Chris McCandless

প্রকৃতির টানে ছাড়েন বিলাসবহুল জীবন, পরিত্যক্ত বাসে না খেতে পেয়ে মৃত্যু হয় কোটিপতি যুবকের

ক্রিস্টোফার জনসন ম্যাকক্যান্ডলেস। বিত্তশালী পরিবার এবং বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে প্রকৃতির টানে পাহাড়-জঙ্গলে পাড়ি দেওয়া এক যাযাবর। মাত্র ২৪ বছর বয়সে না খেতে পেয়ে মারা যান এই যুবক।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:৫৫
Share:
০১ ২২

ক্রিস্টোফার জনসন ম্যাকক্যান্ডলেস। বিত্তশালী পরিবার এবং বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে প্রকৃতির টানে পাহাড়-জঙ্গলে পাড়ি দেওয়া এক যাযাবর। মাত্র ২৪ বছর বয়সে না খেতে পেয়ে প্রকৃতির কোলে মারা গিয়েছিলেন এই যুবক। বেঁচে থাকলে এখন তাঁর বয়স হতো ৫৪। ক্রিস্টোফারের জীবন এতটাই রোমাঞ্চকর ছিল যে, আজও বহু প্রকৃতিপ্রেমীকে উদ্বুদ্ধ করে তাঁর কাহিনি।

০২ ২২

ক্রিস্টোফার ১৯৬৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার ইঙ্গেলউডে এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা কাটে ওয়াশিংটন ডিসিতে। সেখানে এক বিত্তবান পাড়ায় বাস করত তাঁর পরিবার।

Advertisement
০৩ ২২

ক্রিস্টোফার ছিলেন ওয়াল্টার ম্যাকক্যান্ডলেস এবং উইলহেলমিনা মারি ম্যাকক্যান্ডলেসের বড় ছেলে। ক্যারিন নামে তাঁর এক ছোট বোনও ছিল। উইলহেলমিনা ছিলেন ওয়াল্টারের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম পক্ষের থেকে তাঁর ছয় ছেলে ছিল।

০৪ ২২

ওয়াল্টার ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) এক জন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। মা উইলহেলমিনা ছিলেন ‘হিউজেস এয়ারক্রাফ্ট’ নামক আমেরিকার একটি মহাকাশ এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার উচ্চ পদাধিকারী। পারিবারিক ব্যবসাও ছিল ক্রিস্টোফারদের।

০৫ ২২

১৯৯০ সালের মে মাসে ‘ইমোরি ইউনিভার্সিটি’ থেকে ক্রিস্টোফার ইতিহাস এবং নৃবিজ্ঞানে স্নাতক হন। পড়াশোনায় বরাবরই ভাল ছিলেন। উচ্চশিক্ষিত হওয়ার কারণে এবং বিভিন্ন গবেষণামূলক লেখালেখির জন্য একাধিক পুরস্কারও পান তিনি। বর্ণবৈষম্য, আফ্রিকার সমসাময়িক রাজনীতি এবং খাদ্য সঙ্কট নিয়ে গবেষণার জন্য তাঁকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল।

০৬ ২২

পড়াশোনা করতে করতেই বর্তমান ভারতীয় মূল্যে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা উপার্জন করেছিলেন ক্রিস্টোফার। বিভিন্ন বৃত্তি পেয়ে এবং ছোটখাটো কাজ করে তিনি এই অর্থ উপার্জন করেছিলেন।

০৭ ২২

পড়াশোনা শেষের পরই ভ্রমণের নেশা চেপে বসে ক্রিস্টোফারের। পার্থিব সম্পদের মায়া ধীরে ধীরে কাটতে থাকে তাঁর। ঘুরতে ঘুরতে প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা আরও প্রবল হয়। ঠিক করেন সব ছেড়ে ভবঘুরের জীবন বেছে নেবেন।

০৮ ২২

এর পর নিজের সঞ্চয়ের সবটা এক অসরকারি সংস্থাকে দান করেন ক্রিস্টোফার। কিছু দিন একটি রেস্তরাঁয় রাঁধুনি হিসাবেও কাজ করেন।

০৯ ২২

১৯৯০ সালে ইতিহাস এবং নৃবিজ্ঞানে স্নাতকের ডিগ্রি, পরিবার, অর্থ এবং এমনকি পরিবার সূত্রে পাওয়া নাম— সব কিছু পিছনে ফেলে অনির্দিষ্টের পথে যাত্রা শুরু করেন ক্রিস্টোফার।

১০ ২২

ঘর ছাড়ার পরবর্তী কয়েক মাস ধরে ক্রিস্টোফার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণ করেন। পাহাড়ও চড়েন।

১১ ২২

১৯৯১ সালের গোড়ার দিকে নেভাদা ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়া হয়ে দক্ষিণে অ্যারিজোনা এবং তার পর ডাকোটার পথে যাত্রা শুরু করেন ক্রিস্টোফার। হাতে টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু দিন ডাকোটার একটি কারখানায় লিফ্‌টম্যান হিসাবে কাজ করেন।

১২ ২২

খানিক টাকা জমতে ক্রিস্টোফার সেই টাকা নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করেন। এর পর গন্তব্য ছিল কলোরাডো। বৈধ অনুমতি ছাড়া কলোরাডো নদীর আশপাশে ঘোরাফেরা করার জন্য বনকর্মীকরা তাঁকে আটক করেন। বেশ কিছু দিন আটক রাখার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

১৩ ২২

১৯৯২ সালে আলাস্কা পর্বতমালার উদ্দেশে পাড়ি দেন ক্রিস্টোফার। তার আগের কিছু দিন কলোরাডো নদীর তীরে বসবাস করেন।

১৪ ২২

আলাস্কা যাওয়ার পথে টেকলানিকা নদী পার হন ক্রিস্টোফার। নদী পার হওয়ার সময় বিভিন্ন বাধাবিপত্তির সম্মুখীনও হতে হয় তাঁকে।

১৫ ২২

ক্রিস্টোফার ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল আলাস্কার তাইগারের ডেনালি জাতীয় উদ্যানের কাছে পৌঁছন। সেখানের মরুভূমিতে সম্পূর্ণ একা একা তিন মাসেরও বেশি সময় কাটিয়েছিলেন তিনি। থাকার জন্য বেছে নেন পরিত্যক্ত একটি বাস। তিনি এই বাসের নাম দিয়েছিলেন ‘ম্যাজিক’। সেখানে গাছপালা এবং বেরি খেয়ে দিন গুজরান করতে থাকেন ক্রিস্টোফার।

১৬ ২২

তিন মাস পর ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ক্রিস্টোফার। ফেরার পথে দেখেন টেকলানিকা নদী পার হওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। কারণ না খেতে পেয়ে তাঁর শরীরের অবস্থা তত দিনে যথেষ্ট খারাপ। চেহারা কঙ্কালসার, ঢলঢলে জামাকাপড়। ওজন কমে হয়েছে ৩০ কিলো। ঠিকমতো চলাফেরার শক্তিও ছিল না তাঁর। বাধ্য হয়ে আবার ওই পরিত্যক্ত বাসে ফিরে আসেন তিনি। মৃত্যুর আগে শেষ কয়েক দিন সেখানেই কাটিয়েছিলেন।

১৭ ২২

১৯৯২ সালের ১৮ অগস্ট ওই বাসেই মৃত্যু হয় ক্রিস্টোফারের। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ২৪। মৃত্যুর ১৯ দিন পর তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ক্ষুধা এবং অপুষ্টির কারণে মৃত্যু হয়েছিল ক্রিস্টোফারের। তাঁর জিনিসপত্র থেকে পাওয়া গিয়েছিল তাঁর লেখা বেশ কিছু চিঠি এবং চিরকুট। এগুলিতে নিজের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির কথা লিখেছিলেন তিনি।

১৮ ২২

ক্রিস্টোফারের জীবনকাহিনি নিয়ে বই লেখা হয়। হলিউডে সিনেমাও তৈরি হয় তাঁর জীবন নিয়ে। শন পেন পরিচালিত বিখ্যাত এই সিনেমার নাম ‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড’।

১৯ ২২

ক্রিস্টোফারের মৃত্যুর পর তাঁর কাহিনি বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কেউ কেউ তাঁকে বড়লোক বাবা-মার বখাটে ছেলের তকমা দেন, যিনি নিজের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য বাড়ি ছাড়েন এবং মারা যান।

২০ ২২

তবে এখনও অনেক ভ্রমণপিপাসু মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায় ক্রিস্টোফারের গল্প। অনেকের কাছে এখনও তিনি স্বাধীন চেতনার প্রতীক।

২১ ২২

ক্রিস নির্বোধ ছিলেন না। তিনি জানতেন, আলাস্কার যাত্রাপথ কণ্টকময়। বিপদ পদে পদে। তবুও প্রকৃতির টানে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। বেছে নিয়েছিলেন কঠিন জীবন। তাঁর লেখাগুলি থেকেই এই সব কথা জানতে পারা যায়।

২২ ২২

ক্রিস্টেফারের মৃত্যুর পর তাঁর জিনিসপত্র থেকে পাওয়া একটি চিরকূটে লেখা ছিল, ‘‘আমার জীবন সুখেই কেটেছে। আমার জীবন নিয়ে আমার কোনও আক্ষেপ নেই। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। বিদায় নেওয়ার সময় এসেছে। ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement