বিজ্ঞানের দুনিয়ায় যেন বিস্ময় বালিকা হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন সাব্রিনা গঞ্জালেজ় পেসতারস্কি। শিকাগোর এই তরুণী পদার্থবিজ্ঞানে নতুন দুয়ার উন্মোচন করে ফেলেছেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে পৃথিবীর তাবড় বিজ্ঞানীদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা।
কিউবান বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক সাব্রিনা, তাঁর বাবা পেশায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বাবার উৎসাহেই ছোটবেলায় পদার্থবিদ্যা নিয়ে চর্চা শুরু করেছিলেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই চর্চার জগৎ আরও প্রশস্ত হয়েছে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন সাব্রিনা। তার পর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
২০১৫ এবং ২০১৭ সালে ফোর্বসের সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় সাব্রিনার নাম ছিল। গত কয়েক বছরে তাঁর ভিন্ন ধারার একাধিক আবিষ্কার বার বার তাক লাগিয়েছে বিজ্ঞানীদের। সাব্রিনা পেয়েছেন ‘নতুন আইনস্টাইন’ তকমা।
নিজের হাতে একটি আস্ত বিমান তৈরি করে দেখিয়েছেন সাব্রিনা। ২০০৩ সালে তিনি প্রথম বিমান ওড়ানোয় প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। ২০০৫ সালে বিমানের এক মহড়ায় তিনি পাইলট হিসাবে অংশগ্রহণও করেছিলেন।
তার পরেই নিজের হাতে বিমান তৈরি করেন সাব্রিনা। ২০০৯ সালের মধ্যে বিমান তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়। প্রশিক্ষকের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে সেই বিমানে চেপে ঘুরেও বেড়িয়েছেন তরুণী।
এমআইটি-তে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করতে করতেই সুইৎজ়ারল্যান্ডের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে বিভিন্ন কণা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন সাব্রিনা। সেখানেও ছাপ রেখেছেন তরুণী বিজ্ঞানী।
২০১৫ সালে সাব্রিনার একটি একক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। তার বিষয়বস্তু ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে নিজের গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন স্বয়ং স্টিফেন হকিং। সাব্রিনাকে যা আরও জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
আমাজ়নের কর্ণধার জেফ বেজ়োস সাব্রিনার প্রতিভাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। তিনি এই তরুণী গবেষককে নিজের সংস্থায় মোটা অঙ্কের চাকরির প্রস্তাবও দিয়েছেন। তবে সাব্রিনা সে সব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে গবেষণার কাজেই আত্মনিয়োগ করতে চেয়েছেন বার বার।
শুধু বেজ়োস নন, সাব্রিনার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাও। নাসা থেকেও সাব্রিনাকে বিপুল বেতনের চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সেই জুতোতেও পা গলাননি তরুণী।
সাব্রিনার গবেষণার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘স্পিন মেমরি এফেক্ট’। মহাকর্ষীয় তরঙ্গের গতিবিধি সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে এই আবিষ্কার নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।
পেসতারস্কি-স্ট্রমিঞ্জার-জ়িবোডভ ত্রিভুজ সম্পূর্ণ করেছেন সাব্রিনা। পদার্থবিদ্যার জগতে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর এই কাজের কথাই একক গবেষণাপত্রে লেখা হয়। যার উল্লেখ করেছিলেন হকিং।
বিজ্ঞানের দুনিয়ায় তাঁর অবদানের জন্য নানা মহল থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন সাব্রিনা। হোয়াইট হাউস থেকেও তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। নানা সংবাদমাধ্যমে সাব্রিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে।
রাশিয়া, পোল্যান্ড, স্পেন, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইৎজ়ারল্যান্ড এবং ভারতের চ্যানেলে সাব্রিনার কাজ সম্প্রচারিত হয়েছে। হিন্দি ভাষাতেও দেখা গিয়েছে সাব্রিনার সাক্ষাৎকার।
সাব্রিনা কিউবান বংশোদ্ভূত। তিনি কিউবার মেয়েদের মধ্যে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গণিতের প্রসার ঘটাতে নানা ভাবে উদ্যোগী হয়েছেন। সাব্রিনার এই সমাজকর্মী রূপটিও আলাদা করে নজর কাড়ে।