টেলিভিশন জগতের মাধ্যমে অভিনয় শুরু। বড় পর্দায় কেরিয়ার গড়ার পর জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেন। কিন্তু পুত্র এত সফল হওয়া সত্ত্বেও বাস চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতেন দক্ষিণী ফিল্মজগতের খ্যাতনামী অভিনেতা যশের বাবা।
ছোটবেলা থেকে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল যশের। পড়াশোনা ছেড়ে অভিনয় জগতের দিকে ছুটে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে অভিনয় শুরু করুন যশ।
যশের বাবা পেশায় বাসচালক ছিলেন। তাঁর মা ঘরের কাজ সামলাতেন। নিজস্ব একটি দোকানও ছিল তাঁদের। পরিবারের সবাই মিলে সেই দোকান সামলানোর কাজ করতেন। যশও পড়াশোনার পাশাপাশি দোকান সামলাতেন।
পুত্র সরকারি চাকরি করুক, যশের বাবা-মায়ের তেমনই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি পুত্রের আগ্রহ দেখে তাঁকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার অনুমতি দেন যশের বাবা-মা।
১৬ বছর বয়সে একটি দক্ষিণী ছবির সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ শুরু করেন যশ। কিন্তু শুটিংয়ের দু’দিন পর ছবির কাজই বন্ধ হয়ে যায়। শোনা যায়, যশের পকেটে সেই মুহূর্তে মাত্র ৩০০ টাকা ছিল।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে যশ বলেছিলেন, ‘‘ছবির কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমি যদি আবার বাড়ি ফিরে যেতাম তা হলে আর কোনও দিন বেঙ্গালুরু ফিরতে পারতাম না। তাই আমি কষ্ট করে ওখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’
বেঙ্গালুরুর একটি নাটকের দলে কাজ জোগাড় করেছিলেন যশ। মঞ্চের পিছনে নানা রকম কাজ সামলাতেন তিনি। প্রতি দিন ৫০ টাকা উপার্জন ছিল তাঁর।
নাটকের দলে কাজ করার সূত্রে অভিনয়ের আদবকায়দাও রপ্ত করতে থাকেন যশ। ২০০৪ সালে প্রথম বার নাটকের মঞ্চে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
থিয়েটারের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন যশ। বেঙ্গালুরুর একটি কলেজে কলাবিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ২০০৪ সালে দক্ষিণী ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
তিন বছর ধরে বহু ধারাবাহিকে অভিনয় করেন যশ। আর্থিক পরিস্থিতি ভাল হলে বাবা-মাকে বেঙ্গালুরু নিয়ে চলে আসেন অভিনেতা।
কানাঘুষো শোনা যায়, ধারাবাহিকে অভিনয় করার মুহূর্তে যশ সাতটি ছবির প্রস্তাব পান। কিন্তু চিত্রনাট্য পছন্দ না হওয়ায় সব প্রস্তাবই ফিরিয়ে দেন। সেই সময় দক্ষিণী ফিল্মজগতের কেউ কেউ মন্তব্য করেছিলেন যে, যশ নবাগত হয়েও অহঙ্কারী।
২০০৭ সালে কন্নড় ভাষার একটি ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন যশ। যদিও এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। এক বছর পর ‘রকি’ ছবির মাধ্যমে প্রথম মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। তার পর থেকেই একাধিক দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত যশ অভিনীত ‘কেজিএফ’-এর প্রথম পর্ব বক্স অফিসে চুটিয়ে ব্যবসা করে। চার বছর পর মুক্তি পাওয়া এই ছবির দ্বিতীয় পর্বও দুর্দান্ত ব্যবসা করে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ছবিনির্মাতা এসএস রাজামৌলি জানিয়েছিলেন, যশকে তিনি সুপারস্টার ভাবেন না। তাঁর কাছে প্রকৃত সুপারস্টার যশের বাবা। তার কারণও জানিয়েছিলেন তিনি।
রাজামৌলি বলেছিলেন, ‘‘যশের টাকার অভাব নেই। আমি জানতে পেরেছি ওর বাবা আগে বাস চালাতেন। যশ জনপ্রিয় হওয়ার পরেও ওর বাবা বাস চালিয়ে রোজগার করেন।’’
২০১৬ সালে দক্ষিণী ধারাবাহিকজগতের অভিনেত্রী রাধিকা পণ্ডিতের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন যশ। ধারাবাহিকের শুটিংয়ের সময় আলাপ হয় দুই তারকার। বর্তমানে স্ত্রী এবং দুই সন্তানের সঙ্গে বিলাসবহুল আবাসনে থাকেন যশ।