Sonam Norbu Ladakh Airstrip

Sonam Norbu: বুলডোজার ছাড়া গড়েন এয়ারস্ট্রিপ, পাক হানাদারদের হাত থেকে লাদাখকে বাঁচান এই ইঞ্জিনিয়ার

লাদাখের প্রথম ব্রিটিশ-প্রশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার সোনম নোরবু লাদাখকে পাকিস্তানের দখল থেকে রক্ষা করতে বিমান অবতরণ করার জন্য একটি এয়ারস্ট্রিপ তৈরি করেছিলেন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২২ ১০:১৮
Share:
০১ ১৯

প্রতিরক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে এমন অনেক নায়ক রয়েছেন যাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় ধরা না দিলেও জাতি গঠনে তাঁদের অবদান দেশবাসী এখনও মনে রেখেছে। রেখেছে সোনম নোরবুর মতো মানুষকে, যিনি না থাকলে হয়তো লাদাখ পুরোপুরিই পাকিস্তানের দখলে চলে যেত।

০২ ১৯

১৯০৯ সালে লেহতে নিয়াচু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সোনম। পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ড থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন।

Advertisement
০৩ ১৯

সাল ১৯৪৭। স্বাধীনতার পরেও পাকিস্তানের নজর ছিল ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি দখলের দিকেই। ডিসেম্বর মাস নাগাদ গিলগিট-বালটিস্তানের স্কার্দু শহর পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল। লেহ অভিমুখে উপজাতীয় হানাদারদের আক্রমণ রুখে দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল শের জং থাপার নেতৃত্বাধীন বাহিনী। মাত্র ৩৩ জনের বাহিনী লাদাখকে দখলের হাত থেকে রক্ষা করে রেখেছিল।

০৪ ১৯

সেই সময় সোনম তাঁর কর্মজীবনের শীর্ষে। দেশকে রক্ষার জন্য সবসময় এগিয়ে আসতেন তিনি। এ বারেও তার অন্যথা হল না। লাদাখ যখন বিপদের মুখে, তখন সেনাবাহিনীর সুবিধার কথা চিন্তা করে তিনি এক অভিনব পরিকল্পনা করলেন।

০৫ ১৯

খারাপ আবহাওয়ার জন্যে পাহাড়ি রাস্তায় সেনাদের যাতায়াত করা দুষ্কর হয়ে ওঠে। লাদাখে আক্রমণ হলে জরুরি সহায়তার জন্য এই এলাকায় সেনা এবং তাঁদের রসদ তাড়াতাড়ি পৌঁছনো সম্ভব হত না। ফলে, হানাদারেরা আরও ক্ষতি করতে পারত।

০৬ ১৯

লাদাখকে রক্ষা করার এক মাত্র উপায় বিমানের মাধ্যমে সেনাদের সেই জায়গায় পৌঁছনো। কিন্তু, সেই বিমান অবতরণ করানোর জন্য কোনও এয়ারস্ট্রিপ বা রানওয়ে ছিল না। তাই লাদাখে একটি এয়ারস্ট্রিপ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন সোনম।

০৭ ১৯

১৯৪৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডোগরা রেজিমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাটালিয়ন পায়ে হেঁটে শ্রীনগর থেকে জোজিলার দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। তাঁদের সঙ্গী ছিলেন সোনম। ৮ মার্চ তাঁরা সকলে লেহ-তে পৌঁছন। তার পরেই তিনি এয়ারস্ট্রিপ নির্মাণের প্রকল্প শুরু করেন।

০৮ ১৯

কাজ শুরু করার তিন সপ্তাহের মধ্যেই ২,৩০০ গজের একটি এয়ারস্ট্রিপ নির্মাণ শেষ করেন তিনি। কোনও প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়াই এই অস্থায়ী এয়ারস্ট্রিপ নির্মাণের কাজটি শুরু করেন। তিনি শুধু ১৩ হাজার টাকা তাঁর সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।

০৯ ১৯

যান্ত্রিক সরঞ্জামের সাহায্য ছাড়া শুধু মাত্র কায়িক শ্রমের মাধ্যমে ৬ এপ্রিল নাগাদ রানওয়েটি তৈরি করা হয়েছিল। চুট-রন্তকের বাবু দর্জি প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগাড় করতে সাহায্য করেছিলেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল এনএস ব্রারের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, সোনম নোরবু এতটাই সৎ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন যে বিমানবন্দরটি প্রস্তুতের জন্য ১০,৮৯১ টাকা খরচ করার পরে যে পরিমাণ টাকা অবশিষ্ট ছিল তা তিনি কোষাগারে জমা দিয়েছিলেন।

১০ ১৯

রানওয়ে তৈরির পর, নোরবু অবিলম্বে সেনাদের কাছে একটি বেতার বার্তা পাঠান যাতে লাদাখে শক্তিবৃদ্ধির জন্য দ্রুত বিমান পাঠানো হয়। বার্তা পেয়ে ২৪ মে এয়ার কমোডর মেহর সিংহ, কো-পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এসডি সিংহ-সহ জেনারেল থিমাইয়া ডাকোটা বিমানে লেহ-তে অবতরণ করেছিলেন।

১১ ১৯

সোনম যখন বিমান অবতরণের জন্য রানওয়ে তৈরি করেছিলেন, সেই সময়ে স্থানীয় লোকেরা স্বচক্ষে একটি সাইকেলও দেখেননি। তাঁরা বিমানকে কোনও উড়ন্ত ঘোড়ার সঙ্গে তুলনা করতেন। এমনকি, তাঁরা ঘোড়ার খাবার নিয়েও রানওয়েতে ছুটে যেতেন। সোনমের হাত ধরেই লাদাখের মানুষেরা আধুনিক জীবনের ঝলক দেখতে পান।

১২ ১৯

অন্য দিকে, পাকিস্তানি হানাদাররা ইতিমধ্যেই লাদাখ-কোনকা (নিমু এবং তারুর নিকটবর্তী এলাকা) পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। লেহ ছাড়া জোজিলা থেকে কার্গিল, খালতসি থেকে নিমু পর্যন্ত পুরো এলাকাই হানাদারদের দখলে ছিল।

১৩ ১৯

এক মাত্র আকাশপথের মাধ্যমেই সেখানে সেনা মোতায়েন করা যেত, কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে সেনা সেখানে পৌঁছতে পারে না। এক সপ্তাহ পরে ছ’টি ডাকোটা বিমান রানওয়েতে অবতরণ করে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ-সহ ২/৪ গোর্খা রাইফেলস্‌ লেহ বিমানবন্দরে আসে।

১৪ ১৯

পরবর্তীতে, রোটাং পাস দিয়েও সড়কপথে লেহতে পৌঁছয় সেনারা। জুলাই ও অগস্ট মাসের মধ্যে শত্রুবাহিনীকে পরাস্ত করে লেহকে রক্ষা করেছিল সেনাবাহিনী। ভারতীয় বাহিনী ‘অপারেশন বাইসন’-এর অধীনে ১৯৪৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে জোজিলা এবং কার্গিল পুনরুদ্ধার করে।

১৫ ১৯

লাদাখকে পতনের হাত থেকে রক্ষাকর্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এয়ার কমোডর মেহর সিংহ, যিনি পরবর্তীকালেমহাবীর চক্রে ভূষিত হয়েছেন। এই মিশনের পরিকল্পনা করেছিলেন জেনারেল থিমাইয়া। তাঁকেও পরবর্তীতে সেনাপ্রধান পদে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু এর পিছনে সোনম নোরবু কৃতিত্ব অসামান্য।

১৬ ১৯

সোনম পরে জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ত দফতরে যোগদান করেন এবং বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ারও হন। জাতির প্রতি তাঁর সেবার জন্য, ভারত সরকার তাঁকে ১৯৬১ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছিল।

১৭ ১৯

লাদাখে উন্নয়ন কমিশনার হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পরে, নোরবুকে ১৯৭১ সালে মঙ্গোলিয়ান পিপলস রিপাবলিকের প্রথম ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। চার বছর পর মহম্মদ আবদুল্লাহর মন্ত্রিসভায় পূর্ত ও বিদ্যুৎ মন্ত্রীর পাশাপাশি লাদাখ বিষয়ক মন্ত্রীর ভূমিকাও পালন করেছিলেন তিনি।

১৮ ১৯

আবদুল্লাহ তাঁর প্রতি এতটাই আস্থা রেখেছিলেন যে রাজ্যের বাজেটের ৭০ শতাংশেরও বেশি পরিমাণ তাঁকেই দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রী থাকাকালীন লাদাখে সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। লাদাখকে আন্তর্জাতিক পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে লেহকে বিমান পরিষেবার সঙ্গেও যুক্ত করেছিলেন সোনম।

১৯ ১৯

৭০ বছর বয়সে ১৯৮০ সালে মারা যান সোনম। লাদাখের প্রথম ব্রিটিশ-প্রশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ারের স্মরণে লেহ-র স্কেতসাকের কাছে একটি স্মারক স্তুপ নির্মাণ করা হয়েছে। লেহ-র প্রধান হাসপাতাল তাঁকে উৎসর্গ করা হয়েছে। নাম- সোনম নোরবু মেমোরিয়াল হাসপাতাল (এসএনএমএস)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement