ইউক্রেন যুদ্ধে কিভের এগিয়ে চলা রুখতে এ বার সের্গেই সুরোভিকিনকে দায়িত্ব দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কঠোর মানসিকতার জন্য পরিচিত সের্গেই এর আগে সাফল্যের সঙ্গে চেচনিয়া, তাজিকিস্তানে কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা আছে সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনারও।
উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ ইউক্রেনের কিছু জায়গা রাশিয়ার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ক্রাইমিয়ার সঙ্গে মূল রাশিয়ার ভূখণ্ডের যোগাযোগ রক্ষাকারী কের্চ ব্রিজের আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনাতেও রাশিয়ার বাহিনীর শ্লথতার প্রশ্ন উঠেছে। তার পরই দুই অভিজ্ঞ সেনা কমান্ডারকে বরখাস্ত করেন পুতিন। শনিবারই ইউক্রেনে হামলার ভার সের্গেইয়ের উপর ছাড়া হয়।
১৯৬৬-তে সাইবেরিয়ার নোভোসিবির্স্ক শহরে জন্ম সের্গেইয়ের। গত জুনে তাঁকেই রাশিয়ার সাদার্ন মিলিটারি গ্রুপিংয়ের প্রধান করা হয়। রাশিয়ার সেনার এই অংশই ইউক্রেনে যুদ্ধ চালাচ্ছে।
সের্গেই সুরোভিকিনকে ‘হিরো অফ রাশিয়া’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৭-য় সিরিয়ায় রাশিয়ার বাহিনীর ‘এরোস্পেস ফোর্স’-এর প্রধান হিসাবে অসাধারণ কাজের পুরস্কারস্বরূপ বিশেষ মেডেলও পেয়েছেন তিনি।
আমেরিকার একটি প্রতিরক্ষা নীতির সংক্রান্ত থিঙ্কট্যাঙ্ক জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, সের্গেইয়ের পরিচিতি তাঁর চরিত্রের চরম কঠোর মানসিকতার জন্য। রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে তাঁকে অনেকেই ভালবেসে ‘নিষ্ঠুর’ বলেও ডেকে থাকেন।
সের্গেই সম্পর্কে জনশ্রুতি, তিনি দেশের জন্য যেমন নিজের প্রাণ দিতে এক পায়ে রাজি, তেমনই দেশের খাতিরে অন্য কারও প্রাণ নিতেও দু’বার ভাবেন না। দেশের প্রশ্নে, সের্গেই এতটাই নিষ্ঠুর হতে পারেন যে, তাঁকে ওই নামেই ডেকে ফেলেন সহকর্মীরা।
এ হেন সের্গেই দু’বার জেলেও গিয়েছেন। প্রথম বার ১৯৯১-এর অগস্টে ছ’মাসের জন্য। সে বার সোভিয়েত পতনের সময় তাঁর অধীনে থাকা সেনাকর্মীরা মস্কোয় তিন জন আন্দোলনকারীকে খুন করেন। কিন্তু ছ’মাস জেলে থাকার পরই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিচারও থমকে যায়। চার বছর পর তাঁকে আবার জেলে যেতে হয়। অভিযোগ ছিল তিনি বেআইনি অস্ত্রব্যবসায় যুক্ত।
সিরিয়ায় আসাদের পক্ষ নিয়ে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল রাশিয়া। সেই সময় এই সের্গেইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে এমন বোমাবর্ষণ করেছিল রাশিয়া যে শহরটিই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
সের্গেইয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও রাশিয়ার বাহিনীতে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। এক বার একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন এক সেনাকর্তা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সুরোভিকিন এক জন কিংবদন্তি! তাঁর মতো যোগ্য কমান্ডার রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে দু’জন নেই।’’
সের্গেইকে ইউক্রেনে যুদ্ধ জয়ের ভার দেওয়ার অর্থ, এ বার রাশিয়া ইউক্রেনের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলকে নিশানা করতে চলেছে। কারণ, সের্গেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে নির্দিষ্ট এলাকায় আঘাত হানতে সক্ষম। অন্তত এমনটাই মনে করছেন পশ্চিমী যুদ্ধ বিশারদরা।
রাশিয়ার বাহিনী গত সেপ্টেম্বরেই উত্তর-পূর্ব খারকিভ এলাকার বহু অঞ্চল থেকে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে। কিভ আগে দখল হয়ে যাওয়া একাধিক এলাকা পুনরাধিকার করেছে। যা রাশিয়ার সেনার কাছে বড় ধাক্কা হিসাবে দেখা হচ্ছে।
খেরসনের দক্ষিণ অংশেও ইউক্রেনের চকিত হামলার জবাব ছিল না রাশিয়ার সেনার কাছে। লাইমেন ট্রান্সপোর্ট হাব দখল করলেও তা ধরে রাখতে পারেনি মস্কো। ফলে সামগ্রিক ভাবে মনোবল ভেঙে পড়ছিল পুতিনের বাহিনীর।