Sheetal Raj

Sheetal Raj: কাঠ কুড়োতে কুড়োতে চোখ চলে যেত পাহাড়ের মাথায়! সেই মেয়েই কাঞ্চনজঙ্ঘায় ওঠা কনিষ্ঠতমা

২০১৮ সালে বিশ্বের কনিষ্ঠতম মহিলা হিসাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা জয় করেছেন উত্তরাখণ্ডের শীতল। তখন তাঁর বয়স ২২।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২২ ১৪:২৭
Share:
০১ ১৮

ছোটবেলা থেকেই পাহাড় তাঁকে টানত। মায়ের সঙ্গে জঙ্গলে কাঠ কুড়োতে গেলে নজর চলে যেত আকাশের গায়ে ছড়ানো পাহাড়ের দিকে। তখন থেকেই শীতল রাজের মন জুড়ে থাকত পাহাড়ের স্বর্গীয় দৃশ্য, তার কঠিন নিঃস্তব্ধতা!

০২ ১৮

এক দিন পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হবে— স্কুলবেলা থেকেই স্থির করে ফেলেছিলেন শীতল। বছর চারেক আগে তাঁর স্বপ্নপূরণ হয়েছে। ২০১৮ সালে বিশ্বের কনিষ্ঠতম মহিলা হিসাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা জয় করেছেন উত্তরাখণ্ডের এই বাসিন্দা। তখন শীতল ২২। পরের বছর আরও বড় লাফ দেন তিনি। মাউন্ট এভারেস্টের শৃঙ্গও জয় করেন।

Advertisement
০৩ ১৮

নজির গড়ার পর সরকারি স্বীকৃতিও মিলেছে শীতলের। গত বছরের তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৩ নভেম্বর দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে সে পুরস্কার গ্রহণ করেন শীতল।

০৪ ১৮

গোড়ার দিকে অবশ্য এভারেস্ট অভিযানে যাওয়ার সুযোগ পাননি শীতল। তাঁর অন্যতম কারণ ছিল আর্থিক। পিথোরাগড় জেলার ছোট্ট গ্রাম সারমোড়ায় ট্যাক্সি চালিয়ে তাঁর বাবার যেটুকু রোজগার, তাতে টেনেটুনে সংসার চলে। মা ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর ছোট্ট শীতলের মন পড়ে থাকে পাহাড়ে।

০৫ ১৮

বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘায় চড়ার সুযোগও এক দিনে আসেনি শীতলের কাছে। তার জন্য নিজেকে তৈরি করেছেন তিনি। পর্বতারোহী হওয়ার জন্য ২০১৫ সালে দার্জিলিঙের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে বেসিক কোর্সও করেছেন।

০৬ ১৮

২০১৪ সালে পর্বতাভিযানের একটি দলের সঙ্গে ভিড়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল শীতলের। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘এককালে এনসিসি-র সদস্য ছিলাম। সে সময় পর্বতাভিযানের কথা জানিয়েছিল ওরা। তখন সে কথা বাড়িতে জানাতে পারিনি। বলেছিলাম, একটা ট্রিপে যাচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে ‘না’ করে দিয়েছিলেন মা-বাবা। তবে কোনও রকমে মা-বাবাকে রাজি করিয়েছিলাম। ফিরে এলে ওঁরা জানতে পারেন যে আমি পাহাড়ে গিয়েছিলাম। ব্যস্‌! বাড়ির সকলের দেদার বকুনি শুরু হয়েছিল।’’

০৭ ১৮

২০১৪ সালের পর থেকে বার বার ছোটখাটো অভিযান করেছেন শীতল। পরের বছর কোর্স করার পর আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গিয়েছিল তাঁর। শীতলের কথায়, ‘‘দার্জিলিঙের ইনস্টিটিউটে আমরা দেড়শো জন মেয়ে ছিলাম। বেসিক কোর্স করার সময় রিনোক নামে একটা পাহাড়ে চড়েছি। তবে আমাদের মধ্যে কেবলমাত্র ৫৩ জনই তাতে চড়তে পেরেছিল। আর একটি অভিযানে সফল হওয়ার পর আমরা ১৫ জন মিলে মাউন্ট ত্রিশূল চ়ড়েছিলাম। তাতে বেসিক কোর্স পাস করি।’’

০৮ ১৮

শীতল জানিয়েছেন, মাউন্ট ত্রিশূলকে এভারেস্টে চড়ার আগের ধাপ বলে মনে করা হয়। তবে বেসিক কোর্সের সময় তা জয় করলেও এভারেস্ট অভিযানের সুযোগ আসেনি।

০৯ ১৮

সে খবর পেয়ে অবসাদে ডুবে গিয়েছিলেন শীতল। তাঁর কথায়, ‘‘ওই খবরটা আমাকে একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মানসিক ভাবে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলাম। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কোনও কিছুই করতে ভাল লাগত না। অবসাদ কাটাতে বছরখানেক লেগে গিয়েছিল।’’

১০ ১৮

প্রাথমিক ব্যর্থতা ঝেড়ে এক সময় ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশন (আইএমএফ)-এর সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেন শীতল। পর্বতাভিযানের আয়োজন করার পাশাপাশি আরোহীদের সাহায্যও করে ওই সংগঠন।

১১ ১৮

আইএমএফ-এর সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এইচ এস চৌহান জানিয়েছেন, সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে সাতোপাথ হিমবাহেও গিয়েছিলেন শীতল।

১২ ১৮

শীতলের সঙ্গে আলাপচারিতার পর চৌহান জানতে পারেন যে পাহাড়ে অভিযানের আর্থিক সামর্থ্য নেই মেয়েটির। তিনি বলেন, ‘‘সে সময় ওএনজিসি-র তরফে আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানের তোড়জোড় করছিলাম। ওই অভিযানের জন্য ওএনজিসি-র আধিকারিকদের কাছে শীতলের নাম সুপারিশ করি। অভিযানের সময় শীতলের যাবতীয় ব্যয়ভার বহনে রাজি হয়ে যান তাঁরা।’’

১৩ ১৮

২০১৮ সালে এপ্রিলে কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযান শুরু হয়েছিল শীতলদের। শীতল বলেন, ‘‘নেপাল থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। হাপুরখোলায় পৌঁছে বেস ক্যাম্পের জন্য যাত্রা শুরু করি। ১৫ দিনেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলাম।’’

১৪ ১৮

১২ মে কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষে ওঠার শীতলদের প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। ৩ নম্বর বেস ক্যাম্পে পৌঁছনোর পর প্রবল তুষারধসের জেরে তা ভেস্তে যায়। খারাপ আবহাওয়ার জন্য বেস ক্যাম্পেই ফিরে আসেন তিনি। তবে এত কাছে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘা জয়ের সুযোগ হারাতে চাননি শীতলরা।

১৫ ১৮

আবহাওয়ার উন্নতি হতেই ১৮ মে কাঞ্চনজঙ্ঘা দিকে আবার যাত্রা শুরু করেন শীতল ও তাঁর সঙ্গীরা। একে একে ৩ নম্বর বেস ক্যাম্প পার হয়ে যান। ২০ মে তাঁরা ৪ নম্বর বেস ক্যাম্পে পৌঁছন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কাঞ্চনজঙ্ঘার শৃঙ্গে চড়ার প্রস্তুতি নেন।

১৬ ১৮

কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানের শেষ মুহূর্তের কথা এখনও স্পষ্ট মনে রয়েছেন শীতলের। তিনি বলেন, ‘‘২১ মে রাত সাড়ে ৩টেয় আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষে পৌঁছেছিলাম। মনে হয়েছিল, নিজের ঘরে এলাম। তবে এত অন্ধকার যে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। অবশেষে সূর্যোদয় হল। ভোরের আলোয় চোখে পড়ল, এক পাশে ভারত আর অন্য দিকে নেপাল। আর সামনে চিনের সীমান্ত।’’

১৭ ১৮

৮,৫৮৬ মিটার উচ্চতার কাঞ্চনজঙ্ঘার শৃঙ্গে উ়়ঠেও যেন সে কথা বিশ্বাস হচ্ছিল না শীতলের। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের শেরপা যখন জানালেন যে শিখরচূড়ায় পৌঁছে গিয়েছি, হঠাৎই শরীরে নতুন শক্তি এল। আমার মধ্যে যেন তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছিল। অভিভূত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। শেরপাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। অবিশ্বাস্য!’’

১৮ ১৮

কাঞ্চনজঙ্গার পর এভারেস্টও জয় করে শিরোনামে উঠে এসেছেন শীতল। তবে খ্যাতির মাঝেও ছোটবেলায় পাহাড় দেখার কথা ভোলেননি তিনি। শীতল বলেন, ‘‘মায়ের সঙ্গে কাঠ কুড়োতে গিয়ে পাহাড়ের যে দৃশ্য চোখে পড়ত বা সেখানকার নিঃস্তব্ধতা টের পেতাম, তাতে একটা অদ্ভুত শান্তি পেতাম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement