তাঁরা ভোটে লড়েন। ভোটে জিতে নিজের কেন্দ্রের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁদের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরেন। তাঁদের কেউ কাউন্সিলর, কেউ বিধায়ক, কেউ সাংসদ। তবে তাঁদের অনেকেই নিজেদের সাফল্য-ব্যর্থতা, জয়-পরাজয়ের পাশাপাশি চেহারার জন্যও পরিচিত।
সে রকমই এক জন রাজনীতিক হলেন আপের রাঘব চাড্ডা। দিন কয়েক আগে পরিণীতি চোপড়ার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন। তবে পরিণীতির সঙ্গে বিয়ের অনেক আগেই থেকেই দেশবাসীর কাছে পরিচিত মুখ রাঘব।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আপের হয়ে বক্তৃতা করতে দেখা যায় রাঘবকে। তিনি দলের মুখপাত্র। সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হওয়ার পাশাপাশি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। স্কুল পাশ করার পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ ইন্ডিয়া থেকে পড়াশোনা করে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হন তিনি।
পরে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে ইএমবিএ সার্টিফিকেশন কোর্স করেন। অণ্ণা হজারে যখন দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন করছেন, তখনই অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। আপের জন্মলগ্ন থেকেই সদস্য তিনি। একটি সংবাদপত্রের দাবি, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকা।
অতীতে বলিউডের ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ছবির নাম ছিল ‘মিলে না, মিলে হম’। ছবি হিট করেনি। তার পর আর দ্বিতীয় কোনও ছবিতে ভাগ্য যাচাই করার চেষ্টা করেননি চিরাগ পাসওয়ান। যোগ দেন রাজনীতিতে।
বাবা রামবিলাস পাসোয়ান ছিলেন দুঁদে রাজনীতিক। বহু বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর লোকজনশক্তি পার্টির (এলজেপি) দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে প্রায় ঘোল খাইয়ে ছেড়েছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত বিধানসভা নির্বাচনে চিরাগের দল ছাপ ফেলতে পারেনি।
দলের ভাঙনও ঠেকাতে পারেননি এই সুপুরুষ রাজনীতিক। ২০২২ সালে এলজেপি ছেড়ে নতুন দল গড়েন তাঁর কাকা পশুপতিকুমার পারস। তার পরেও চেহারার জন্যই পরিচিত নাম বিহারের জামুই লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ চিরাগ। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে দলিত ভোটই তাঁর লক্ষ্য বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পেশের সময় যে হলফনামা দিয়েছিলেন চিরাগ, তাতে দেখা গিয়েছে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৮৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৬ টাকা।
ছোটপর্দায় প্রথম কাজ। তার পর সিনেমা। একের পর এক সিনেমা হিট। বাংলার ঘরে ঘরে পরিচিত মুখ মিমি চক্রবর্তী। সিনেমার মতো সফল রাজনীতিতেও। সংসদেও তিনি পরিচিত মুখ।
১৯৮৯ সালে জন্ম মিমির। প্রথম ছবি ‘বাপি বাড়ি যা’। ২০১৯ সালে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তৃণমূলের টিকিটে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হন। ভোটেও জেতেন। নির্বাচনী হলফনামা অনুসারে তাঁর স্থাবর সম্পত্তির মোট পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। যে ফ্ল্যাটটি তিনি কেনেন, তার দাম ছিল ১কোটি ১৯ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৭৫ টাকা।
২০২১ সাল থেকে তিনি কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান মন্ত্রী। ইস্পাত মন্ত্রকও তাঁর হাতে। সেই জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডেও যথেষ্ট পরিচিত মুখ। রাজনৈতিক কেরিয়ারের পাশাপাশি চেহারার জন্যও চর্চিত শিন্ডে রাজপরিবারের ‘রাজপুত্র’।
এককালে ছিলেন কংগ্রেসে। ২০২০ সালে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করে বিজেপি। তার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, গ্বালিয়রে যে প্রাসাদে শিন্ডে পরিবারের বাস, তার মূল্য প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। ওই প্রাসাদের দরবার হলে বিশ্বের সব থেকে বড় কার্পেট বিছানো রয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের তরফে জানানো হয়েছিল, নির্বাচনী হলফনামায় জ্যোতিরাদিত্য জানিয়েছিলেন, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩৭৯ কোটি টাকা।
দেশবাসীর কাছে আর এক পরিচিত নাম বিজেপির তেজস্বী সূর্য। মাঝেমধ্যে কড়া আক্রমণ করেন বিরোধীদের। তা করতে গিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যও করেন সুপুরুষ তেজস্বী।
বেঙ্গালুরু দক্ষিণের সাংসদ তিনি। ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার সভাপতি। একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ১৩.৪৬ লক্ষ টাকা।
সংসদে আর এক পরিচিত মুখ নুসরত জাহান। প্রথমে সিনেমার জগৎ, সেখান থেকে রাজনীতিতে গিয়েছেন তিনি। দু’জায়গাতেই নজর কেড়েছেন। এখন বসিরহাটের সাংসদ।
রাজ চক্রবর্তীর ‘শত্রু’ দিয়ে ছবির জগতে প্রবেশ। তার পর একের পর এক হিট ছবি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে বসিরহাট থেকে প্রার্থী হন। জিতেও যান। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, নুসরতের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৯০ লক্ষ ৮৮ হাজার ৩৯১ টাকা।
দুঁদে রাজনীতিক তিনি। তার পাশাপাশি মহিলা মহলে দারুণ জনপ্রিয় সচিন পাইলট। বাবা রাজেশ পাইলটের জুতোয় পা গলিয়ে রাজনীতিতে আসেন। অল্প বয়সেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান।
২০০৪ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে সাংসদ হয়েছিলে সচিন। ২০১৮ সালে রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে জিতে রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের বিরুদ্ধে বিধায়কদের নিয়ে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের পদ খোয়ান।
২০১৮ সালে রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পেশের সময় যে হলফনামা দিয়েছিলেন সচিন, তাতে দেখা যায় তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৬ কোটি ৪৩ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা।
ওড়িশার বোলাঙ্গিরের সাংসদ তিনি। বিজু জনতা দলের অন্যতম নেতা কালিকেশ নারায়ণ সিংহ দেও। বাবা অনঙ্গ উদয় সিংহ দেও এবং দাদু রাজেন্দ্র নারায়ণ সিংহ দেও ছিলেন সাংসদ। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২০.৫ কোটি টাকা।
কম বয়সে রাজনীতিতে প্রবেশ। তখন থেকেই দেশবাসীর নজর কেড়েছেন ওমর আবদুল্লা।
ওমরের জন্ম ১৯৭০ সালে। ১৯৯৮ সালে সাংসদ হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ। পর পর তিন লোকসভা নির্বাচনে জয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন ওমর। ২০০৯ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ওমর। জম্মু ও কাশ্মীরের কনিষ্ঠতম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি।