তিন বছরে বাকি ছিল ১৭৫ কোটি টাকার কর! তবে সেই ১৭৫ কোটি টাকার কর থেকে মুক্তি দেওয়া হল শিরডির শ্রী সাইবাবা মন্দিরকে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর শিরডির সাইবাবা মন্দিরকে এই কর দেওয়া থেকে মুক্ত করা হল বলে শুক্রবার আয়কর বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
এই মর্মে আয়কর বিভাগের তরফে একটি বিবৃতিও জারি করা হয়েছে। বিবৃতি অনুযায়ী, ‘‘২০১৫-১৬ সালের কর মূল্যায়ন করার সময়, আয়কর বিভাগ ধরে নিয়েছিল যে শ্রী সাইবাবা সংস্থা একটি ধর্মীয় ট্রাস্ট নয় বরং একটি দাতব্য ট্রাস্ট।’’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘দান বাক্সে প্রাপ্ত অনুদানের উপর ৩০ শতাংশ আয়কর বসানো হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরই কর হিসাবে ১৮৩ কোটি টাকা দেওয়ার নোটিস দেওয়া হয় মন্দির ট্রাস্টকে।’’
বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে, নোটিস পাওয়ার পর মন্দিরের ট্রাস্টের তরফে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। যত দিন না করের সঠিক পরিমাণ ধার্য করা হয়, তত দিন পর্যন্ত ওই কর দেওয়ার নোটিসের উপর স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত।
অবশেষে আয়কর বিভাগের তরফ থেকে শ্রী সাইবাবা মন্দির ট্রাস্টকে একটি ধর্মীয় ও দাতব্য ট্রাস্ট হিসাবে মেনে নিয়ে দান বাক্সে আসা অনুদানের উপর থেকে কর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আয়কর বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, তিন বছরের হিসাবে দান বাক্সে আসা অনুদানের উপর ১৭৫ কোটি টাকা কর ধার্য করা হয়েছিল। সেই পুরো করই ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আয়কর বিভাগ জানিয়েছে।
প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ শিরডির সাইবাবার মন্দিরে এসে ভিড় করেন। মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ জেলার শিরডিতে এই মন্দির রয়েছে। গরিব মানুষদের সাহায্য করার যে উদ্যোগের কথা মন্দির কর্তৃপক্ষ বলেন, সেই উদ্যোগে শামিল হতে অনেকেই মন্দিরে লক্ষ লক্ষ টাকা দান করেন।
শিরডির সাইবাবা মন্দির এই মুহূর্তে ভারতের সবচেয়ে ধনী মন্দিরগুলির মধ্যে একটি।
কয়েকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য শিরডি মন্দিরের ভান্ডারে নাকি প্রায় আড়াই হাজার কোটি জমা রয়েছে। রয়েছে হাসপাতাল, স্কুলও।
রাম নবমীর সময়ে সাইবাবা মন্দিরে দানের বহর আরও বাড়ে। ২০১৭-এর হিসাব অনুযায়ী, রাম নবমীর সময়ে সেই মন্দিরে প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকা অনুদান এসেছিল।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-র রাম নবমীতে বেনামে মন্দিরের নামে ১২ কেজি সোনাও দান করা হয়েছিল।
নোটবন্দির পর থেকে এই মন্দিরে নগদ টাকার থেকে সোনা-রুপোর দান বেড়েছে বলেও সূত্রের খবর। এক জন ভক্ত এক বার মন্দিরে খাঁটি রুপোর তৈরি দু’টি বাক্স দান করেন। এই বাক্সদু’টির মোট ওজন ছিল প্রায় ৬৫ কেজি।
সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মন্দিরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা জমা রয়েছে।
৩৮০ কেজির সোনা, সাড়ে চার হাজার কেজি রুপোও রয়েছে মন্দিরের কোষাগারে। এ ছাড়াও ডলার এবং পাউন্ডেও বিপুল পরিমাণ অর্থ মন্দিরের নামে জমা রয়েছে।
২০১৯ পর্যন্ত মোট আটটি ব্যাঙ্কে মন্দিরের নামে অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
শিরডি শহরের আয়তন ১৩ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে সাইবাবার মন্দিরটি রয়েছে ২০০ স্কোয়ার মিটার জুড়ে।
মন্দিরের এক পাশে সাইবাবার সমাধিস্থলও রয়েছে।
প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার শুধু খুচরো কয়েন জমা হয় মন্দিরের দান পেটিগুলিতে। এক সময় খুচরো কয়েনের জ্বালায় ব্যাঙ্কগুলির তরফেও মন্দিরের খুচরো টাকা জমা রাখতে অস্বীকার করা হয়েছিল।
শিরডি সাইবাবা মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ হল সাইবাবার মূর্তি। এই মূর্তির সামনে বসেই ভক্তেরা নিজেদের মনস্কামনা জানান। সাইবাবার মূর্তি যে সিংহাসনে উপর আছে, সেই সিংহাসনটিই মোট ৯৪ কেজি খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি।
অনুগামীরা দাবি করেন, সাইবাবা অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি নাকি মনের কথাও পড়তে পারতেন। এ ছাড়া ইচ্ছামতো সমাধিতে প্রবেশ করা, জল দিয়ে প্রদীপ জ্বালানো, অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলার মতো অনেক কিছুই নাকি তিনি করতে পারতেন।
ভক্তেরা এ-ও দাবি করেন যে, দর্শনের সময় তিনি বিভিন্ন ভক্তের কাছে রাম, বিষ্ণু, শিব এবং অন্যান্য দেবতার রূপে আবির্ভূত হয়েছেন।