ক্রিকেট মাঠে গোলার মতো বল ছুড়ে কত বার যে বিপক্ষের মিডল স্ট্যাম্প উপড়ে দিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। ২২ গজে ব্যাটারদের দিকে এমন ভাবে তেড়ে যেতেন, যেন মনে হত কাউকেই পরোয়া করেন না। এককালে বহু ব্যাটারের ত্রাস ছিলেন পাকিস্তানের দীর্ঘদেহী পেসার শোয়েব আখতার।
এ হেন শোয়েব নাকি এক বার এমন কীর্তি করেছিলেন যে সচিন তেন্ডুলকরের পায়ে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। এমনকি, তিনি নাকি সচিনের কাছে ক্ষমাভিক্ষাও করেছিলেন। গোটা ঘটনা নিয়ে হাসির রোল উঠত টিম ইন্ডিয়ার সাজঘরে। কী সেই ঘটনা? তা-ই খোলসা করেছিলেন সচিনের সতীর্থ তথা টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ওপেনার বীরেন্দ্র সহবাগ।
৬ ফুটের দীর্ঘদেহী শোয়েব কেন ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির উচ্চতার সচিনের কাছে ‘মাথা নত’ করেছিলেন? নাহ্! এ ঘটনায় ক্রিকেটীয় কারণ লুকিয়ে নেই।
সংবাদমাধ্যমের কাছে ওই ঘটনার সন-তারিখ অবশ্য জানাননি সহবাগ। তবে ঘটনার খুঁটিনাটি তুলে ধরেছেন। কী এমন হয়েছিল?
সহবাগ জানিয়েছিলেন, লখনউয়ে ভারত-পাক ক্রিকেটারদের নিয়ে এক জমজমাট পার্টিতে এমন কিছু ঘটেছিল, যাতে আড়ালে আবডালে হেসে গড়াগড়ি খেতে হত তাঁদের।
রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেসের পেটানো দেহ নাকি ওই পার্টিতে সচিনের ভার বইয়ে পারেননি। দু’জনেই অবশ্য মেঝেয় গড়াগড়ি খেয়েছেন। তবে কি সচিনকে কোলে তোলার চেষ্টা করেছিলেন শোয়েব? খানিকটা নাকি তেমনই ঘটেছিল।
সহবাগের কথায়, ‘‘এক বার ভারত এবং পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের জন্য লখনউয়ে একটা পার্টি হয়েছিল। তাতে বেশ মদ্যপান করেছিলেন শোয়েব।’’
ওই অবস্থায় নাকি সচিনের সঙ্গে ‘লজ্জাজনক’ কাণ্ডটি ঘটিয়ে ফেলেন শোয়েব। সেটা কী? সহবাগ বলে চলেন, ‘‘অনেকটা মদ খেয়ে সচিনকে তোলার চেষ্টা করেছিলেন শোয়েব।’’
রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেসের ওই কীর্তির কথা মনে করে সহবাগের মন্তব্য, ‘‘যদিও (নেশাগ্রস্ত অবস্থায়) শোয়েবের পক্ষে সচিন বেশ ভারী ছিলেন।’’ তার পর কী হয়েছিল?
সহবাগ বলেছিলেন, ‘‘শোয়েব-সচিন, দু’জনেই মেঝেয় গড়িয়ে পড়ে গিয়েছিলেন।’’ ক্রিকেটবিশ্বের দুই সুপারস্টারকে ওই অবস্থায় গড়াগড়ি খেতে দেখে হাসি থামাতে পারেননি নজফগড়ের নবাব।
অপ্রস্তুত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে শোয়েব নাকি তখন মজা করে বলেছিলেন, ভারতের ব্যাটিংভার নিজের কাঁধে বয়ে বেড়ানোর জন্যই সচিন এত ভারী। সে জন্যই তাঁকে তুলতে পারেননি তিনি।
ঘটনার অবশ্য এখানেই শেষ নয়। বরং শুরু! শোয়েবকে ওই অবস্থায় পড়ে যেতে দেখে খুনসুটি করতে ছাড়েননি সহবাগ।
ভরা পার্টিতে একঘর লোকের সামনে ওই ঘটনা নিয়ে এতটাই নাকি অপ্রস্তুত ছিলেন শোয়েব, যে তাঁকে নিয়ে আরও মজা করার সুযোগ হারাতে চাননি সহবাগ। বার বার ওই ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শোয়েবকে বলতে থাকেন, ‘‘তোমার কেরিয়ার শেষ। তোমার খেল্ খতম!’’
সচিনকে ও ভাবে তোলার জন্য তাঁর বড়সড় চোট লাগতে পারত বলে শোয়েবকে খোঁচাতে শুরু করেছিলেন সহবাগ। তাতেই নাকি ভয় পেয়ে যান শোয়েব।
সহবাগের দাবি, ওই ঘটনার পর শোয়েবের মনে হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কাছে নালিশ করবেন সচিন। যা নিয়ে জলঘোলা হতে পারে। সে জন্য সচিনের পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস।
মাঠের অকুতোভয় শোয়েবকে ওই অবস্থায় দেখে সহবাগ কী বলেছিলেন? সচিনের প্রাক্তন সতীর্থের কথায়, ‘‘আমি ওকে খুবই কটাক্ষ করতাম। বলতাম, ‘আমাদের সেরা ক্রিকেটারকে মাটিতে ফেলে দিয়েছ। এ বার তোমার কেরিয়ার শেষ! তোমাকে পাকিস্তান দল থেকেও বাদ দেওয়া হবে।’ এর পর ক্ষমা চাওয়ার জন্য সব সময় সচিনের পিছু পিছু ঘুরতে থাকে শোয়েব।’’
‘‘সচিনের সঙ্গে যেখানেই দেখা হত, শোয়েব ‘সরি’ বলতে শুরু করে দিয়েছিল। এক বার তো আমার সামনেই সচিনের পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়েছিল। তবে আমি আর সচিন তা-ও সোজা বসেছিলাম। পরে তা নিয়ে শোয়েবের আড়ালে বেজায় হেসেছিলাম আমরা।’’ শেষমেশ কি শোয়েবকে ‘মাফ’ করেছিলেন সচিন? তা নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি সহবাগ।