Jhulan Goswami

বলই করতে দিত না পাড়ার দাদারা! ক্রিকেট নয়, সৌরভের মতো ঝুলনেরও প্রথম ভালবাসা ছিল অন্য এক খেলা

ঝুলনের জীবন গল্পের মতো। সেখানে ওঠা-পড়া আছে, আছে ঘাত-প্রতিঘাত। তবে দিনের শেষে আছে জিতে যাওয়ার হাসি। এমন এক জনকে নিয়ে সিনেমা হবে না, তাই হয় নাকি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:১২
Share:
০১ ১৫

বাইরের লোকের ভ্রূকুটি, পরিবারের বাধা, আর্থিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা— কোনও কিছুই রুখতে পারেনি ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’-এর গতিপথ। পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চির চেহারার ১২০ কিলোমিটার বেগে বলের লক্ষ্য শুধু ব্যাটারকে ধরাশায়ী করা নয়, নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে যাওয়ারও। তিনি ঝুলন গোস্বামী। তিনি ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’।

—ফাইল চিত্র।

০২ ১৫

ঝুলনের ২০ বছরের কেরিয়ার থামল লর্ডসে। বিশ্বকাপ না পাওয়ার দুঃখ নিয়েই অবসর নিলেন নদিয়ার চাকদহের মেয়ে। যে মেয়েটি রঙিন জার্সিতে সচিন তেন্ডুলকরকে দেখে সবুজ ঘাসে দৌড়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন, কেমন ছিল তাঁর কাহিনি? কী কী পেলেন আর কী কী পেলেন না তিনি?

—ফাইল চিত্র।

Advertisement
০৩ ১৫

১৯৮২ সালের ২৫ নভেম্বর নদিয়ার চাকদহ পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড লালপুরে জন্ম ঝুলন গোস্বামীর। বাড়ির সবাই ডাকেন বাবুল নামে। বাবা নিশীথ গোস্বামী ছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার এক জন ক্যান্টিন কর্মী। থাকতেন ছোট্ট বাড়িতে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ঝুলনেরও প্রথম ভালবাসা ছিল ফুটবল।

—ফাইল চিত্র।

০৪ ১৫

কিন্তু ’৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিবেশীর টিভিতে দেখতে বসেই ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ জন্মায় ঝুলনের। সেই শুরু। কিন্তু পাড়া ক্রিকেটে খুশি ছিলেন না। চাইতেন আরও বেশি ক্রিকেট খেলতে। আরও বেশি শিখতে। কিন্তু কাছেপিঠে কোচিংয়ের সুযোগ নেই যে! অগত্যা গন্তব্য কলকাতা। বিবেকানন্দ পার্কে স্বপন সাধুর কাছে প্রশিক্ষণ শুরু ঝুলনের।

—ফাইল চিত্র।

০৫ ১৫

কিন্তু লড়াইটা অতটাও সহজ ছিল না। লোকাল ট্রেনে কয়েক ঘণ্টার যাতায়াত, জাঁকাজাঁকি ভিড়ে ক্রিকেট কিট কাঁধে থাকা ছোট্ট মেয়েটিকে দেখে কারও টিপ্পনী কিংবা শুধু খেলার জন্য বাড়ির লোকের বকুনি— ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’ হতে লেগেছে বিস্তর পরিশ্রম আর অনেকখানি ত্যাগ।

—ফাইল চিত্র।

০৬ ১৫

ঝুলন বলেন তিনি কী পেয়েছেন বা কী পাননি তার হিসাব রাখতে ভালবাসেন না। কোনও কিছুর জন্য খেদও নেই তাঁর। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল। নিজেকে প্রমাণ করতে করতে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। আইসিসির বর্ষসেরা মহিলা ক্রিকেটারের সম্মান, পদ্মশ্রী, অর্জুন— সরকারি, বেসরকারি অজস্র সম্মান ও খেতাব পেয়েছেন ৩৯ বছরের পেসার।

—ফাইল চিত্র।

০৭ ১৫

এক দিনের ক্রিকেটে ঝুলনের ঝুলিতে রয়েছে ২৫২টি উইকেট। টেস্টে রয়েছে ৪৪টি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিয়েছেন ৫৬টি উইকেট। বাংলার দলে মেন্টরের দায়িত্ব আছেন। বাংলার ক্রিকেট ‘দাদা’ সৌরভের পর পেয়েছে ‘দিদি’ ঝুলনকে। মেয়েরাও যে ১৩৫ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারেন, তা শিখিয়েছেন ঝুলনই। সেরা সময়ের ঝুলনের বোলিং বিপদে ফেলত পারত যে কোনও পুরুষ ব্যাটারকেও।

—ফাইল চিত্র।

০৮ ১৫

একটি সাক্ষাৎকারে তাঁর উঠে আসা প্রসঙ্গে ঝুলন বলেছিলেন, মধ্যবিত্ত পরিবার কখনও মেয়ের কাছ থেকে অসাধারণ কিছু আশা করে না। অভিভাবকরা চান, মেয়ে পড়াশোনা করবে, গান-বাজনা-নাচ ইত্যাদি চলতে পারে। কিন্তু খেলাধুলোকে পেশা করা? নৈব নৈব চ। ঝুলন অবশ্য মনে করেন না যে তিনি এই ছক ভেঙেছেন। তিনি শুধু যা হতে চেয়েছিলেন তা মন থেকে চেয়েছিলেন। এবং হতে পেরেছেন।

—ফাইল চিত্র।

০৯ ১৫

ঝুলনের কথায়, ‘‘পাড়ার ক্রিকেটে আমাকে দাদারা কখনও বল করতে দিত না। ওরা বলত, তোর বল খুব ‘স্লো’।’’ এ কথাই তাঁকে তাতিয়ে দিয়েছিল। জোরে বল করার ‘সাধনা’র শুরু সেখানেই। একটা সময়ে মহিলাদের ক্রিকেটে দ্রুততম বোলার ছিলেন ঝুলনই।

—ফাইল চিত্র।

১০ ১৫

প্রতি দিনে অনুশীলনে আসার জন্য ট্রেন ধরার তাড়া। সকাল সাড়ে ৭টায় কলকাতায় ঢুকে পড়তে হবে। সকাল সাড়ে ৪টে বা ৫টার মধ্যে উঠে পড়তেন ঘুম থেকে। ট্রেন ধরার তাড়া যে। তার পর প্র্যাকটিস করে আবার ঘরে ফেরা। এ সবের মধ্যে পড়াশোনাটা চালিয়ে যাওয়া খুব চাপের ছিল। তবে ঝুলন বিশ্বাস করেন, কিছু পেতে গেলে কিছু দিতেও হয়। ক্রিকেটার হতে চেয়েছেন। পড়াশোনা বেশি দূর এগোতে না পারার কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর।

—ফাইল চিত্র।

১১ ১৫

ইচ্ছেশক্তি, নিংড়ে দেওয়া মেহনত অন্যদের থেকে ঝুলনকে আলাদা করে দিয়েছে। ছোটবেলায় কোচ বলতেন, ‘‘অনেক মেয়েকে ক্রিকেট শিখিয়েছি। কিন্তু তোমার মতো ‘হাই-আর্ম’ বোলিং অ্যাকশন কারও দেখিনি। তার পর যদি তোমাকে না সাহায্য করি, সেটা হবে প্রতিভার প্রতি অবিচার।’’

—ফাইল চিত্র।

১২ ১৫

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক ম্যাচ খেলেছিলেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচেও ঝুলন খেললেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঝুলন বলেন, ‘‘আমার যে বয়স হচ্ছে তা ফিল্ডিং করতে গিয়ে বুঝতে পারছি। তবে আমার মনে হয় ফিট থাকার আসলে কোনও বয়স হয় না। সুস্থ-সবল থাকতে চাওয়ার ইচ্ছেটাই বড় কথা। এবং সেই ইচ্ছেকে বাস্তবায়িত করতে যা যা করা প্রয়োজন, ধারাবাহিক ভাবে তা মেনে চলা উচিত।’’

—ফাইল চিত্র।

১৩ ১৫

ঝুলনের জীবন গল্পের মতো। সেখানে ওঠা-পড়া আছে, আছে ঘাত-প্রতিঘাত। তবে দিনের শেষে আছে জিতে যাওয়ার হাসি। এমন এক জনকে নিয়ে সিনেমা হবে না, তাই হয় নাকি। ঝুলনের বায়োপিকে অভিনয় করছেন অনুষ্কা শর্মা। ঘটনাচক্রে যিনি আবার বিরাট কোহলির স্ত্রী। ছবির নাম চাকদহ এক্সপ্রেস। ছবিটি মুক্তি পাবে নেটফ্লিক্সে।

—ফাইল চিত্র।

১৪ ১৫

ঝুলনকে নিয়ে অনুষ্কার মন্তব্য, ‘‘যে সময়ে ঝুলন ক্রিকেটার হতে চেয়েছেন, এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রিকেটার হিসাবে নিজেকে মেলে ধরেছেন, তখনও খুব বেশি মহিলা ক্রিকেটকে পেশা করার কথা ভাবতে পারেননি।’’ এমন এক জনের জীবন নিয়ে ছবি করতে পেরে তিনি উচ্ছ্বসিত বলে জানান অনুষ্কা।

—ফাইল চিত্র।

১৫ ১৫

অবসরের আগেই নতুন দায়িত্ব পেয়ে গিয়েছেন। অনেক মেয়ের কাছে ঝুলন ক্রিকেটার হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা। শুধু ভারতীয় দলের জার্সিটা আর পরা হবে না। তবে এ বার থাকবেন প্রশিক্ষকের দায়িত্বে। বাংলার দলে তিনি এ বার মেন্টরের দায়িত্বে।

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement