২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল রণবীর কপূর অভিনীত বলিউড ছবি ‘সঞ্জু’। অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের জীবনের উত্থান-পতনের বিভিন্ন অধ্যায় তুলে ধরা হয়েছিল এই ছবিতে। বিতর্কের মুখে পড়লেও ছবিটি বক্স অফিসে ব্যাপক সফল হয়। একাধিক অ্যাওয়ার্ড শোতে ‘সেরা অভিনেতা’র পুরস্কার পান রণবীর।
কিন্তু এক সময়ে এই রণবীরের বাবা ঋষি কপূরের সঙ্গে সাপেনেউলে সম্পর্ক ছিল সঞ্জয়ের। তাঁদের সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে উঠেছিল যে, পর্দার ‘সঞ্জু’র বাবাকে উত্তমমধ্যম দিতে তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন বাস্তবের ‘সঞ্জু’।
ঘটনার সূত্রপাত ১৯৮১ সালে। সঞ্জয়ের প্রথম ছবি ‘রকি’তে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন তাঁর শৈশবের বান্ধবী তথা অভিনেত্রী টিনা মুনিম (অধুনা টিনা অম্বানী)। সঞ্জয় এই ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় পা রাখলেও টিনা তখন মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী।
ছবির শুটিংয়ের সময়ই সঞ্জয় এবং টিনার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে দেখা যেত তাঁদের। সুনীল-পুত্রের প্রেম নিয়ে তখন পুরো বলিপাড়ায় হইহই পড়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এই সম্পর্কে চিড় ধরে শীঘ্রই। আর তার অন্যতম কারণ ছিল টিনাকে নিয়ে সঞ্জয়ের সন্দেহ। সঞ্জয়ের সন্দেহ ছিল, তাঁকে ছেড়ে ঋষির সঙ্গে সম্পর্কে আসতে চাইছেন টিনা।
১৯৮০ সালে ‘কর্জ’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন ঋষি এবং টিনা। তার পরেই গুজব ছড়ায়, ঋষি নাকি টিনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন।
এই গুজব সঞ্জয়ের কানেও পৌঁছেছিল। এতে তাঁর মনে সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে। টিনা বার বার তাঁর সন্দেহ দূর করার চেষ্টা করলেও সঞ্জু কোনও কথা শোনেননি।
সঞ্জয় বিষয়টি নিয়ে এতটাই রেগেছিলেন যে, তিনি নাকি ঋষিকে মারধরের সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় সঞ্জয়ের কাছের বন্ধু ছিলেন বলিপাড়ার পরিচিত ‘ভিলেন’ গুলশন গ্রোভার। গুলশনের সঙ্গে মিলেই ঋষিকে উত্তমমধ্যম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সঞ্জয়।
সেই মতোই এক দিন গুলশনকে সঙ্গে নিয়ে ঋষির বাড়ি পৌঁছন সঞ্জয়। ঋষির উপর চোটপাট করে তাঁকে মারতে উদ্যত হন সঞ্জয়রা।
সেই সময় ঋষির বাড়িতে ছিলেন অভিনেত্রী নীতু সিংহ। তিনিই এসে সঞ্জয়ের রোষের হাত থেকে বাঁচান ঋষিকে।
সেই সময় ঋষি এবং নীতু বিয়ে না করলেও তাঁরা বাগ্দান পর্ব সেরেছিলেন। সঞ্জু এবং গুলশন, উভয়কেই নীতু বোঝান যে, টিনার সঙ্গে ঋষির কোনও সম্পর্ক নেই। শীঘ্রই তাঁর সঙ্গে ঋষির বিয়ে হবে বলেও সঞ্জয়দের জানান নীতু।
নীতুর কথায় ভরসা করেই ঋষিকে মারধর না করার সিদ্ধান্ত নেন সঞ্জু এবং গুলশন। ঋষির বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান দু’জনেই।
যদিও এই ঘটনার পর সঞ্জয়ের সঙ্গে বেশি দিন সম্পর্ক টেকেনি টিনার। সঞ্জয়ের অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাসের জন্য তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। এর পর অভিনেতা রাজেশ খন্নার সঙ্গে টিনার সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল।
এই ঘটনার বহু বছর পর এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় গুলশন প্রসঙ্গটি তুলে আনেন। তিনি বলেন, ‘‘সঞ্জয় এবং আমি ভাইয়ের মতো ছিলাম। এক দিন ও আমাকে বলেছিল, ঋষিকে মারবে। আমরা ওঁর বাড়িতে গিয়েও ছিলাম। কিন্তু নীতু আমাদের বোঝানোর পর আমরা বাড়ি ফিরে আসি।’’
ঋষির আত্মজীবনী ‘খুল্লম খুল্লা: ঋষি কপূর আনসেন্সরড’-এও এই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।