ভারতের উপকণ্ঠে হঠাৎ হাজির রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ। ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে রাশিয়া। আপাতত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলে রয়েছে সেগুলি।
মায়ানমারের সঙ্গে একটি বিশেষ মহড়ায় অংশ নিতে রাশিয়া থেকে এই যুদ্ধজাহাজগুলি পাঠানো হয়েছে বলে খবর। মায়ানমার সরকারের সঙ্গে সে বিষয়ে চুক্তি হয়েছে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের।
ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় দীর্ঘ দিন রাশিয়া ছিল ‘ব্রাত্য’। এই অঞ্চলের জল-রাজনীতিতে পুতিনকে মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি বহু দিন। বরং চিনই ভারত মহাসাগর এবং সংলগ্ন এলাকায় সদা বিরাজমান।
পাঁচ দশক পরে ভারত মহাসাগরের সন্নিকটে আবির্ভাব হয়েছে রাশিয়ার। যা এই অঞ্চলের জল-রাজনীতিকে হঠাৎ চঞ্চল করে তুলেছে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় পরে কেন ভারতের কাছাকাছি অঞ্চলে এল রাশিয়া?
ভারতের পূর্ব দিকের পড়শি রাষ্ট্র মায়ানমার সেনাশাসিত। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার সেখানে ক্ষমতাসীন নয়। এই দেশের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহু পুরনো।
মায়ানমারে দীর্ঘ দিন ধরেই অস্ত্রশস্ত্রের জোগান দিয়ে আসছে রাশিয়া। কিন্তু তাদের সঙ্গে যৌথ ভাবে কোনও সামরিক মহড়ায় আগে কখনও অংশ নেয়নি রাশিয়া।
মায়ানমার এবং রাশিয়ার মহড়া চলেছে গত ৭ নভেম্বর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত। আক্রমণ প্রতিহত করার কায়দা অনুশীলন করতে দেখা গিয়েছে দুই দেশের নৌ সৈনিকদের।
রাশিয়া এবং মায়ানমারের মহড়ার ঠিক পর পরই ভারতের পশ্চিম উপকূলে আরব সাগরের জলে নতুন আলোড়ন তৈরি হয়েছে। ভারতের আর এক পড়শি দেশ শুরু করেছে সামরিক মহড়া।
চিনের সঙ্গে যৌথ ভাবে পাকিস্তানের নৌ বাহিনী আরব সাগরে সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এক সপ্তাহ ব্যাপী সেই মহড়া শেষ হবে ১৭ নভেম্বর।
করাচিতে পাক নৌ সেনাঘাঁটি থেকে চিনা এবং পাকিস্তানি নৌ সৈনিকেরা মহড়া শুরু করেছে। উত্তর আরব সাগরের আকাশেও চলছে বিমান বাহিনীর মহড়া। এমনকি, সাবমেরিন-সহ একাধিক জলযানও অভিযানে দেখা গিয়েছে।
ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় রাশিয়ার পদার্পণের পরেই চিন এবং পাকিস্তানের এই সামরিক মহড়া দেখে দুইয়ে দুইয়ে চার করেছেন অনেকে। তাঁদের মতে, রাশিয়াকে দেখে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে চিন এবং পাকিস্তান।
রাশিয়া যদি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যাতায়াত শুরু করে, তাতে ভারতের সুবিধাই হবে। কারণ, ওই অঞ্চলে চিনের আধিপত্য দিন দিন বাড়ছে। ভারতও এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপস্থিতির পক্ষে মতামত জানিয়েছিল।
বস্তুত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মাধ্যমে ভারতকে জলপথে চারদিক থেকে ঘিরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে চিনের। তেমনটাই অভিযোগ করেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। শ্রীলঙ্কায় তাদের প্রভাব বিস্তার সে দিকেই ইঙ্গিত করে।
এই পরিস্থিতিতে পূর্ব উপকূলে রাশিয়াকে বন্ধু হিসাবে দেখছে ভারত। রাশিয়ার মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রের উপস্থিতিতে ভারতের বিরুদ্ধে চিন চট করে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও আশানুরূপ। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বের একটা বড় অংশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে গেলেও প্রকাশ্যে কোনও পক্ষ নেয়নি নয়াদিল্লি। রাশিয়ার বিরোধিতাও করা হয়নি।
বরং রাশিয়ার বিরুদ্ধে যখন বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, তখন ভারত রাশিয়ার থেকে সস্তায় পণ্য আমদানি করেছে। রাশিয়ার বাণিজ্য সচল রাখতে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি, ভারতে এসে আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনা করেন। সেখানে ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে রাশিয়ার নাম করা হয়নি।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের তর্জনীর বিপরীতে রাশিয়ার অবস্থান ভারতের জন্য ইতিবাচক, তেমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাশিয়ার উপস্থিতিতে চিন কিছুটা হলেও দমে থাকবে। তাতে ভারতের সুবিধা হবে।