‘রাইজ় রোর রিভোল্ট’, সংক্ষেপে ‘আরআরআর’। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে যে ছবি কার্যত বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। এই ছবির গান ‘নাটু নাটু’ ভারতের ঘরে এনেছে বহু প্রতীক্ষিত অস্কার। আর সেই সঙ্গে বিশ্বের দরবারে বন্দিত হয়েছেন পরিচালক এসএস রাজামৌলি।
তেলুগু ছবিতে রাজামৌলির কাজ শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছে। ‘বাহুবলী’ থেকে শুরু করে ‘আরআরআর’— লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনে একের পর এক সোনা ফলিয়েছেন ৪৯ বছরের পরিচালক।
রাজামৌলি পরিচালিত ছবিগুলির বাণিজ্যিক সাফল্য চোখধাঁধানো। ‘আরআরআর’-এর ‘নাটু নাটু’র তালে তালে পা মিলিয়েছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। ‘বাহুবলী’র অতিমানবিক অ্যাকশন দৃশ্য গোগ্রাসে গিলেছেন আপামর দর্শক।
পর পর বক্স অফিসে এই চূড়ান্ত সাফল্যের হাত ধরে রাজামৌলির সম্পত্তি বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বলিউডের আঁতুড়ঘর মুম্বই নয়, রাজামৌলি নিজের প্রাসাদ গড়ে তুলেছেন নিজামের শহর হায়দরাবাদে।
হায়দরাবাদের জুবিলি হিলস এলাকা নিজামের ‘সেলেব পাড়া’ নামে খ্যাত। দক্ষিণী সিনেমার তাবড় তারকা এই এলাকায় থাকেন। রাজামৌলিও নিজের বাংলো গড়েছেন সেখানেই। মাঝেমধ্যে তাঁর সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে সেই বাড়ির ঝলক দেখা যায়।
২০০৮ সালে এই বাংলো তৈরি করেছিলেন রাজামৌলি। তাঁর জুবিলি হিলসের এই বাংলোর সঠিক অর্থমূল্য জানা যায় না। তবে দক্ষিণী সিনেমার কয়েকটি সূত্রের দাবি, কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বাংলোটি গড়েছেন পরিচালক।
হায়দরাবাদে রাজামৌলির প্রতিবেশীর তালিকা তারকাখচিত। অল্লু অর্জুন, মহেশ বাবু, প্রভাস, বিজয় দেবেরাকোন্ডা, চিরঞ্জিবীর মতো তারকারা ওই একই পাড়ায় থাকেন। জুবিলি হিলসের দর মুম্বইয়ের বান্দ্রার চেয়ে কিছু কম নয়।
সম্প্রতি বিএমডব্লু সিরিজ়ের একটি কালো চার চাকার গাড়ি কিনেছেন রাজামৌলি। তাতে চড়েই তাঁকে ছবির প্রচারে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। বাজারে এই গাড়ির দাম দেড় থেকে পৌনে দু’কোটি টাকা।
বিএমডব্লু ছাড়াও একটি বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার গাড়ির মালিক রাজামৌলি। বাজারে ছাইরঙা সেই গাড়ির দাম ২ কোটি ৩৯ লক্ষ থেকে ৪ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা।
আরও একটি গাড়ি রয়েছে রাজামৌলির। তৃতীয় গাড়িটি উবার-লাক্সারিয়াস ভলভো এক্সসি ৪০। বাজারে এই গাড়ির আনুমানিক দাম ৪৪ লক্ষ টাকা। গাড়িটি ২০২২ সালেই কিনেছেন পরিচালক।
আইএমডিবি-র রেটিং অনুযায়ী, রাজামৌলির ‘আরআরআর’ দেশে বিদেশে মোট ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। ছবির লভ্যাংশের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন পরিচালক নিজে। দক্ষিণের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রিয়েল এস্টেট সম্পত্তিতে মোটা টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন রাজামৌলি।
২০০১ সালে ‘স্টুডেন্ট নম্বর ১’ ছবির হাত ধরে পরিচালনার কেরিয়ার শুরু করেছিলেন রাজামৌলি। তার পর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ ২২ বছর। দিন যত এগিয়েছে, পরিচালনায় আরও বিকশিত হয়েছে তাঁর প্রতিভা।
এই দীর্ঘ সময়ে দক্ষিণের সিনেমা জগতে ধীরে ধীরে রাজামৌলি নিজস্ব সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে তিনি ১৫৮ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। বিভিন্ন বিনিয়োগে আরও ফুলেফেঁপে উঠেছে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ।
সম্পত্তির হিসাব কষতে বসলে দেখা যায়, রাজামৌলির মাসিক রোজগার ২ কোটি টাকার বেশি। এক একটি ছবির লভ্যাংশ থেকে কমপক্ষে ২৪ কোটি টাকা আয় হয় তাঁর।
আগামী দিনে রাজামৌলির ঝুলিতে রয়েছে একগুচ্ছ বড় প্রজেক্ট। মহেশ বাবুর সঙ্গে ‘এসএসএমবি২৯’ ছবিতে কাজ করবেন তিনি। ওই ছবির জন্য দীপিকা পাডুকোন, আলিয়া ভট্টদের মতো বলিউড তারকাদের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে। রাজামৌলিকে বড়সড় সাফল্য এনে দিতে পারে এই ছবিও।