লিওনার্ড লেক এবং চার্লস এনজি— আমেরিকার কুখ্যাত এই ২ সিরিয়াল কিলারের কাহিনি শুনে আজও শিউরে ওঠেন অনেকে। অবলীলায় একের পর এক খুন এবং ধর্ষণ করেছেন তাঁরা। মারার আগে চালিয়েছেন অকথ্য অত্যাচার।
লিওনার্ড এবং চার্লসের বিরুদ্ধে অন্তত ১১ জনকে খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে খুনগুলি করেছেন তাঁরা। তাঁদের শিকার হয়েছিলেন মহিলা, পুরুষ এমনকি শিশুরাও।
১৯৮৫ সালে এই সিরিয়াল কিলার জুটিকে ধরে ফেলে পুলিশ। ধরা পড়ার পর কারাগারে লিওনার্ড আত্মহত্যা করেন। তাঁর সঙ্গী এখনও জীবিত রয়েছেন। তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
১৯৪৫ সালে আমেরিকায় জন্মেছিলেন লিওনার্ড। ছোটবেলা থেকেই তাঁর বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। অভিযোগ, নিজের বোনদের নগ্ন করিয়ে ছবি তুলতেন তিনি।
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর লিওনার্ড মানুষ হয়েছেন দিদার কাছে। দিদা তাঁর বিকৃত চাহিদার কথা জেনেও কিছু না বলে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ফলে ছোট থেকেই মাথা চারা দিয়ে ওঠে অপরাধ প্রবণতা।
লিওনার্ডের কিছু কিছু স্বভাব দেখে ছোট থেকেই তাঁর মধ্যেকার খুনি সত্তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। তদন্তকারীদের দাবি, তিনি ছোটবেলায় ইঁদুর বা ওই জাতীয় ছোট প্রাণীদের ধরে ধরে মারতেন। তার পর তাদের দেহ অ্যাসিড ঢেলে পুড়িয়ে দিতেন।।
স্যানফ্র্যান্সিস্কোতে বিয়ে করে থিতু হলেন লিওনার্ড। দিব্যি সংসার করছিলেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী হঠাৎ এক দিন জানতে পারেন, লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁর সঙ্গে সঙ্গমের ভিডিয়ো করেন তিনি। স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েই তাঁকে নিয়ে পর্ন ভিডিয়ো বানান, জানতে পেরে লিওনার্ডকে ছেড়ে চলে যান তাঁর স্ত্রী।
বিবাহবিচ্ছেদের পর ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলে চলে আসেন লিওনার্ড। সেখানে ফের বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেও একই আচরণ করতেন তিনি। তবে এ ক্ষেত্রে পেয়েছিলেন প্রশ্রয়। সঙ্গমের ভিডিয়ো বানাতে বাধা দেননি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। দীর্ঘ ৮ বছর নির্বিঘ্নে সংসার করেন তাঁরা।
কিন্তু শুধু সঙ্গমের ভিডিয়ো বানিয়ে শান্ত থাকতে পারেননি লিওনার্ড। এই সময় তাঁর দেখা হয় চার্লসের সঙ্গে। চার্লস হংকংয়ের বাসিন্দা। এক সময় সেনাবাহিনীতে যুদ্ধও করেছেন। নিজের মানসিকতার সঙ্গে চার্লসের হুবহু মিল খুঁজে পান তিনি। ফলে বন্ধুত্ব হতে সময় লাগেনি।
যুদ্ধ চলাকালীন চার্লস একটি গোপন বাঙ্কার তৈরি করেছিলেন। পরমাণু হামলার আশঙ্কায় আগেভাগে সুরক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন তিনি। এই গোপন কুঠুরিই হয়ে ওঠে অপরাধী যুগলের ‘স্বর্গরাজ্য’।
১৯৮৩ সালেই ‘শিকার’ শুরু করেন লিওনার্ড এবং চার্লস। মূলত মহিলাদের ধরে ওই কুঠুরিতে নিয়ে যেতেন তাঁরা। সেখানে প্রথমে চলত অকথ্য অত্যাচার। মহিলাদের ধর্ষণ ও নানা ভাবে যৌন হেনস্থা করতেন দুই বন্ধু। তার ভিডিয়োও বানাতেন।
মহিলাদের অপহরণের সময় কোনও পুরুষ বাধা দিলে বা কোনও শিশু তাদের কীর্তির সাক্ষী থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও খুন করতেন লিওনার্ডরা। তাঁদের হাত থেকে রেহাই পেতেন না কেউ।
তদন্তকারীদের দাবি, মহিলাদের ধর্ষণের পর নানা রকম বিকৃত যৌনক্রিয়ায় সামিল হতে বাধ্য করতেন এই সিরিয়াল কিলার যুগল। গোপন কুঠুরিতে চলত তাঁদের ‘যৌন খেলা’।
তদন্ত করতে গিয়ে ওই কুঠুরির মধ্যেকার ভিডিয়োগুলি হাতে পেয়েছিল পুলিশ। একটি ভিডিয়োতে এক মহিলার উদ্দেশে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘তুমিও বাকিদের মতো তারস্বরে চেঁচাতে পারো। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হবে না।’’
কুঠুরিতে গিয়ে প্রচুর মানুষের হাড়গোড় এবং কঙ্কাল পায় পুলিশ। ঠিক কত জনকে তাঁরা খুন করেছিলেন, তা অজানাই থেকে গিয়েছে। কারণ সব খুনের প্রমাণ মেলেনি। তদন্তকারীরা মনে করেন, খুনের সংখ্যা ২৫ ছাড়াতে পারে।
শুধু খুন নয়, মেরে ফেলার পর মৃত পুরুষ কিংবা মহিলার পরিচয়পত্র হাতিয়ে নিতেন লিওনার্ড এবং চার্লস। তা ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতেন। অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করতেন ওই পরিচয়পত্রগুলি। তা করতে গিয়েই তাঁরা ধরা পড়েন।
১৯৮৫ সালে একটি দোকানে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন চার্লস। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে বিপাকে পড়েন লিওনার্ডও। পুলিশকে এমন একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স তিনি দেখান, যে ব্যক্তি দীর্ঘ দিন ধরে নিখোঁজ। এতেই সন্দেহ হয় পুলিশের।
লিওনার্ডের কাছ থেকে সাইলেন্সার লাগানো একটি বন্দুকও উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁদের ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গোপন কুঠুরিতে হানা দিয়ে হাড়গোড় খুঁজে পান তদন্তকারীরা। ফাঁস হয় ২ বন্ধুর কীর্তি।
গ্রেফতারের পর জেলেই আত্মঘাতী হন লিওনার্ড। চার্লসকে ১৯৯৯ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টেও সেই সাজা বহাল রাখা হয়েছে। শীঘ্রই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। ছবি: সংগৃহীত।