যে দিকে চোখ যায়, শুধুই ধ্বংসের ছবি। বিধ্বংসী চেহারা নিয়ে রবিবার দুপুরে স্থলভাগে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় মোকা। ঝড়ের তাণ্ডবে মায়ানমার এবং বাংলাদেশে বহু ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুই দেশেই ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়েছে গাছ, বাড়ি। মোকার তাণ্ডব মনে করিয়েছে ঘূ্ণিঝড় আমপানের কথা। ২০২০ সালে এই শক্তিশালী ঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের একাংশ।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটের মধ্যে মারাত্মক প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে স্থলভাগে তাণ্ডব চালিয়েছে মোকা।
ওই সময় ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ১৯০ কিমি। সর্বোচ্চ বেগ ছিল ২১০ কিমি। ‘মায়ানমার নাও’ সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, রবিবার দুপুর দেড়টায় সিতওয়ায় আছড়ে পড়ে মোকা।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিবিসি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে গাছ ভেঙে পড়ে ১৪ বছরের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এপি সূত্রে খবর, মোকার তাণ্ডবে মায়ানমারে কমপক্ষে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঝড়ের তাণ্ডবে মায়ানমারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাখাইনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে এপি জানিয়েছে, বহু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে বহু গাছ, বিদ্যুতের খুঁটিও।
বিশেষত, মায়ানমারের সিতওয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। ওই এলাকায় যাঁরা থাকেন, তাঁরা আটকে পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মায়ানমারের বহু এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়েছে টেলিফোনের টাওয়ার। বিপর্যস্ত ইন্টারনেট পরিষেবা। এর জেরে বহু এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
মায়ানমার সেনার তরফে জানানো হয়েছে, মোকার ঝাপটায় বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার ভেঙে পড়েছে। উড়ে গিয়েছে বহু বাড়ির ছাউনি উড়ে গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। তবে ঝড়ের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা।
ঘর ছেড়ে বহু মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। যে গতিতে ঝড় হয়েছে, তার জেরে আতঙ্কে সকলে। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় খাবার সরবরাহ করা এই মুহূ্র্তে চ্যালেঞ্জ সে দেশের প্রশাসনের কাছে।
সিতওয়ার পাশাপাশি কিয়াউপউ, গওয়া, মান আউং এলাকাতেও তাণ্ডব চালিয়েছে মোকা। সেখানেও বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে।
মায়ানমারের পাশাপাশি বাংলাদেশেও তাণ্ডব চালিয়েছে মোকা। সে দেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে দুপুরে ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৭ কিমি।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ সূত্রে খবর, ঝড়ের দাপটে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক মহিলার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপেও ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতি হয়েছে। সেখানেও বহু গাছ ভেঙে পড়েছে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মাঝরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া, উত্তরপাড়া এলাকায় কমপক্ষে ৩৪০টি বাড়ি ভেঙে গিয়েছে।
ওই এলাকায় ভেঙে পড়েছে বহু গাছ। সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে গিয়েছে কয়েকটি গ্রাম।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, ধীরে ধীরে শক্তিক্ষয় হবে ঘূর্ণিঝড়ের। শক্তি হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে মোকা।