আবার বিতর্কে টেলি অভিনেত্রী শ্বেতা তিওয়ারি। নতুন ওয়েব সিরিজের সাংবাদিক বৈঠকে শ্বেতা মজা করে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘আমার ব্রা-এর মাপ নিচ্ছেন ভগবান।’’ আর যাবে কোথায়, এমন মন্তব্য করলে কি কেউ ছেড়ে দেয়! তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় ভোপালের শ্যামালা হিলস থানায়। বলা হয়, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছেন তিনি। অতঃপর, ক্ষমা চাইতে হল তাঁকে।
বিবৃতি দিয়ে শ্বেতা জানালেন, ‘আমার কিছু কথা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রেক্ষিত বিহীন ভাবে কিছু কথা তুলে ধরা হয়েছে। আমি আমার সহ অভিনেতা সৌরভ রাজ জৈনকে তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় চরিত্র ‘ভগবান’-এর নামে ডেকে ওই কথাগুলো বলেছিলাম। কারও কোনও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু আমার কথায় যদি কেউ আঘাত পান, তা হলে আমি দুঃখিত।’
এ কথা সত্যি যে, ‘মহাভারত’ ধারাবাহিকে সৌরভ কৃষ্ণের ভূমিকায় অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। নতুন এই ওয়েব সিরিজে পর্দার কৃষ্ণ ব্রা-এর দর্জির চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সেই সূত্রেই ঠাট্টা করে শ্বেতা ওই মন্তব্য করেন। যার ব্যাখ্যা নিজের বিবৃতিতে দিয়েছেন শ্বেতা।
কিন্তু বিবৃতি জারি করার আগে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। শ্বেতার মন্তব্য সামনে আসার পরই মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র ভোপাল পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে এই মামলার রিপোর্ট চেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মন্তব্যটি শুনেছি আমি। ঘোরতর প্রতিবাদ জানাচ্ছি শ্বেতা তিওয়ারির ওই কথাটির। তদন্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মামলার রিপোর্ট চেয়েছি আমি পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে। তার পরে পদক্ষেপ করা হবে অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে।’’
শ্বেতাকে নিয়ে যে এই প্রথম বিতর্ক হল এমন নয়। ব্যক্তিগত জীবনেও একাধিক বিতর্কের মুখে পড়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে নিজের দু’টি দাম্পত্য ভেঙে পড়েছে তাসের ঘরের মতো। জীবন বারবার কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিয়েছে ‘কসৌটি জিন্দগি কে’-র অভিনেত্রী শ্বেতাকে।
উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়ে শ্বেতার জন্ম। ১৯৮০-র ৪ অক্টোবর। বিনোদন দুনিয়ায় কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে শ্বেতা পরে চলে আসেন মুম্বই। টেলিভিশনে তাঁর প্রথম কাজ একতা কপূরের প্রোডাকশনে, ‘কহিঁ কিসি রোজ’-এ।
এই ধারাবাহিকে ভাল অভিনয়ের সুবাদে আসে পরের সুযোগ। এ বার তিনি ‘কসৌটি জিন্দগি কে’ সিরিয়ালের প্রেরণা বজাজ। ২০০১ থেকে ২০০৮ টানা সম্প্রচারিত এই মেগা সিরিয়াল বরাবর ছিল টিআরপি ও জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রথম সারিতে।
ভারতীয় টেলিভিশনের যে কয়েকটি চরিত্র দর্শকদের পরিবারের প্রায় সদস্য হয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে ‘প্রেরণা বজাজ’ অন্যতম। এরপর শ্বেতাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
শ্বেতার কাজের মধ্যে অন্যতম হল ‘খিচড়ি’, ‘ইয়ে রিশতা ক্যায়া কেহলতা হ্যায়’, ‘আদালত’, ‘রঙ্গোলি’ এবং ‘পরভরিশ-কুছ খাট্টি কুছ মিঠি’। কাজ করেছেন বড় পর্দাতেও। ‘মদহোশি’, ‘বিন বুলায়ে বরাতি’ এবং ‘মিলে না মিলে হম’-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নেয়।
অভিনয়ের পাশাপাশি রিয়েলিটি শোয়েও শ্বেতা নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। তিনি বিগ বস-এর চতুর্থ সিরিজে জয়ী হন। ‘নাচ বালিয়ে’-এর দ্বিতীয় সিরিজে শ্বেতার পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া।
১৯৯৮ সালে শ্বেতা বিয়ে করেন ভোজপুরি সিনেমার নায়ক রাজা চৌধুরিকে। দু’ বছর পরে জন্ম তাঁদের একমাত্র মেয়ে পলকের। কিন্তু শ্বেতা-রাজার দাম্পত্য প্রথম থেকেই বিঘ্নিত।
শ্বেতার অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় প্রতিদিন তাঁকে মারধর করতেন রাজা। এমনকি, শ্যুটিং সেটে গিয়েও অভব্য আচরণ করতেন রাজা। ২০০৭ সালে ভেঙে যায় তাঁদের দাম্পত্য।
তিন বছর প্রেমের পরে ২০১৩ সালে অভিনেতা অভিনব কোহালিকে বিয়ে করেন শ্বেতা। তিন বছর পরে জন্ম হয় তাঁদের ছেলে রেয়াংশের। শ্বেতার প্রথম পক্ষের মেয়ে পলকও থাকতেন তাঁদের সঙ্গেই।
প্রথম কয়েক বছর শ্বেতার দ্বিতীয় দাম্পত্য নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও গুঞ্জন ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে এই সম্পর্কেও ফাটল দেখা দেয়। ২০১৯-এর মাঝামাঝি স্বামী অভিনবের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ দায়ের করেন শ্বেতা। পুলিশ গ্রেফতার করে অভিনবকে।
প্রথমে শ্বেতার অভিযোগ ছিল, মত্ত অবস্থায় তাঁকে মারধর করতেন অভিনব। শ্লীলতাহানি ও গালিগালাজের অভিযোগও ছিল শ্বেতার তরফে। এমনকি, তাঁর প্রথম পক্ষের মেয়ে পলকের সঙ্গে অভিনব অভব্য আচরণ করতেন বলে পুলিশকে জানান শ্বেতা।
পরে শ্বেতা নিজের বক্তব্য পরিবর্তন করেন। জানান, তাঁকে মারধর না করলেও মানসিক নির্যাতন করতেন অভিনব। প্রথমে চুপ থাকলেও পরে এই প্রসঙ্গে মুখ খোলেন তরুণী পলকও।
ইনস্টাগ্রামে উনিশ বছরের পলক সে সময় লিখেছিলেন, ‘‘আমার কিছু জিনিস স্পষ্ট করে বলার রয়েছে। আমি পলক তিওয়ারি।একাধিক বার গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হয়েছি।’’ তিনি সরাসরি তাঁর সৎ বাবার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তোলেন। লেখেন, ‘আমাকে মারা হলেও এর আগে আমার মাকে কখনই মারধর করেননি অভিনব কোহালি। যে দিন মা এফআইআর করে, সে দিনই মাকে মারধর করা হয়। এই প্রথম।’
অভিনবের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রসঙ্গে পলক লেখেন, ‘আমাকে শারীরিক ভাবে কখনওই নির্যাতন করেননি অভিনব। তবে তিনি ধারাবাহিক ভাবে আমার প্রতি অশ্লীল মন্তব্য করতেন, যা বাবা হিসেবে একেবারেই অশোভন।’’
মায়ের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে পালক লেখেন, ‘‘আপনাদের কোনও ধারণা নেই, দু’টি বিয়েতেই আমার মাকে কী পরিমাণ অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তাই খুব অল্প জেনে তা নিয়ে মন্তব্য বা আলোচনা করার কোনও অধিকার আপনাদের নেই।’
পলকের আরও বক্তব্য ছিল, ‘‘সময় হয়েছে মায়ের পাশে দাঁড়ানোর। ওঁর মতো মনের জোর আমি আর কারও মধ্যে দেখিনি। নিজের চোখে মায়ের সংগ্রামের প্রতিটি মুহূর্ত দেখেছি আমি।’’
জীবনযুদ্ধে শ্বেতার পাশে তাঁর বড় বন্ধু কন্যা পলক। দুই সন্তানের সিঙ্গল মাদার শ্বেতা আবার কাজে ফিরেছেন। সম্প্রতি বালাজি প্রযোজনার ওয়েব সিরিজ ‘হাম তুম অ্যান্ড দেম’-এর ট্রেলরে তাঁকে সাহসী চুম্বনদৃশ্যে দেখা গিয়েছে। শ্বেতার নিজের কুণ্ঠা এবং সঙ্কোচ থাকলেও এই কাজে তিনি মেয়ের সাদর সমর্থন পেয়েছেন। পলকেরও ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে অভিনয়কে কেরিয়ার করার
দু’টি ব্যর্থ দাম্পত্য নিয়ে কি তিনি বিব্রত? পর্দার প্রেরণার কথায়, ‘‘দ্বিতীয় বিয়ে বলে কোনও সমস্যা হবে না, এমন কি কোথাও লেখা আছে? আমি অন্তত সাহস দেখিয়ে প্রতিবাদ করেছি। জানিয়ে দিয়েছি, ওর (অভিনব) সঙ্গে আর ঘর করব না। আমার সন্তানদের যাতে ভাল হয়, সেটাই করেছি। লোকে কী বলবে, তার ভয় পাই না।’’
তবে ব্রা-বিতর্কে এই প্রতিবাদী চরিত্রকে দেখা গেল না। সেখানে দু’ পা পিছিয়ে বিবৃতি দিতে হল শ্বেতাকে।