পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না, প্রাণের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে কি না, তা নিয়ে মানুষের আগ্রহ অনেক দিনের। দীর্ঘ দিন ধরেই মহাবিশ্বের খুঁটিনাটি নিয়ে নানা গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে প্রথম যে প্রশ্ন ওঠে, তা হল, পৃথিবীর বাইরে আদৌ প্রাণ আছে কি? ভিন্গ্রহীরা যদি অন্য কোনও গ্রহ বা উপগ্রহে থাকে, তবে তারা পৃথিবীর মাটিতে এসে পৌঁছতে পারে কি?
পৃথিবীর বাইরে এখনও পর্যন্ত প্রাণের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সাহিত্যের পাতায় কিংবা চলচ্চিত্রের পর্দায় কাল্পনিক ভিন্গ্রহীদের ছড়াছড়ি। ভিন্গ্রহীদের চেহারা, বুদ্ধিমত্তা এবং কার্যকলাপ কল্পনা করে সিনেমা বা গল্পে উপস্থাপন করা হয়েছে। বহির্বিশ্ব নিয়ে মানুষের আগ্রহ আরও বেড়েছে।
প্রমাণ না মিললেও মহাকাশ গবেষকদের একাংশের বিশ্বাস, ভিন্গ্রহীদের অস্তিত্ব রয়েছে। তাদের সঙ্গে পৃথিবীর মানুষের সাক্ষাতও হতে পারে যে কোনও দিন, বিশ্বাস করেন অনেকে।
অদূর ভবিষ্যতে ভিন্গ্রহীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ অনিবার্য, এ কথা ধরে নিয়ে ব্রিটেনে শুরু হয়েছে তার তোড়জোড়। বাইরের গ্রহ থেকে সত্যিই যদি কেউ নেমে আসে পৃথিবীর মাটিতে, তা হলে সেই ‘অতিথি’র সঙ্গে কী ভাবে যুঝবে মানুষ, তা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।
ব্রিটেনে ভিন্গ্রহীদের সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা এবং গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেন্ট অ্যানড্রিউজ় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন এলিয়ট। তিনি বলেন, ‘‘পৃথিবীর বাইরে থেকে কি কখনও আমাদের জন্য কোনও বার্তা এসে পৌঁছবে? আমরা সেটা জানি না। তবে যদি সত্যি সত্যি কোনও দিন তা হয়ে যায়, তা হলে আমাদের যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে না হয়।’’
বিজ্ঞান, সমাজ এবং রাজনীতি— ভিন্গ্রহীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সব দিক থেকেই প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা ব্রিটেনে একটি নতুন গবেষণা দল তৈরি করেছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সেটি পোস্ট ডিটেকশন হাব’।
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আইন, নীতি এবং দর্শনের বিশেষজ্ঞদের এই দলে শামিল করা হচ্ছে। ভিন্গ্রহীরা পৃথিবীতে এলে তাদের সঙ্গে মানুষ কী রকম ব্যবহার করবে, কী ভাবে তাদের ভাষা আয়ত্ত করে কথোপকথন গড়ে তোলা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করবেন বিশেষজ্ঞরা।
ভিন্গ্রহ থেকে আসা সঙ্কেত, তার অর্থ উদ্ধার করা, ভিন্গ্রহীদের অস্তিত্ব, কার্যকলাপ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এলিয়ট। এ বার নতুন উদ্যমে সেই গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি।
পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মাঝেমধ্যেই খবর আসে, আকাশে রহস্যময় উড়ন্ত চাকতি দেখা গিয়েছে। কিংবা কোনও বিশেষ এলাকার মানুষ এমন কোনও শব্দ শুনতে পেয়েছেন যা, আক্ষরিক অর্থে ‘অপার্থিব’। অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের রহস্যের সঙ্গে জুড়ে যায় ভিন্গ্রহীদের নাম।
তবে প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে ভিন্গ্রহী সম্পর্কিত ধারণা অমূলক। রহস্যময় উড়ন্ত চাকতি আসলে মনুষ্যসৃষ্ট ড্রোন বা কোনও কৃত্রিম উপগ্রহ। ‘অপার্থিব’ শব্দের সঙ্গেও ভিন্গ্রহীদের যোগসূত্র মেলেনি।
ভিন্গ্রহীদের নাগাল এখনও পায়নি পৃথিবীর মানুষ। কিন্তু তাতে আর খুব বেশি দেরি নেই ধরে নিয়েই এগোচ্ছেন ব্রিটেনের বিজ্ঞানীরা। তাই এখন থেকেই অদূর ভবিষ্যতের সেই মুহূর্তের পরিকল্পনা করে প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে।