প্রায় প্রতি দিনই কোনও না কোনও কারণে খবরে শিরোনামে উঠে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের খবরের জন্য তো বটেই, আমেরিকা-সহ পশ্চিমি বিশ্বের বিরুদ্ধে মতামত দেওয়ার জন্যও আলোচনায় থেকেছে মস্কো। সেই সঙ্গে মিত্র দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার পদক্ষেপগুলিও চর্চায় আসছে। তবে এ বার আলোচনায় রাশিয়ান উপগ্রহ।
মহাকাশে অনেক দেশই তাদের উপগ্রহ ছেড়ে রেখেছে। তারা পৃথিবীর চারপাশে চক্কর খাচ্ছে। সংগ্রহ করছে নানান তথ্য। সেই সব তথ্য পাঠিয়ে দিচ্ছে পৃথিবীতে। তার ভিত্তিতে চলে নানান পরীক্ষানিরীক্ষা। তেমনই ছিল রাশিয়ান উপগ্রহ রিসার্স-পি১।
সম্প্রতি ওই উপগ্রহ মহাকাশেই ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। চারপাশে ছিটকে গিয়েছে শতাধিক টুকরো। আর এই বিস্ফোরণই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলির কাছে।
আমরা অনেকেই জানি, মহাকাশে একটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন দেশের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা গিয়ে বিভিন্ন গবেষণা করেন। জানা গিয়েছে, রাশিয়ান উপগ্রহটি যেখানে ধ্বংস হয়েছে, সেখান থেকে খুব দূরে নয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ঘটনাটি যখন ঘটেছে তখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ছিলেন কমপক্ষে ন’জন। রাশিয়ার উপগ্রহে বিস্ফোরণের ফলে বিপদঘণ্টা বেজে যায় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে।
ঘুম থেকে উঠে নভশ্চরেরা আপৎকালীন মহাকাশযানে উঠে পড়েন। উদ্দেশ্য ছিল, মহাকাশ স্টেশনের কোনও ক্ষতি হলে প্রাণ নিয়ে যেন তাঁরা পৃথিবীতে ফিরতে পারেন।
প্রায় এক ঘণ্টা ফেরার আপৎকালীন যানে বসে ছিলেন নভশ্চরেরা। তার পর তাঁদের বলা হয় বিপদ কেটে গেছে। তাঁরা ফিরে যেতে পারেন মহাকাশ স্টেশনে।
তবে সত্যিই কি বিপদ কেটেছে? মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, কোনও উপগ্রহ এ ভাবে ভেঙে গেলে তা টুকরো টুকরো হয়ে মহাকাশেই ঘুরে বেড়ায়।
রাশিয়ার যে উপগ্রহটি ভেঙেছে তা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৫৫ কিলোমিটার উপরে ছিল। আর মহাকাশ স্টেশনের অবস্থান ৪০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ, মাত্র কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানেই ঘটেছে বিস্ফোরণের ঘটনা।
যে উপগ্রহটি ভেঙেছে তা ‘মৃত’ ছিল। ২০২২ সাল থেকে সেটি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। এমনিই পৃথিবীর নিম্ন কক্ষে ঘুরে বেড়াচ্ছিল সেটি। আচমকাই তাতে বিস্ফোরণ ঘটে।
জানা গিয়েছে, রিসার্স-পি১ উপগ্রহটির ওজন ছিল ৬০০০ কিলোগ্রাম। বিস্ফোরণের ফলে ওই স্যাটেলাইটটি শতাধিক টুকরোয় ভেঙে যায়। ছিটকে যায় মহাকাশের এ দিক-ও দিক।
অন্যান্য উপগ্রহের মতো টুকরোগুলিও পাক খাবে মহাকাশে। আর সেটাই বিপদের কারণ। ওই টুকরোগুলির সঙ্গে যে কোনও মুহূর্তে অন্য কোনও উপগ্রহের সংঘর্ষ হতে পারে। ধ্বংস হয়ে যেতে পারে উপগ্রহগুলি।
সাধারণত মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলিই তাদের ভেঙে যাওয়া স্যাটেলাইটের টুকরোগুলি ট্র্যাক করে থাকে। তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখে। বিপদ দেখলেই অন্যান্য উপগ্রহকে বার্তা পাঠিয়ে দেয়। গতিপথ পরিবর্তনের পরামর্শও দেওয়া হয়। রিসার্স-পি১ উপগ্রহের ক্ষেত্রেও তেমনই পন্থা নেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হল, বিপদ কি এখানেই শেষ? বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, ভেঙে যাওয়া উপগ্রহের টুকরোগুলি সাধারণত ওজ়োন স্তরে ভিড় করে। সেখানে ক্ষতি করে।
ওজ়োন স্তরে ক্ষতি মানেই অতিবেগনি রশ্মি পৃথিবীতে এসে পৌঁছনোর পথ প্রশস্ত করা। পৃথিবীর পরিবেশেও ব্যাপক ক্ষতি করে। তাপমাত্রার তারতম্য দেখা দেয়।
কী ভাবে রাশিয়ার উপগ্রহ ধ্বংস হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বিজ্ঞানী মহলে একাধিক তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে। অনেকের মতে, ওই উপগ্রহ দু’বছর আগে কাজ করা বন্ধ করে দিলেও তাতে কিছু পরিমাণ জ্বালানি অবশিষ্ট ছিল। সেই জ্বালানি থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
তবে আরও যে তথ্যটি নিয়ে আলোচনা চলছে তা হল, বিস্ফোরণের নেপথ্যে রাশিয়ারই কারসাজি রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, রাশিয়া ইচ্ছা করে এই ‘মৃত’ উপগ্রহ ধ্বংস করেছে।
বিশ্বে বর্তমানে রাশিয়ার যা অবস্থান, তাতে অন্যান্য দেশকে বিশেষত আমেরিকাকে বার্তা দিতেই এমন কাণ্ড ঘটানো হতে পারে। উপগ্রহ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে রাশিয়া ধ্বংস করে থাকতে পারে তাদের উপগ্রহ।
তবে বিষয়টি এত সহজ নয়। সকলের নজর এড়িয়ে এমন কাণ্ড ঘটানো মুখের কথা নয়। তার পরেও সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না বিজ্ঞানীদের একাংশ। যদিও রাশিয়া তাদের উপগ্রহ ধ্বংসের ব্যাপারে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি।