দুই দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয়জগতের সঙ্গে যোগাযোগ। বাবা ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার। তামিল, তেলুগু ভাষার ছবির পাশাপাশি অভিনয় করেন ইংরেজি ছবিতেও। কেরিয়ারের সাফল্যের চূড়ায় থাকাকালীন হঠাৎ অভিনয় ছেড়ে দেন। দীর্ঘ বিরতির পর ‘সালার’ ছবিতে প্রভাসের সঙ্গে অভিনয় করে নজর করেছেন শ্রেয়া রেড্ডি।
১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর মাসে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে জন্ম শ্রেয়ার। তাঁর বাবা ভরত রেড্ডি ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত একাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ভরত।
শৈশব থেকে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছিল শ্রেয়ার। জাতীয় স্তরের পাশাপাশি রাজ্য স্তরেও বহু ক্রিকেট ম্যাচও খেলেছেন তিনি। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি ছেলে হয়ে জন্ম নিতাম, তা হলে অভিনয় করতাম না। ক্রিকেটার হতাম। আমি এখনও ক্রিকেট ভালবাসি। ছবি দেখা ছেড়ে দিয়েও আমি ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে পারি।’’
সাক্ষাৎকারে শ্রেয়া বলেছিলেন, ‘‘আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের বাড়িতে রবি শাস্ত্রী এবং সন্দীপ পাটিল এসেছিলেন। ওঁরা বাবাকে জানিয়েছিলেন যে আমার কণ্ঠস্বর সুন্দর। তাঁদের এই মন্তব্যই আমার কাছে মূল্যবান।’’
চেন্নাইয়ের স্কুল এবং কলেজে পড়াশোনা শেষ করেন শ্রেয়া। স্কুলে পড়াকালীন বিভিন্ন জায়গা থেকে মডেলিংয়ের প্রস্তাব পান তিনি। কিন্তু তাঁর বাবা চাইতেন, পড়াশোনা শেষ করে নিজের কেরিয়ার গড়ে তুলুন শ্রেয়া। তাই মডেলিংয়ে নামতে দেননি তাঁকে।
১৮ বছর বয়সে ভিডিয়ো জকি হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন শ্রেয়া। তার পাশাপাশি একাধিক গানের অনুষ্ঠানের সঞ্চালনাও করতেন তিনি। ধীরে ধীরে জকি হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
এই সময়ে একটি তেলুগু ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান শ্রেয়া। অভিনয়ে নামার ইচ্ছা থাকলেও আপত্তি জানান তাঁর বাবা। এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবা যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন ছবির প্রস্তাব গ্রহণ করে সইসাবুদ সেরে ফেলেন তিনি। পরে তাঁর বাবা জানতে পারলে শ্রেয়ার উপর রেগে যান।
২০০২ সালে ‘সামুরাই’ নামের একটি তামিল ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন শ্রেয়া। তবে এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। এক বছর পর মুক্তিপ্রাপ্ত একটি তেলুগু ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু এই ছবিটি বক্স অফিসে সফল হয়নি। ছবি ব্যর্থ হওয়ার পর এক বছর আর কোনও ছবিতে অভিনয় করেননি তিনি।
২০০৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ব্ল্যাক’ নামের একটি মালয়ালম ছবি। মামুত্তি অভিনীত এই ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসা পান শ্রেয়া। এই ছবিটি শ্রেয়ার কেরিয়ারে মাইলফলক গড়ে তোলে।
২০০৪ সালে ‘১৯ রিভোলিউশন্স’ নামে একটি ইংরেজি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় শ্রেয়াকে। তার পর একের পর এক তামিল, তেলুগু এবং মালয়ালম ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘থিমিরু’ নামের একটি তামিল ছবিতে অভিনয় করেন শ্রেয়া। এই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন বিক্রম কৃষ্ণ। এই ছবির শুটিং চলাকালীন শ্রেয়ার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে বিক্রমের। সেই বন্ধুত্ব প্রেমে পরিণত হয়।
দু’বছর বিক্রমের সঙ্গে সম্পর্কে থাকার পর সাত পাকে বাঁধা পড়েন দু’জনে। ২০০৮ সালের ৯ মার্চ চেন্নাইয়ে বিয়ে করেন দুই তারকা। ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাঞ্চিভরম’ ছবিতে অভিনয় করেন শ্রেয়া। যথেষ্ট প্রশংসাও কুড়োন তিনি।
শ্রেয়া যখন তাঁর কেরিয়ারের সাফল্যের চূড়ায়, তখনই অভিনয়জগৎ থেকে বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ের পর অভিনয় ছেড়ে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে শ্রেয়া জানিয়েছিলেন, বিয়ের পর তাঁর কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব এলেও তা পছন্দ হত না অভিনেত্রীর। প্রায় আট বছর অভিনয় করেননি তিনি।
সাক্ষাৎকারে শ্রেয়া বলেছিলেন, ‘‘আমার এক বন্ধু আমাকে অভিনয়ে ফেরার অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর কথা শুনে আমি প্রযোজনার কাজের সঙ্গে যুক্ত হই।’’
২০২৩ সালে ‘সালার’ ছবিতে প্রভাসের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় শ্রেয়াকে। প্রায় এক দশকের বিরতির পর ‘সালার’-এর মাধ্যমে ‘কামব্যাক’ করেন তিনি।
‘সালার’-এ শ্রেয়ার অভিনয় দেখে মুগ্ধ দর্শকমহল। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ১৬ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে। দীর্ঘ বিরতির পর এখন পর পর কাজ করে চলেছেন শ্রেয়া।
বড় পর্দার পাশাপাশি ওটিটির পর্দাতেও পা রেখেছেন শ্রেয়া। অ্যামাজ়ন প্রাইম ভিডিয়ো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সুজল’ নামের একটি তামিল ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন শ্রেয়া।