শনিবার উত্তেজিত জনতা পুলিশের বাধা অগ্রাহ্য করে ঢুকে পড়েছিল কলম্বোয় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের প্রাসাদে। রবিবার সেখানেই যেন পিকনিকের মেজাজ। সেখানেই দেখা গেল প্রেসিডেন্টের সাত মহলা প্রাসাদের একটি বিলাসবহুল ঘরের নরম বিছানায় দিব্য ভাতঘুম দিচ্ছে কয়েক জন তরুণ বিক্ষোভকারী।
শনিবার যেখানে ছিল গণ অসন্তোষের দগদগে ক্ষত, রবিবার সেখানেই পিকনিকের আমেজ। ছোটদের নিয়ে অনেকেই যেন ঘুরতে এসেছেন প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে। এমন সুযোগ হাতছাড়া করা যায়! যে পোডিয়াম থেকে প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতেন, সেখানে ছোট ছেলেকে দাঁড় করিয়ে মোবাইলে ছবি তুলছেন বড়রা।
প্রেসিডেন্টের ঘন সবুজ লনে দাঁড়িয়েও রীতিমতো পোজ দিয়ে সেলফি তুলতে দেখা গিয়েছে অনেককে। কেউ কেউ আবার প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের রাজকীয় নার্সারি থেকে চারাগাছও তুলে নিয়ে গিয়েছেন। বাড়িতেও থাক প্রেসিডেন্টের বাড়ির গাছ!
রবিবার সকালে অনেক তরুণকেই দেখা গেল গোটা প্রাসাদ ঘুরে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে আরামদায়ক সোফায় একটু জিরিয়ে নিতে। অনেকে মোবাইলে মগ্ন। আবার কেউ কেউ সোফায় পা ছড়িয়ে দিয়েছেন ঘুম।
এহ বাহ্য, প্রেসিডেন্টের বেডরুমে ঢুকে খাটে জায়গা না পেয়ে নিজেদের মধ্যে বালিশ ছোড়াছুড়ি করে খুনসুটির ছবিও উঠেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার ক্যামেরায়।
বিরাট প্রেসিডেন্ট নিবাস ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে এক দল যখন আরামদায়ক সোফায় বিশ্রামরত, তখন কয়েক জনকে দেখা গেল প্রাসাদের কেয়ারি করা নরম ঘাসের মাঠে আকাশের দিকে চেয়ে শুয়ে থাকতে।
সবই যখন হল, প্রেসিডেন্টের জিম আর বাদ থাকে কেন। অনেককেই দেখা গেল প্রাসাদের রাজকীয় জিমে কসরত করতে। তবে কসরত করার ভাব মুখে এনে ছবি তোলার লোকও কম নয়!
যেখানে দিন কয়েক আগে পর্যন্ত ঘুমোতেন রাজাপক্ষে, সেখানেই হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছে কেউ। আবার কেউ গা এলিয়ে ব্যস্ত মোবাইলে। প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ রাতারাতি যেন পর্যটনস্থল হয়ে উঠেছে।
প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে একাধিক সুইমিং পুল। গোতাবায়া পালিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বাড়ির দরজা খুলে রেখে। দু’দিন আগে যে সুইমিং পুলে গা ভাসাতেন দেশের প্রেসিডেন্ট, আজ সেই তরঙ্গে মিশেছে জনসাধারণের বারোয়ারি বপু।
শনিবারই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল, প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের সুইমিং পুল ব্যবহার করছে সাধারণ মানুষ। রবিবারও তার অন্যথা হল না। অনেকে প্রাসাদে ঢুকেই ডুব মারলেন সুইমিং পুলে।
এ দিকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে আজও জ্বলছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। রাষ্ট্রপতি পালিয়েছেন। সরকার ভেঙে পড়েছে। চার দিকে অব্যবস্থা। তার মধ্যে ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে খাদ্যের আকাল।
কলম্বো, গল কিংবা ক্যান্ডি— দেশের সমস্ত শহরের পেট্রল পাম্পগুলোর সামনে কয়েক মাইল লম্বা গাড়ির লাইন। শ্রীলঙ্কায় পেট্রল বিকোচ্ছে ভারতীয় মুদ্রায় ৬৫০ টাকা প্রতি লিটার। কিন্তু বেশির ভাগ পাম্পেই তেল শেষ।
জনতার দখলে রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ। অভিযোগ, প্রাসাদের অভ্যন্তরে মিলেছে থরে থরে টাকা। কার টাকা, কে রেখে গেলেন? এখনও সবই অজানা।