তক্কে তক্কে ছিল অনেক দিন। সুযোগটা এসেছিল গত শনিবার। আকাশ, জল, স্থল দিয়ে ইজ়রায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে শুরু করে হামাস। প্যালেস্তাইনের হয়ে অস্ত্র ধরা গোষ্ঠী। বসে থাকেনি ইজ়রায়েলও। হামাসকে নির্মূল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু হামাসকে নির্মূল করা কি আদৌ সোজা?
ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসের এই পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধ’-এর মতোই আপত্তিকর বলে জানিয়েছেন। এ-ও জানিয়েছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে উচিত শিক্ষা দিতে তৈরি তারা।
ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আপাতত হামাসের ‘নুখবা’ বাহিনীকে জব্দ করতে চায় তারা। গত শনিবার ইজ়রায়েল হামলার নেপথ্যে নাকি এই ‘নুখবা’ বাহিনী। তাই ভয়ঙ্কর এই বাহিনীকে যেন তেন ভাবে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর তারা।
‘নুখবা’ হল হামাসের অভিজাত বাহিনী। এই বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে বাছাই করেন হামাসের প্রবীণ এবং শীর্ষ নেতারা। বেশ কিছু পরীক্ষায় পাশ করে তবেই হওয়া যায় ‘নুখবা’-র সদস্য। আর সেই পরীক্ষাও নেহাত সহজ নয়।
কেন এত গুরুত্ব দেওয়া হয় এই ‘নুখবা’ বাহিনীকে? হামাসের হয়ে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল কাজ করে এই ‘নুখবা’ই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের হামলার ধরন হতে পারে আত্মঘাতী। সে সব মনে রেখেই যোগ দেন সদস্যেরা।
এই ‘নুখবা’ বাহিনী অতর্কিতে হামলায় পারদর্শী। শত্রুর ঘরে তল্লাশি চালিয়ে খুঁজে বের করে মানুষজনকে। তার পর খুন করে। শত্রুর এলাকায় প্রবেশের জন্য অভিনব পন্থা নেয় এই বাহিনী। সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তার মাধ্যমেই পৌঁছে যায় লক্ষ্যস্থলে।
ক্ষেপণাস্ত্র, স্নাইপার রাইফেল, ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র চালনায় পারদর্শী এই ‘নুখবা’ বাহিনী। হামাসের শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তার দায়িত্বও রয়েছে এদের কাঁধে।
ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস জানিয়েছেন, গাজ়া সিটি থেকে গাজ়ার অন্য প্রান্তে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে রেখেছে হামাস। সেই সুড়ঙ্গের মাধ্যমেই নিমেষে যাতায়াত করে তারা।
২০০৭ সালে গাজ়া দখল করে প্যালেস্তাইনের হামাস গোষ্ঠী। সেই থেকে এই সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ করছে হামাস, এমনটাই দাবি কনরিকাসের।
কনরিকাস জানিয়েছে, এই সুড়ঙ্গকে ব্যবহার করেই ইজ়রায়েলে হামলা চালিয়েছে হামাস। গাজ়ার ভিতরের এই সুড়ঙ্গ দিয়ে ইজ়রায়েল সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় অনায়াসে পৌঁছে গিয়েছে তারা। তার পর সেখান থেকে হামলা চালাচ্ছে ইজ়রায়েলের ভিতরে।
ইজ়রায়েল জানিয়েছে, এখন গাজ়ার এই সুড়ঙ্গগুলিকেই নিশানা করেছে তাদের বাহিনী। ইজ়রায়েলের ধারণা, ওই সুড়ঙ্গে ঘাপটি মেরে রয়েছে ‘নুখবা’ বাহিনীর সদস্যেরা।
পরীক্ষা দিয়ে হামাসের এই বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর নিতে হয় প্রশিক্ষণ। কী ভাবে পণবন্দি করতে হবে শত্রুপক্ষের নাগরিকদের, তা-ও হাতে ধরে শেখানো হয় ‘নুখবা’ বাহিনীর সদস্যদের।
হামাস পণবন্দি করতে সিদ্ধহস্ত। ইজ়রায়েলের বহু নাগরিককে পণবন্দি করেছে তারা। গাজ়ায় নিয়ে এসে রেখেছে তাঁদের। এ রকমই ১৩ জন ইজ়রায়েলি নাগরিক ইজ়রায়েলেরই বিমান হানায় মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস।
এই ইজ়রায়েলি নাগরিকদের পণবন্দি করার নেপথ্যেও রয়েছে ‘নুখবা’। এই বাহিনীকে বিভিন্ন অস্ত্রচালনা, বিস্ফোরণ ঘটনার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। স্কুবা ডাইভিংও শেখেন সদস্যেরা। গভীর সমুদ্র দিয়ে সাঁতার কেটে ইজ়রায়েলের উপকূলে পৌঁছে হামলা চালাতে সমর্থ তাঁরা।
‘নুখবা’-র সদস্যেরা গ্রেনেড ছোড়ারও প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৪ সালের গাজ়ার যুদ্ধে এই বাহিনীর শয়ে শয়ে সদস্য প্রাণ হারিয়েছিলেন। ইজ়রায়েল সেনার হাতে নিহত হয়েছিলেন তাঁরা।
এর পর ফের এই বাহিনী আড়েবহরে বৃদ্ধি করার কাজ শুরু করে হামাস। শুরু হয় সদস্য সংগ্রহ। প্যালেস্তাইনের বহু নাগরিক যোগ দেন এখানে। তবে মনে করা হয়, ‘নুখবা’ ছেড়ে বহু সদস্য আইএসে যোগ দিয়েছিলেন। সে কারণেও কিছুটা দুর্বল হয়েছিল এই বাহিনী।