাননি। যেখানে অশোক গহলৌত বা কমল নাথের মতো বর্ষীয়ান নেতাদের ‘সুনজরে’ ছিলেন না তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুনীলের সংস্থার এক কর্মীকে উদ্ধৃত করে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘‘তেলঙ্গানায় আমাদের স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়েছিল। আমরা প্রথমে সমীক্ষা করি, তার পর সেই অনুযায়ী মাটিতে কাজ করি। এর মানে এটা কখনওই নয় যে, দলের নেতারা কোনও কাজই করেননি। তাঁরা ধৈর্য ধরে আমাদের শুনেছেন এবং আমাদের পরামর্শ মতো কাজ করেছেন। এরই সম্মিলিত ফল সাফল্য।’’

০৬ ১২

শোনা যায়, কানুগোলুর ‘টিম’ রাজস্থানের ভোটের আগে সেখানে সমীক্ষা চালিয়েছিল। তার উপর ভিত্তি করে কংগ্রেস নেতৃত্ব বেশ কয়েক জন প্রার্থীকে টিকিট না দেওয়ার ব্যাপারে মনস্থিরও করেছিল। কিন্তু জয়পুরের অন্দরে কানাঘুষো শোনা যায়, গহলৌতের তাতে ঘোর আপত্তি ছিল। তিনি নাকি প্রকাশ্যে বলে দিয়েছিলেন, ‘‘ওই কৌশলীর চেয়ে রাজস্থানকে আমি ভাল বুঝি।’’ ফলাফল, সবার সামনে।

০৭ ১২

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, তেলঙ্গানায় সুনীলের কাজ মোটেও সহজ ছিল না। প্রথমত, নতুন তৈরি হওয়া এই রাজ্যে কংগ্রেস কখনও ক্ষমতায় আসেনি। দ্বিতীয়ত, কেসিআরের জনপ্রিয়তার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেন এমন কোনও কংগ্রেস নেতাও ছিল না সুনীলের ভাঁড়ারে। এ ছাড়াও বিজেপির বেড়ে চলা ভোট শতাংশ, ওয়াইএস শর্মিলার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত এবং সর্বোপরি চন্দ্রবাবু নায়ডু। কংগ্রেসের গাওস্করের কাছে ফলোঅন বাঁচানোর নাছোড় লড়াই।

০৮ ১২

দীর্ঘ দিন ধরে তেলঙ্গানাকে জরিপ করেছিল সুনীলের দল। একের পর এক সমীক্ষায় উঠে আসা ফল ঠান্ডা মাথায় বি‌শ্লেষণ করে সুনীল বুঝতে পারেন, বিজেপির ভোট যত বাড়বে, কেসিআরের গদি তত পোক্ত হবে। প্রথমেই তাই বিজেপির ভোট যাতে আর বৃদ্ধি না পায় সে দিকে নজর দেয় সুনীলের টিম। এর পরের কাজ ছিল আরও কঠিন। তা হল, ওয়াইএস শর্মিলাকে ভোটের লড়াই থেকে বাইরে রাখা। সেই কাজও সফল ভাবেই করে ফেলে সুনীল একাদশ। আর শেষপাতে চন্দ্রবাবু নায়ডু তেলঙ্গানার ভোটের লড়াই থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। হাসি আরও চও়ড়া হয় সুনীলের।

০৯ ১২

চাপ যে বাড়ছে তা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন কেসিআর। সুনীলরা যে ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করে ফেলেছিলেন, তা বুঝতে ভুল করেননি পোড়খাওয়া কেসিআর। সুনীলকে বেলাইন করতে তাই প্রশাসনকে কাজে লাগান তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী। সুনীলদের হায়দরাবাদের অফিসে পুলিশ অভিযান হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় সমস্ত মালপত্র। সুনীলকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন করে। কিন্তু কংগ্রেসের গাওস্করের মনসংযোগ টলেনি।

১০ ১২

কংগ্রেসের গাওস্কর বরাবই মুখচোরা স্বভাবের। এত দিন মূল স্রোতের রাজনীতিতে আছেন, কিন্তু কোনও চ্যানেল বা সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেখা গিয়েছে কদাচিৎ। কর্নাটকের বেল্লারি থেকে স্কুলের পড়া শেষ করে তামিলনাড়ুর আন্না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন কানুগোলু। তার পর আমেরিকার নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ। ফিনান্সেও স্নাতকোত্তর করেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই।

১১ ১২

বিজেপির সঙ্গেও দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন সুনীল। শোনা যায়, বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছিলেন বিশেষ আস্থাভাজন তিনি। আর তাঁর ঘনিষ্ঠেরা বলেন, নিরপেক্ষতাই সুনীলের প্রধান ইউএসপি। সমীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে তাতে রাজনীতির ‘মন্ত্র’ মেশানোর ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত কখনও ভুল হয়নি সুনীলের। তাঁর ধারাবাহিকতা সে কথাই বলে। আর এই কারণেই সুনীলকে অনেকেই আদর করে ‘কংগ্রেসের গাওস্কর’ বলে ডেকে থাকেন।

১২ ১২

চার রাজ্যের ভোটের ফল বলছে, একমাত্র তেলঙ্গানা ছাড়া কংগ্রেসের হাতে আর কিছুই নেই। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, কানুগোলুকে যদি ওই দুই রাজ্যেও কাজে লাগানো যেত, ফল কি অন্য রকম হতে পারত? সম্ভব হত বিজেপিকে হারানো? উত্তরটা চিরকাল অজানাই থাকবে। কিন্তু বিজেপির এই জয়রথ ছোটানোর আবহে কংগ্রেসের তেলঙ্গানা জয়ের পর সেই উত্তর খুঁজতে মরিয়া বহু কংগ্রেসকর্মীই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement