অভিনেত্রী নীনা গুপ্তার মেয়ে মাসাবা গুপ্তার সঙ্গে সম্প্রতি গাঁটছড়া বেঁধেছেন সত্যদীপ মিশ্র। পেশায় তিনিও অভিনেতা। বলিউডের একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি।
একাধিক ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন সত্যদীপ। তাঁকে দেখা গিয়েছে ‘চিল্লার পার্টি’, ‘বম্বে ভেলভেট’, ‘নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা’-র মতো ছবিতে।
সিনেমার দুনিয়ায় সত্যদীপের কেরিয়ারে বিশেষ চাকচিক্য নেই। তবে বর্ণময় তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। বিয়ে থেকে শুরু করে প্রেম, সম্পর্ক কিংবা উপার্জন— সত্যদীপের জীবনে চমকের অভাব ছিল না কোনও দিনই।
১৯৭২ সালে দেহরাদূনে জন্ম সত্যদীপের। দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক হন। এর পর শুরু হয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি। একই সঙ্গে আইন নিয়েও পড়াশোনা করেন সত্যদীপ।
জীবনের প্রথম পর্যায়ে বিনোদন জগতের সঙ্গে দূরদূরান্ত পর্যন্ত সত্যদীপের কোনও সম্পর্ক ছিল না। বরং পড়াশোনার মাধ্যমে কেরিয়ার গড়তেই আগ্রহী ছিলেন তিনি। মেধাবী ছাত্র সত্যদীপ পাশ করেছিলেন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাতেও।
সিভিল সার্ভিসে পাশ করে আইএএস সত্যদীপ আয়কর দফতরের সঙ্গে যুক্ত হন। মোটা বেতনের সরকারি চাকরি ছিল তাঁর হাতে। কিন্তু সেই চাকরি বেশি দিন করতে পারেননি তিনি।
মাত্র ১১ মাস আয়কর বিভাগে চাকরির পর আইনের দিকে ঝোঁকেন সত্যদীপ। আইনজীবী হিসাবে বেশ কয়েক বছর কাজ করেন। তবে এই পেশাও বেশি দিন ভাল লাগেনি সত্যদীপের।
উকিল সত্যদীপের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল অদিতি রাও হায়দারির। হায়দরাবাদের মেয়ে অদিতি তখন সিনে দুনিয়ায় ভাগ্য হাতড়াচ্ছেন। তাঁর কেরিয়ারও নড়বড়ে। সত্যদীপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় অদিতির।
২০০৯ সালে গোপনে বিয়ে করেন সত্যদীপ-অদিতি। কিন্তু এই বিয়ের খবর ইন্ডাস্ট্রির কাউকে জানানো হয়নি। সুপরিকল্পিত ভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বিয়ের খবর।
৭ থেকে ৮ বছর ওকালতি করার পর সেই পেশা থেকেও বেরিয়ে আসেন সত্যদীপ। এর পর তিনি বিনোদন জগতের দিকে ঝোঁকেন। দু’চোখে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বই চলে আসেন তিনি।
আইএএস অফিসার কিংবা উকিল হিসাবে কয়েক বছরে যে পরিমাণ টাকা সত্যদীপ রোজগার করেছিলেন, তাতে তাঁর জীবনে বাহুল্যের অভাব ছিল না। কিন্তু মুম্বইয়ে আসার পর শুরু হয় অর্থের টানাটানি।
বিভিন্ন জায়গায় অভিনেতা হিসাবে অডিশন দিলেও প্রথম দিকে সে ভাবে ডাক পাননি সত্যদীপ। ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসে তাঁর জমানো টাকা। সাক্ষাৎকারে জীবনের এই পর্যায়ের লড়াইয়ের কথা নিজেই জানিয়েছেন অভিনেতা।
অদিতির সঙ্গে সত্যদীপের বিবাহবিচ্ছেদ হয় ২০১৩ সালে। এই বিচ্ছেদের খবরেই চমক লাগে। কারণ তার আগে পর্যন্ত দু’জনের বিয়ের কথাই কেউ জানতেন না। বলিউডে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল সত্যদীপ-অদিতির বিচ্ছেদ।
অভিযোগ, অদিতির সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির অন্য পুরুষের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। বলিউডে নিজের কেরিয়ার দাঁড় করাতেই বিয়ে গোপন করতে চেয়েছিলেন অভিনেত্রী। বিচ্ছেদের নেপথ্যে সেই কারণকেও তুলে ধরেন কেউ কেউ।
তবে সত্যদীপ বা অদিতি, কেউই নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। বরং বিচ্ছেদের পর দু’জনেই জানিয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কের নাম বদলেছে কেবল। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী থেকে বন্ধু হয়েছেন।
কেরিয়ারের শুরুতে লড়াই করতে হলেও অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে বলিউডে জায়গা পাকা করে নিতে সত্যদীপের খুব বেশি সময় লাগেনি। ছোট পর্দাতেও কাজ করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে স্টার প্লাসে ‘পিওডব্লিউ: বন্দি যুদ্ধ কে’ ধারাবাহিকে তাঁকে দেখা গিয়েছিল।
বড় পর্দায় শেষ বার সত্যদীপকে দেখা গিয়েছে ২০২২ সালে ‘বিক্রম বেদা’ ছবিতে। সইফ আলি খান এবং হৃতিক রোশন অভিনীত এই ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন সত্যদীপ। এ ছাড়া, একাধিক ওয়েব সিরিজ়েও কাজ করেছেন তিনি।
বলিউডে কেরিয়ার খানিক গুছিয়ে নেওয়ার পর সংসার জীবনও আরও এক বার গুছিয়ে নিয়েছেন সত্যদীপ। হালে তিনি বিয়ে করেছেন ফ্যাশন ডিজ়াইনার তথা নীনা গুপ্তা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেট তারকা ভিভ রিচার্ডসের কন্যা মাসাবাকে।
৫০ বছর বয়সে এসে দ্বিতীয় বিয়ে করলেন সত্যদীপ। মাসাবারও এটি দ্বিতীয় বিয়ে। এর আগে ২০১৫ সালে চলচ্চিত্র প্রযোজক মধু মান্তেনার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। ২০১৯ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
মাসাবা, সত্যদীপের বিয়েতে হাজির ছিলেন স্বয়ং ভিভ রিচার্ডস। সেই সঙ্গে নীনা গুপ্তা এবং তাঁর স্বামী বিবেক মেহেরাও ছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানে।